সিলেট থেকে : শিববাড়ির আতিয়া মহল এখন কঙ্কাল। বিধ্বস্ত। বাড়িটিতে বিস্ফোরক পুঁতে রেখেছিল জঙ্গিরা। আর ওইসব বিস্ফোরণে প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে পুরো ভবন। আতিয়া মহল এখন যেন এক অভিশপ্ত ভবন। বৃহস্পতিবার ভোররাত থেকে এ বাড়িতে থেকে একের পর এক বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে জঙ্গিরা। সেনা অপারেশনে নিহত হওয়ার পরও তারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে দিয়েছিলো বিস্ফোরক।
গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত বাড়িটি দেখতে পারেননি মিডিয়াকর্মীরা। বিকালের দিকে পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে সেনা সদস্যরা বাড়িতে ঢুকেছেন। বিশাল ৫ তলা ওই বাড়ির নিচতলা পুরোটাই বিধ্বস্ত। জঙ্গিদের আস্তানা থাকা ফ্ল্যাট ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। দেয়াল অনেকটা ভেঙে পড়েছে। দরজা-জানালার কোনো অস্তিত্ব নেই। গোটা বাড়িজুড়ে গুলি ও গ্রেনেডের চিহ্ন। নিচতলার চেয়ে দ্বিতীয়তলা কিছুটা কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে- চারদিকের দরজা-জানালা ভেঙে গেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্রে জানা যায়, রোববার থেকে জঙ্গিরা আতিয়া মহলের সবক’টি ফ্ল্যাটেই বিচরণ করে। এ সময় তারা বিভিন্ন তলায় অবস্থান নিয়ে ফায়ারিং করে এবং গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায়। এছাড়া ৫ম তলা পর্যন্ত তারা বিস্ফোরক ছড়িয়ে রাখে। যখন প্রয়োজন তখন বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। যখন কোনো জঙ্গি গুলির মধ্য পড়েছে তখন সে নিজ থেকে সুইসাইড বেল্ট ব্যবহার করেছে। এ সময় প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। অভিযান শেষ হওয়ার পর এই বাড়িতে সহজেই যেন কাউকে ঢুকতে দেয়া না হয় তা নিশ্চিত করার কথা বলেছেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। এই বাড়িটি পুরোটাই ঝুঁকিপূর্ণ। বিস্ফোরকের কারণে যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে বলে জানান তারা।
এদিকে- দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে সিলেটের আতিয়া মহল। এই মহলের মালিক উস্তার মিয়া। তিনি কাস্টমসের সাবেক কর্মী। এখন তার কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। সম্পত্তির শেষ নেই। উস্তার মিয়ার স্ত্রীর নাম আতিয়া বেগম। এই আতিয়ার নামেই নামকরণ করা হয় অভিশপ্ত এই বাড়ির। প্রায় চার বছর আগে এ মহল নির্মাণ করেন উস্তার মিয়া। সিলেটের গোলাপগঞ্জে বিয়ে করা উস্তার আলীর রয়েছে পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ে। আতিয়া মহলের অদূরে আরেকটি এক তলা বাড়িতে পরিবারসহ থাকেন উস্তার মিয়া। এর পাশে তিনতলা আরেকটি ভবন আছে তার।
জঙ্গিদের বাসা ভাড়া দেয়ার ব্যাপারে উস্তার মিয়া এর আগে জানিয়েছিলেন, জানুয়ারি মাসে মর্জিনা নামের এক নারী তার কাছ থেকে বাসা ভাড়া নেয়। মর্জিনা তার স্বামী হিসেবে কাওছার নামে আরও একজনকে পরিচিত করায়। বাসা ভাড়া দেয়া হলেও তাদের গতিবিধির দিকে নজর রাখেনি কেউ। কিংবা বাসায় কারা আসে কারা যায় সে ব্যাপারেও খোঁজ-খবর নেয়া হয়নি। সিলেটে রয়েছে আরো একটি অভিশপ্ত বাড়ি। সেটি হচ্ছে সূর্য দিঘল বাড়ি।
২০০৬ সালে এই মার্চ মাসেই সূর্য দিঘল বাড়িতে ধরা পড়ে দেশ কাঁপানো জঙ্গিনেতা শায়খ আবদুর রহমান। শায়খ রহমানের অভিযান ছিল সিলেটে সবচেয়ে বড় জঙ্গি অভিযান। সেই অভিযান পরিচালনা করেছিল র্যাব ও পুলিশ। কিন্তু সেই অভিযানকে ছাপিয়ে গেছে আতিয়া মহলের জঙ্গি অভিযান। এই অভিযানের খবর কেবল দেশেই নয়, গোটা বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে। আর মারা যাওয়া জঙ্গিরাও মৃত্যুর আগে তাদের শক্তিমত্তার পরিচয় দিয়ে গেল। এমজমিন
২৯ মার্চ ২০১৭/এমটি নিউজ২৪/এসবি