অপারেশন টোয়াইলাইট শেষে ফেরার পথে বিজয় চিহ্ন দেখাচ্ছেন প্যারা-কমান্ডো ইউনিটের একজন সদস্যউদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্যে দিয়ে শেষ হলো সিলেটের আতিয়া মহলে সেনবাহিনীর প্যারা-কমান্ডো দলের জঙ্গিবিরোধী অভিযান। ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ নামের এই অভিযানে জঙ্গিদের সব ধরনের প্রতিরোধ অতিক্রম করে আতিয়া মহলসহ আশপাশের ভবন থেকে ২৫ মার্চ দুপুর ১টার মধ্যে ৭৮ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে নিয়ে আসেন অভিযানে অংশ নেওয়া কমান্ডোরা। তাদের দীর্ঘ ১১১ ঘণ্টার অভিযানে এক নারীসহ চার জঙ্গি নিহত হয়।
নিহত চার জঙ্গির মধ্যে দু’জনের লাশ সোমবার (২৭ মার্চ) আতিয়া মহল থেকে বের করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি দু’টি লাশের সঙ্গে ছিল সুইসাইডাল ভেস্ট। নিরাপত্তা বিবেচনায় ও পুলিশ প্রশাসনের পরামর্শে ঘটনাস্থলেই এগুলোর বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
এদিকে, মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) বিকালে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা এলাকার শিববাড়ির জঙ্গি আস্তানা আতিয়া মহল পুলিশকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপরই নিজেদের যানবাহন ও সরঞ্জাম সরিয়ে নিতে শুরু করে সেনাবাহিনী। সিলেট শহরতলীর বটেশ্বরস্থ সেনাবাহিনীর ক্যান্টমেন্টে যখন এপিসি নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন এক সেনা সদস্য হাসিমুখে বিজয় চিহ্ন দেখাচ্ছিলেন।
সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ির পাশের জৈনপুর এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী জুমন খাঁন সেনাবাহিনীর এই সফল অভিযানে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে আমরা নতুন জীবন পেয়েছি। আমাদের সেনাবাহিনীর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই শিববাড়ির জঙ্গিদের দমন করা সম্ভব হয়েছে। সেনাবাহিনী না থাকলে আমরা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হতাম।’
আতিয়া মহলে চলা দীর্ঘ অভিযানের পর স্বস্তির কথা জানিয়েছেন পাঠানপাড়ার বাসিন্দা লন্ডন প্রবাসী ইমরুল কায়েস। তিনি বলেন, ‘মনটাতে খুব শান্তি লাগছে। মনে হচ্ছে যুদ্ধ শেষ হয়েছে।’ দুই মাসের ছুটি নিয়ে দেশে আসা ইমরুল আতিয়া মহলের ঘটনায় ছুটি শেষ হওয়ার আগেই ফিরে যাওয়ার কথা ভাবছিলেন। সেই চিন্তা থেকে সরে এসেছেন জানিয়ে ইমরুল বলেন, ‘ফ্রেবুয়ারি মাসের শেষের দিকে দেশে আইছি। কিন্তু যে অবস্থা দেখছি, চিন্তা করেছিলাম জঙ্গি ধরা না পড়লে এপ্রিলের শুরুতেই চলে যাব। কিন্তু যখন খবর পেয়েছি জঙ্গিরা আর কেউ বেঁচে নেই, তখন মনে কী যে শান্তি পেয়েছি তা বলে বোঝাতে পারব না।’ এখন পুরো ছুটি শেষ করে তবেই দেশ ছাড়বেন বলে জানান তিনি।
অপারেশন টোয়াইলাইট শেষে ঘটনাস্থল ত্যাগ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে প্যারা-কমান্ডো ইউনিট (ছবি- ফোকাস বাংলা)মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সিলেটের জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্টে এক সংবাদ সম্মেলনে সামরিক গোয়েন্দা পরিদফতরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান আনুষ্ঠানিকভাবে অপারেশন টোয়াইলাইটের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। এসময় তিনি বলেন, ‘অপারেশন টোয়াইলাইট যেকোনও ক্রাইসিস মোকাবিলায় সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের সমন্বিত প্রচেষ্টার একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে সেনাবাহিনী বিশ্বাস করে।’
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দিবাগত মধ্যরাতে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানাধীন শিববাড়ি এলাকায় ‘আতিয়া মহল’ নামে পাঁচতলা বাড়ির নিচতলায় জঙ্গিরা অবস্থান করছে বলে জানা যায়। শুক্রবার (২৪ মার্চ) সকাল ৮টার দিকে ওই বাড়ির ভেতর থেকে গ্রেনেড ছোঁড়া হয়। পরে ঢাকা থেকে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াতকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ওই দিন সন্ধ্যা থেকে পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণে নেয় সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডো দল। পরদিন তারা ওই ভবনের অন্যান্য বাসিন্দাকে নিরাপদে সরিয়ে আনে।
শনিবার (২৫ মার্চ) সন্ধ্যায় আতিয়া মহলের পাশে দুই দফা কাউন্টার অ্যাটাকে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ছয় জন নিহত হন। আহত হন র্যা বের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধানসহ অন্তত ৫০ জন। রবিবার (২৭ মার্চ) সন্ধ্যায় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, অভিযানে তাদের হাতে অন্তত দুই জঙ্গি নিহত হয়েছেন। সোমবার (২৮ মার্চ) সেনাবাহিনী জানায়, আতিয়া মহলে আর কোনও জঙ্গি জীবিত নেই। মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করে আতিয়া মহল পুলিশকে বুঝিয়ে দেয় সেনাবাহিনী।বাংলা ট্রিবিউন
এমটিনিউজ২৪/টিটি/পিএস