রাহিব ফয়ছল, সিলেট ব্যুরো : বালাগঞ্জ, বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর উপজেলা নিয়ে সিলেট-২ আসন। এক সময় এই আসনের এমপি ছিলেন বিএনপির প্রভাবশালী নেতা এম. ইলিয়াস আলী। ২০০৮ সালের এই আসনে ইলিয়াস আলীকে পরাজিত করে আলোচনায় আসেন তৎকালীন যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী। তাকে নির্বাচিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন লন্ডন আওয়ামীলীগ নেতা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর আনোয়ার চৌধুরীর সাথে শফিক চৌধুরীর মতবিরোধ দেখা দিলে আনোয়ার নিজেই এই আসন থেকে নির্বাচন করা প্রস্তুতি নেন। কিন্তু বিএনপি পরবর্তী নির্বাচনে না যাওয়ায় জাতীয় পার্টিকে নিয়ে নির্বাচন করে আওয়ামীলীগ।বিশেষ রাজনৈতিক কারনে এই আসনটি জাতীয় পার্টিকে দিয়ে দেয় আওয়ামীলীগ। ফলে দুই চৌধুরীকে মনোনয়ন দৌড়ে পেছেনে ফেলে এই আসন থেকে সংসদ নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টি নেতা ইয়াহইয়া চৌধুরী।
লোকমুখে প্রচলিত আছে এই আসনটি এখন পরিচালিত হয় তিন চৌধুরীর নির্দেশে। আর এই তিন চৌধুরীই হচ্ছেন ইয়াহইয়া চৌধুরী, শফিক চৌধুরী ও আনোয়ার চৌধুরী।
ইয়াহইয়া চৌধুরী স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জাপার কেন্দ্রীয় যুগ্ন-মহাসচিব। শফিক চৌধুরী সাবেক সদস্য সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক। আর আনোয়ার চৌধুরী যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক।
এই আসনটিতে সব চেয়ে অস্বস্থিতে আছেন শফিক চৌধুরী। একদিকে দলীয় কোন্দলের কারনে নিজের দলের মধ্যেই তিনি সুবিধাজনক অবস্থান করতে পারছেন না। অন্যদিকে, সরকার ও প্রশাসন স্থানীয় সংসদ সদস্য হিসেবে ইয়াহইয়া চৌধুরীকে বেশী প্রাধান্য দিচ্ছে। যা নিয়ে অনেকটা হতাশায় রয়েছেন তিনি।
সর্বশেষ বুধবার তিনি বিশ্বনাথ বাজারে শফিক চৌধুরী অনুসারীরা একটি সমাবেশের আয়োজন করে। একই সময়ে একই স্থানে পাল্টা সমাবেশের ডাক দেন আনোয়ার চৌধুরীর অনুরাসারীরা। এতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ১৪৪ ধারা জারি করে স্থানীয় প্রশাসন।
জানা যায়, তথ্য প্রযুক্তি আইনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আখতার গং ও সাবেক সদস্য ফখরুল ইসলাম মতছিন গংদের উপর পাল্টাপাল্টি মামলা দায়েরের প্রতিবাদে ও তা প্রত্যাহারের দাবিতে বুধবার ২টায় উভয় পক্ষই বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা আয়োজন করেন। উভয় মামলায়ই আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে অভিযুক্ত করা হয়।
বাবল আখতার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী ও ফখরুল আহমদ মতছিন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী অনুসারী হওয়ায় পাল্টিপাল্টি মামলা দায়েরের পর থেকেই উপজেলা জুড়ে গত কয়েক দিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করে আসছে।
মঙ্গলবার রাতে মোটর সাইকেল শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও সংগঠিত হয়। এর প্রেক্ষিতেই বিশ্বনাথ বাজার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন।
দুপুরে বন্যাদূর্গত এলাকা পরিদর্শনে সিলেটে আসেন ত্রাণ ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া (বীর বিক্রম)। তার সাথে সিলেন সিলেট-২ আসনের এমপি ই্য়াহইয়া চৌধুরী। মন্ত্রীকে বিমানবন্দরে রিসিভ করতে যান জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী। কিন্তু মন্ত্রী তাকে রেখে ইয়াহইয়াকে নিয়ে খোশগল্প করতে দেখা যায়। এনিয়েও তিনি রয়েছেন হতাশায়।
একটি সূত্র জানায়, একারনে তিনি মন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর পর আর এয়ারপোর্ট থেকেই বের হননি। পরে মন্ত্রী চলে যাওয়ার বেশ পরে তিনি এয়ারপোর্ট ত্যাগ করেন।
সার্বিক বিষয়ে কথা বলতে শফিকুর রহমান চৌধুরীর মোবাইলে কল দিলে তিনি রিসিভ করেন নি।
২০ এপ্রিল ২০১৭/এমটি নিউজ২৪/এইচএস/কেএস