ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে : বিএনপি অংশ নিলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ আসন থেকে প্রার্থী হতে পারেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এমন আভাস সিলেট বিএনপির সিনিয়র নেতাদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে। তবে তারা এখনই নিশ্চিত করে কিছুই জানাতে পারছেন না। তারা বলেছেন, খালেদা জিয়া সিলেট থেকে প্রার্থী হলে এর চেয়ে খুশির খবর আর কিছুই হতে পারে না।
সিলেটবাসীও এতে গৌরবের অংশীদার হবেন। একই সঙ্গে সিলেট বিএনপির নেতারাও সকল দ্বন্দ্ব ভুলে এক কাতারে এসে মিলিত হবেন। অভিভাবকহীন সিলেট বিএনপি দলের চেয়ারপার্সনের নেতৃত্বেই পরিচালিত হবে। সিলেট-১ আসন মর্যাদাপূর্ণ আসন। ওলিকুল শিরোমণি হযরত শাহজালাল (রহ.)সহ ৩৬০ আউলিয়ার বেশিরভাগ মাজার সিলেট শহরে। আর ভোটের রাজনীতিতে ‘মিথ’ আছে- ‘সিলেট-১ আসন যার, ক্ষমতা তার’।
স্বাধীনতার পর থেকে এই আসনে যে দলের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছে তারাই সরকার গঠন করেছে। এ কারণে আগামী নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে বিশেষ নজর রয়েছে রাজনৈতিক দলের। ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেওয়ান ফরিদ গাজী এ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। ২য় সংসদ নির্বাচনে খন্দকার আবদুল মালিক, ৩য় ও ৪র্থ সংসদ নির্বাচনে হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী, ৫ম ও ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খন্দকার আবদুল মালিক, ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী এবং ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এম সাইফুর রহমান এমপি নির্বাচিত হন।
সর্বশেষ নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এর মধ্যে খন্দকার আবদুল মালিক ছাড়া সবাই এই আসন থেকে মন্ত্রী হয়েছিলেন। নির্বাচিত এসব সংসদ সদস্যের দলই সে সময় সরকার গঠন করে। বিএনপির সিলেটের বিভাগের শীর্ষ এক নেতা জানিয়েছেন- তাদের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে সিলেটে প্রার্থী হওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। দলের চেয়ারপার্সনের কাছ থেকে ‘হ্যাঁ অথবা না’ কোনো উত্তর মিলেনি। তবে বিষয়টি নিয়ে খোদ দলীয় প্রধান ভাবতে শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে তিনি এ বিষয়টি নিয়ে অধীনদের সঙ্গে আলোচনাও করছেন। গতকাল রাতে সিলেট বিএনপির এক নেতা দলের চেয়ারপার্সনের সঙ্গে দেখা করেছেন।
বিএনপির ওই নেতা জানান, দলীয় প্রধানের কাছ থেকে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত এলেই তারা সিলেটে এসে প্রস্তুতি শুরু করবেন। তবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা নির্ভর করবে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কী না সে সিদ্ধান্তের উপর। সিলেট-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী সংকটে ভুগছে। সর্বশেষ শমসের মুবীন চৌধুরী দল থেকে পদত্যাগ করার পর এই আসনে বিএনপির প্রার্থী নিয়ে নেতারা দোলাচলে পড়েছেন। তবে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছিলেন বিএনপির সিলেট বিভাগের সাবেক শীর্ষ নেতা খন্দকার আবদুল মালিকের ছেলে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল মোক্তাদির। তিনি ইতিমধ্যে তার অবস্থান বেশ শক্তিশালীও করেছেন। মাঠ পর্যায়ে তিনি বর্তমান সরকারের শাসনের শুরু থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। এমনকি গেলো সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি বিএনপি দলীয় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর জয়েও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন।
তবে গতকাল খন্দকার আবদুল মোক্তাদির জানিয়েছেন, দলের সর্বোচ্চ নেতা হচ্ছেন চেয়ারপারসন। সিলেটে তিনি প্রার্থী হওয়া গৌরবের বিষয়। তবে নির্বাচনে যাবে কী-না সে বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার পর সিলেট সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবেন চেয়ারপারসন নিজেই। বিএনপির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সিলেটের প্রবীণ নেতা এমএ হক জানিয়েছেন, বেগম খালেদা জিয়া দলের সর্বোচ্চ নেত্রী। তিনি চাইলে যে কোনো আসন থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। তিনি সিলেট থেকে প্রার্থী হলে শুধু বিএনপির নেতাকর্মীরাই নয়, সিলেটের মানুষও খুশি হবে। আর সিলেটে আমরা সবাই তার জন্য একসঙ্গে কাজ করবো।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাজ্জাক বলেন, দলের সর্বোচ্চ নেত্রী সিলেট থেকে প্রার্থী হলে আমরা সবাই একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়বো। সিলেটবাসী তাকে হতাশ করবেন না বলে জানান তিনি। সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীম জানিয়েছেন- দলের চেয়ারপার্সন সিলেট থেকে প্রার্থী হবেন সে বিষয়টি তাদের অফিসিয়ালি জানানো হয়নি। তবে তিনি প্রার্থী হওয়ার খবরে সিলেটের মানুষের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। আর তিনি সিলেটে প্রার্থী হলে অভিভাবক হিসেবে আমরা সরাসরি দলীয় প্রধানকে পাবো। এর চেয়ে খুশীর খবর আর কিছুই হতে পারে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইনও জানান- ‘দলীয়ভাবে খবরটি নিশ্চিত করে জানানো হয়নি। যদি তিনি সিলেট থেকে প্রার্থী হন তবে সেটি আমাদের জন্য ‘সোনায় সোহাগা’। অভিভাবক হিসেবে আমরা সরাসরি দলীয় সভানেত্রীকে পাবো।’ এতে করে সিলেটের উন্নয়নও আরো বেশি ত্বরান্বিত হবে। এমজমিন
১৮ মে, ২০১৭/এমটিনিউজ২৪ডটকম/এসবি