ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে : ‘স্যারের বাসায় গিয়েছি। দোয়া নিয়েছি। স্যার বলেছেন- কাজ করো। তোমার বিষয়টি আমি দেখবো।’ গতকাল সিলেটের জাতীয় পার্টি নেত্রী শিউলী আক্তার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রেসিডেন্ট আলহাজ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সমর্থন তার পক্ষে রয়েছে বলে জানান।
শিউলী সিলেটের জাতীয় পার্টির পরিচিত নেত্রী। রাজনৈতিক অঙ্গনের বাইরেও রয়েছে তার বিশাল পরিচিতি। নাটক, শোবিজ সবখানেই শিউলী। নির্বাচন এলেই শিউলী উঠে আসেন আলোচনায়। এবারও তিনি আগে-ভাগেই আলোচনায় এসেছেন।
সিলেট-২ আসনের বিশ্বনাথে শিউলী আক্তারের বাড়ি। জানালেন, ‘গত সংসদ নির্বাচনেও তিনি ওই আসন থেকে জাতীয় পার্টি টিকিট চেয়েছিলেন। তাকে গ্রীন সিগন্যাল দেয়া হয়েছিল। পরে এরশাদ হসপিটালাইজড হওয়ার সময় বলেছিলেন- মনোনয়ন প্রত্যাহার করে ফেলতে। এ কারণে প্রত্যাহার করে ফেলি।’
এবার নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হচ্ছেন বলে জানান। কিন্তু সম্প্রতি শিউলী ক্ষুব্ধ হয়েছেন। এই ক্ষোভ তার নিজ দলের একাংশের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। শিউলী জানান, গেল কয়েক দিন আগে সিলেটের বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরে তার পক্ষে দলীয় নেতাকর্মীরা প্রায় ৫০০ বিলবোর্ড টানান। বিশ্বনাথে শিউলীর পক্ষে প্রায় ২৫০ বিলবোর্ড টানানো হয়েছিল।
তিনি জানান, ওই বিলবোর্ডে এরশাদের ছবি ছিল। আগামী নির্বাচনে শিউলী প্রার্থী হচ্ছেন এমন বার্তা দিয়ে এই বিলবোর্ডগুলো টানানো হয়। কিন্তু সোমবার রাতে কে বা কারা ওই বিলবোর্ডগুলো ভেঙে ফেলে। একটি বিলবোর্ডও এখন তার নেই। বিশ্বনাথে টানানো সব বিলবোর্ড ভেঙে ফেলা হয়েছে। এ ঘটনায় বিশ্বনাথ জাতীয় পার্টিতে ক্ষোভ বিরাজ করছে বলে জানান শিউলী। সিলেট-২ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ইয়াহহিয়া চৌধুরী এহিয়া।
বিগত সংসদ নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি সময় আওয়ামী লীগ শক্তিশালী প্রার্থী ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীকে বাদ দিয়ে শরিক দল জাতীয় পার্টিকে এ আসনটি ছাড় দিয়েছিল। পরবর্তীতে সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীর সঙ্গে নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমে জয়ী হন বর্তমান এমপি এহিয়া চৌধুরী। এ আসনটি এখন জাতীয় পার্টির দখলে।
নির্বাচনকে সামনে রেখে ওই আসনে সুর উঠেছে আবারও এই আসনটি পাবে জাতীয় পার্টি। এ কারণে নির্বাচনের আগে থেকেই শিউলী এলাকায় সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। বিলবোর্ড কারা ভেঙে ফেলেছে প্রশ্নে শিউলী আক্তার কারও নাম বলতে রাজি নয়। শুধু বলেছেন- যারা এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে তারা তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। সোমবার রাতের আধারে তারাই বিলবোর্ডগুলো ভেঙে ফেলেছে।
তবে- বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরে টানানো ২৫০টি বিলবোর্ড এখনো অক্ষত রয়েছে। ওই বিলবোর্ডে যারা হাত দিবে তাদের সঙ্গে তার পক্ষের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন শিউলী আক্তার। এদিকে বিশ্বনাথে ২৫০টি বিলবোর্ড ভেঙে ফেলার ঘটনায় বিশ্বনাথ থানায় জিডি দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে জানিয়ে শিউলী বলেন, পুলিশকেই তার বিলবোর্ডের উপর হামলাকারীদের খুঁজে বের করতে হবে।
শিউলী আক্তার মহিলা পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক। পাশাপাশি সিলেট মহানগর মহিলা পার্টির সভানেত্রী। পার্টির চেয়ারম্যান আলহাজ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো। পিতার সঙ্গে মেয়ের যে সম্পর্ক সেই সম্পর্ক এরশাদের সঙ্গে তার বলে জানান শিউলী আক্তার।
এ কারণে সম্প্রতি এরশাদ যখন অসুস্থ হয়েছিলেন তখন সিলেটে একমাত্র শিউলীই তার রোগমুক্তি কামনা করে হযরত শাহজালাল (রহ.) দরগাহে মিলাদ ও শিরনী বিতরণ করিয়েছেন। এরশাদ সিলেটে এলে শিউলী রাজনীতিতে বেশি সক্রিয় থাকেন। অন্যদিকে- এ আসনের এমপি এহিয়া চৌধুরীকেও নিজের ছেলের মতো মনে করেন দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
এহিয়ার পিতার মৃত্যুর পর তিনি ছুটে এসেছিলেন সিলেটে। আর গেল বন্যায় যখন সিলেট-২ আসন বন্যায় আক্রান্ত হয় তখনও দলের প্রধান এহিয়ার পক্ষে এসে সিলেটের শেরপুরে ত্রাণ বিতরণ করে গেছেন। শিউলী জানান- ‘আমি এরশাদের মেয়ের মতো। স্যার আমাকে কাজ করার কথা বলছেন। একজন নাগরিক হিসেবে আমি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু আমার বিলবোর্ড ভেঙে ফেলার অধিকার কারও নেই।’ এমজমিন
এমটিনিউজ/এসবি