মঙ্গলবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০১৮, ০১:২৩:৪৯

‘হোটেলের ২০৬ নম্বর কক্ষে আছি, আমরা আত্মহত্যা করছি’

‘হোটেলের ২০৬ নম্বর কক্ষে আছি, আমরা আত্মহত্যা করছি’

সিলেট থেকে : ‘মেহেরপুর হোটেলের ২০৬ নম্বর কক্ষে আছি। আমরা আত্মহত্যা করছি।’ মোবাইল ফোনে এ মেসেজ পেয়েই সিলেটের সুবহানীঘাটের মেহেরপুর হোটেলে ছুটে যান দুলাভাই। গিয়েই তিনি হোটেল কর্তৃপক্ষের কাছে রুম নম্বর ও রুমি পালের নাম বললেও হোটেল কর্তৃপক্ষ তার কথা প্রথমে বিশ্বাস করেনি।

কারণ- হোটেলের ওই রুমে যে দম্পতি রয়েছে তারা মুসলিম পরিচয়ে উঠেছে। অথচ দুলাভাই বলছেন, তারা হিন্দু। হোটেল কর্তৃপক্ষ দুলাভাইয়ের কথা বিশ্বাস করতে পারেনি। অনেক অনুনয়ের পর তারা রাজি হয়ে ২০৬ নম্বর কক্ষে গিয়ে ডাকাডাকি করে ভেতর থেকে কোনো সাড়া পায়নি। এরপর হোটেল কর্তৃপক্ষ পুলিশ ডাকেন। পুলিশ এসে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে দেখে দুই জনের লাশ।

এরমধ্যে একটি লাশ জৈন্তাপুরের রুমি রানী পালের। অন্যটি হচ্ছে জগন্নাথপুরের মিন্টু দেবের। রুমি পালের লাশটি হোটেলের খাটের ওপর চিৎ করে রাখা। আর মিন্টুর লাশ সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলানো। রুমি রানী পাল। বয়স প্রায় ২৪ বছর। বাড়ি সিলেটের জৈন্তাপুরের উজানীনগর গ্রামে। পিতার নাম মিলন পাল। রুমি পাল শিক্ষিত তরুণী।

পড়ালেখা শেষ হওয়ার পর বাড়িতে থেকেই ব্র্যাক পরিচালিত একটি স্কুলে সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে চাকরি করতো। মিন্টু দেবও শিক্ষিত তরুণ। বয়স ২৫ কিংবা ২৬। বাড়ি জগন্নাথপুরের জগন্নাথবাড়ি গ্রামে। তার পিতার নাম মতিলাল দেব। দুই জনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। একে অপরকে ভালোবাসতো। বিষয়টি জানতেন রুমির পরিবারও।

এর আগে একাধিকবার রুমি তার পরিবারের সদস্যদের কাছে মিন্টুর কথা জানিয়েছে এবং বলেছে সে বিয়ে করলে মিন্টুকেই করবে। কিন্তু রুমির পছন্দের মিন্টুকে মেনে নিচ্ছিলেন না পরিবার। রুমির অমতে তার পরিবারের সদস্যরা এই ফাল্গুনে বিয়ের ব্যবস্থা করেন। ইতিমধ্যে তারা বর দেখেও ফেলেছেন।

আগামী ফাল্গুনেই বিয়ের পিঁড়িতে বসার কথা রুমির। কিন্তু রুমি নিজ থেকে কখনোই এ বিয়ে মানছিল না। এ নিয়ে পরিবারের সঙ্গে তার টানাপড়েন চলছিল।  রোববার দুপুরের একটু পর নগরীর সুবহানীঘাটের হোটেল মেহেরপুরে আসেন রুমি ও মিন্টু। তারা নিজেদের মুসলিম পরিচয় দিয়ে ওই হোটেলে উঠেন। এরপর থেকে হোটেলের ওই রুমে দরজা ভেতর থেকে লাগানো ছিল।

সন্ধ্যার ঘণ্টা খানেক পরে হঠাৎ করে দুলাভাই বাবলুর মোবাইল ফোনে রুমির ফোন থেকে মেসেজ যায়। ওই মেসেজে লেখা ছিল ‘হোটেলে মেহেরপুরের ২০৬ নম্বর কক্ষে আমরা আছি। আমরা আত্মহত্যা করছি...।’ মেসেজটি পেয়ে অস্থির হয়ে উঠেন রুমির দুলাভাই। তিনি ছুটে আসেন হোটেল মেহেরপুরে।

এসে প্রথমে রুমির পরিচয় দিলেও তারা খোঁজ দিতে পারেনি। রুম নম্বর বললেও হোটেল কর্তৃপক্ষ বলে- ওই রুমে যারা আছে তারা মুসলমান। এ সময় রুমির দুলাভাই মেসেজটিও দেখান। মেসেজ দেখে হোটেল কর্তৃপক্ষ কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তারা ২০৬ নম্বর কক্ষের দরজায় নক করেন। কিন্তু ভেতর থেকে কোনো সাড়া মিলেনি।

আর বাইরে থেকেও ভেতরের অবস্থা অনুমান করার মতো কোনো ব্যবস্থা ছিল না। কয়েকবার ডাকাডাকি করার পর হোটেল কর্তৃপক্ষ সিলেটের পুলিশকে বিষয়টি জানান। খবর পেয়ে কোতোয়ালি থানা পুলিশ গিয়ে প্রথমে দরজায় ডাকাডাকি করলেও কোনো সাড়া পায়নি। শেষে দরজা ভাঙা হলে ভেতরে দুটি লাশ দেখতে পাওয়া যায়।

এর মধ্যে রুমির লাশ ছিল বিছানায় চিৎ অবস্থায়। আর মিন্টুর লাশ ছিল ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত। সিলেটের কোতোয়ালি থানার ওসি গৌসুল হোসেন প্রথমে ধারণা করেন- হয়তো মেয়েটিকে হত্যার পর ছেলেটি আত্মহত্যা করে। তবে রুমির মুখে লাল বস্তু দেখা যায়। কেউ অনুমান করেন সেটি পান সুপারী। আবার কেউ অনুমান করেন বিষ।

রাত সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ রুমি ও মিন্টুর লাশ দুটি উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। রাতে পুলিশ হোটেল কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এ ছাড়া পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও পুলিশ আলোচনা করে।

কোতোয়ালি পুলিশও জানায়, রুমির সঙ্গে মিন্টুর দীর্ঘদিনের প্রেম ছিল। পরিবার তাদের প্রেম মেনে না নেয়ায় দু’জনই আত্মহত্যা করেছে। গতকাল দুপুরে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রুমি ও মিন্টুর লাশের ময়নাতদন্ত শেষ হয়। এরপর বিকালের দিকে লাশ দুটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

সিলেটের কোতোয়ালি থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই ফয়েজ জানিয়েছেন, রুমি বিষ খেয়ে ও মিন্টু ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে। পুলিশ প্রাথমিকভাবে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর গতকাল থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছে। পরবর্তীতে তদন্তে অন্য কিছু এলে পুলিশ সেভাবেই আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানান তিনি। -এমজমিন
এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে