বৃহস্পতিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮, ১২:২৮:০৬

সিলেটে ষাটোর্ধ্ব লন্ডন প্রবাসীর বিয়ে-ডিভোর্স নিয়ে তোলপাড়

সিলেটে ষাটোর্ধ্ব লন্ডন প্রবাসীর বিয়ে-ডিভোর্স নিয়ে তোলপাড়

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে : সিলেটের বিশ্বনাথে লন্ডন প্রবাসী আব্দুল মতিনের বিয়ে ও ডিভোর্স নিয়ে চলছে তোলপাড়। এ নিয়ে মুখোমুখি ওই প্রবাসী ও বধূ রাজনা পরিবার। প্রবাসীর দাবি, ব্ল্যাকমেইল করে তার সম্পদ লুটের চেষ্টা করছে রাজনার পরিবার। বিষয়টি বুঝতে পেরে তিনি ডিভোর্স দিয়েছেন।

অন্যদিকে, রাজনার পরিবারের দাবি, পারিবারিক কারণে রাজনার ওপর অকথ্য নির্যাতন চালানো হয়েছে। এমনকি জোরপূর্বক গর্ভের সন্তান নষ্ট করার চেষ্টা চালানোর দাবি তুলেছে রাজনার পরিবারের সদস্যরা। এসব বিষয় নিয়ে মামলার কারণে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।

প্রবাসী মতিনও তার ওপর অন্যায়ভাবে করা মামলার প্রতিকার চেয়ে প্রবাসী কল্যাণ সেলে আবেদন করেছেন। বিশ্বনাথ উপজেলার দশঘর নোয়াগাঁও গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী আব্দুল মতিন। বয়স ষাটের ওপর। তিনি দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন। লন্ডন ও বিশ্বনাথে তার বিশাল সহায়-সম্পত্তি রয়েছে। আর রাজনা বেগমের বাড়িও একই উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের চরচন্ডি গ্রামে। তার পিতার নাম জহির উল্লাহ। রাজনার বয়স ২৭ বছর।

আব্দুল মতিন প্রবাসী কল্যাণ সেলে দেয়া অভিযোগে উল্লেখ করেছেন- তার প্রথম স্ত্রী মৃত্যুবরণ করায় গত বছরের ৩রা অক্টোবর রাজনা বেগমকে বিয়ে করেন। বিয়ের পরে তিনি তার স্ত্রীর নানা কূটকৌশলের বিষয়টি বুঝতে পারেন। এমনকি তার সম্পদ আত্মসাৎ করতে বিয়ের নাটক সাজিয়ে তাকে বেকায়দায় ফেলা হয়েছে বলে তিনি বুঝতে পারেন। স্ত্রীকে বশে আনতে না পারায় ৬ই ডিসেম্বর তিনি রাজনার কাছে ডাকযোগে তালাক নোটিশ পাঠান। আর ওই নোটিশের পর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা করা হয়েছে।

অভিযোগে তিনি আরও উল্লেখ করেন, গত ১৪ই ডিসেম্বর সিলেট সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট ৩য় আদালতে আব্দুল মতিনের বিরুদ্ধে যৌতুক নিরোধ আইনে মামলা (সিআর-৩৬২/১৭) করেন স্ত্রী রাজনা। মামলা করার ৫ দিন পর আদালত থেকে রাজনা বেগম নিজেই ওই মামলা তুলে নেন। এরপর গত ১৩ই জানুয়ারি গর্ভের সন্তান নষ্ট করার চেষ্টা ও মারধরের অভিযোগে আব্দুল মতিনের বিরুদ্ধে বিশ্বনাথ থানায় মামলা (মামলা নং-৭) করেন রাজনা বেগম।

১লা ফেব্রুয়ারি মেয়েকে মারপিট করে আহত করার অভিযোগে রাজনা বেগমের পিতা বাদী হয়ে বিশ্বনাথ থানায় আরেকটি মামলা করেন। মামলায় আব্দুল মতিনসহ চারজনকে আসামি করা হয়েছে। স্মারকলিপিতে হয়রানির উদ্দেশ্যে একের পর এক মামলা করা হচ্ছে বলে দাবি করেন প্রবাসী আব্দুল মতিন। পারিবারিক ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, প্রবাসী আব্দুল মতিনের সঙ্গে বিয়ের পর রাজনা স্বামীর সঙ্গেই বসবাস শুরু করেন।

এতে করে রাজনা এক সময় অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। আর অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর থেকে আব্দুল মতিনের সঙ্গে তার বিরোধ হয়। মতিনের দাবি, তিনি সন্তান নেবেন না। কিন্তু রাজনা বেগম সন্তান চান। এ নিয়ে স্বামীর-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এসব ঘটনায় মতিন রাজনাকে মারধরও করেন। তার সঙ্গে আরও কয়েকজনও লোকের হাতেও রাজনা বেগম হেনস্তা হন। মারধর সহ্য করতে না পেরে রাজনা বেগম পিতার কাছে চলে যান। পরে তাকে ডিভোর্স পত্র পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।

সাংবাদিকদের কাছে রাজনা বেগমের পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন- অন্তঃসত্ত্বা রাজনার ওপর যেভাবে অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়েছে তা কোনো সভ্য মানুষ মেনে নিতে পারবে না। তারা গর্ভের সন্তান নষ্ট করার পাশাপাশি রাজনাকে হত্যা করারও চেষ্টা চালিয়েছে। বিষয়টি এতই মর্মান্তিক যে এর বিচার চায় সবাই। এ কারণে বাধ্য হয়ে মামলা করা হয়েছে।

এসব ঘটনার সঙ্গে আব্দুল মতিনের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন পরামর্শদাতা রয়েছেন। তারা মানুষের বিবেকের চেয়ে সম্পদকে বেশি প্রাধান্য দেয় বলে দাবি করেন রাজনার পরিবারের সদস্যরা। এদিকে আব্দুল মতিনের বিরুদ্ধে করা মামলা বিশ্বনাথ থানা পুলিশ তদন্ত করছে। থানার এসআই নবী হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মামলা এখনো তদন্তাধীন। তদন্তে প্রবাসী দোষী হলেই অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি। -এমজমিন
এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে