সিলেট থেকে : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার রায় ঘোষণার পরপরই বৃহস্পতিবার রণক্ষেত্রে পরিণত হয় সিলেট। নগরীর কোর্ট পয়েন্ট, সিটি পয়েন্ট, জেলা পরিষদের সামনে, সুরমা মার্কেট ও জিন্দাবাজারে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে।
রিপক্ষীয় এ সংঘর্ষে অংশ নেয় বিএনপি, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের কর্মীরা। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের মধ্যে গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র হাতেও মহড়া দিয়েছে কর্মীরা। সংঘর্ষের সময় উভয়পক্ষে গুলি বিনিময়ে অন্তত দুইজন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন।
এ সময় দুই যুবককে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে অন্য পক্ষকে গুলি করতে দেখা যায়। তবে মাথায় হেলমেট পরা থাকায় তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। একটি সূত্র জানিয়েছে, অস্ত্রধারী এক যুবক ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এ সময় তার হাতে একটি একনলা বন্দুক দেখা গেছে। এ অস্ত্রটি তার নিজের নামে লাইসেন্স করা। তবে অপর যুবকের পরিচয় জানাতে পারনি ওই সূত্র।
ছাত্রদল কর্মীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ চলাকালে তারা এ অস্ত্র নিয়ে মাঠে নামেন। বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটা থেকে তিনটা পর্যন্ত এ সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষে দুইজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ একজন হচ্ছেন জেলা ছাত্রদল নেতা সৈয়দ মোস্তফা কামরুল। অন্যজনের নাম জানা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রায়কে কেন্দ্র করে সকাল থেকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ সিলেট জেলা পরিষদে অবস্থান নেয়। অন্যদিকে আদালতপাড়ায় অবস্থান নেন বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
রায় ঘোষণার পরপরই বেলা আড়াইটার দিকে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। একপক্ষ অন্যপক্ষের বিরুদ্ধে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় গুলি বিনিময়ও হয় পাল্টাপাল্টি। দুইজন গুলিবিদ্ধ হন। এর মধ্যে একজনের পরিচয় মিলেছে। তিনি জেলা ছাত্রদলের কর্মী মোস্তফা কামরুল। তার মাথায় গুলি লেগেছে।
তিনি একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অন্যরা সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেলসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আহত হয়েছেন পুলিশের এক সদস্য। পুলিশ শতাধিক রাউন্ড টিয়ার শেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বিএনপির জামান গ্রুপের কর্মীরা জানিয়েছেন, সংঘর্ষকালে তাদের গ্রুপের ৩ কর্মী গুলিবিদ্ধ ছাড়াও অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। রায় ঘোষণার আগেই সকাল থেকে সিলেট নগরীতে ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা নগরীর বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেন। আর আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা অবস্থান নেন জেলা পরিষদ চত্বরে।
জেলা পরিষদের ঠিক সামনেই হচ্ছে আদালত এলাকা। সেখানে অবস্থান নেন বিএনপির কর্মীরা। তাদের সঙ্গে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা অবস্থান নেন। রায় ঘোষণার একটু আগে সিলেটের রংমহল টাওয়ার ও আশপাশ এলাকায় অবস্থান নেন বিএনপির সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট জামান ও তার অনুসারীরা।
নগরীর কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় অবস্থান নেয় জেলা ছাত্রদলের প্রথম যুগ্ম সম্পাদক মকসুদ আহমেদ ও তার অনুসারী। রায় ঘোষণার আগেই অ্যাডভোকেট জামানের অনুসারীরা নগরীর বন্দরবাজার এলাকায় শোডাউন দিয়েছে। পুলিশের কয়েকটি ব্যারিকেড ভেঙে তারা এই মিছিলে অংশ নেয়। জিন্দাবাজার এলাকায় অবস্থান নেয় ছাত্রদলের মকসুদ গ্রুপের কর্মীরা। সুরমা মার্কেট এলাকায় অবস্থান নেয় ছাত্রলীগের পীযূষ গ্রুপের কর্মীরা।
রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই প্রথমে আদালত ফটক এলাকায় মিছিল শুরু করেন বিএনপির কর্মীরা। এ সময় জেলা পরিষদে থাকা আওয়ামী লীগের কর্মীরাও মিছিল শুরু করে। দুটি মিছিল মুখোমুখি হলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় সংঘর্ষ। মাঝখানে থাকা পুলিশ লাঠিচার্জ চালিয়ে প্রথমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়। কিন্তু বিএনপির কর্মীরা আদালত এলাকা থেকে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে।
ইটপাটকেলের আঘাতে এ সময় দুইজন পুলিশ সহ ছাত্রলীগের ৩ কর্মী আহত হন। তারা মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হন। প্রায় আধাঘণ্টা ওই এলাকায় বিএনপি, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষ সুরমা মার্কেট, সিটি পয়েন্ট এলাকা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এমন সময় রংমহল পয়েন্ট এলাকা থেকে অ্যাডভোকেট জামান গ্রুপের কর্মীরা এগিয়ে এলে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়।
এমটিনিউজ/এসএস