সিলেট: মা ও ভাইয়ের খুনের দৃশ্য এখনও তাড়া করে ফিরছেন ছোট্ট শিশু রাইসাকে। ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ পর এখনও তাকে অস্বাভাবিক আচরণ করতে দেখা যায়।
গত শনিবার সিলেট নগরীর খাঁরপাড়ায় মিতালী ১৫/জি নম্বর বাসায় মা রোকেয়া বেগম ও ভাই রবিউল ইসলাম রোকন খুন হওয়ার পর থেকেই রাইসার জায়গা হয় মহানগর পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে।
রাইসার সবশেষ অবস্থা জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানার ওসি (তদন্ত) রোকেয়া খানম বলেন, রাইসার মনে এখনও ভয় কাজ করছে। সে তার রুমের চাবি বারবার লুকিয়ে রাখছে। রাইসার ধারণা, কেউ এসে তাকে মেরে ফেলবে।
তিনি বলেন, পুরুষ দেখলেই ভয়ে আঁতকে উঠছে সে, লুকিয়ে রাখছে নিজেকে। চোখের সামনে মা-ভাইয়ের নৃশংস খুনের দৃশ্য হয়তো ভুলতে পারছে না। ৫ বছরের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস রাইসাকে নানা ধরনের খেলনা দিয়ে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করা হলেও মাঝেমধ্যেই সে তার মা-ভাইকেখোঁজে।
একমাত্র আশ্রয়স্থল মা ও ভাইকে চোখের সামনে নৃশংসভাবে খুন হতে দেখলেও ঘাতকরা নিষ্পাপ এই শিশুকন্যাকেও শ্বাসরোধে করে খুন করতে চেয়েছিল। রাইসা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পর মৃত ভেবে ফেলে যায় ঘাতকের দল।
ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের দায়িত্বরত নারী পুলিশ সদস্যরা জানান, রাইসা এখনও অসুস্থ। তার শরীরে হাত দেয়া যাচ্ছে না, বিভিন্ন স্থানে আঘাত চিহ্ন। খেলাধুলার ফাঁকে যখন মা ও ভাইকে খোঁজ করে তখন খুব কষ্ট হয়। কী বলে যে সান্ত্বনা দেব ছোট্ট এই শিশুটিকে ভেবে পাই না।
রোমহর্ষক স্মৃতির বৃত্ত থেকে রাইসাকে বের করে আনতে মনোবিদের সাহায্য নেয়া প্রয়োজন বলে অভিমত সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাবের। তিনি বলেন, রাইসা এখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে মনোবিদের সাহায্য নেয়ার বিষয়টি নিয়ে ঘটনার তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলব।
সিলেট নগরীর খাঁরপাড়ায় জোড়া খুনের পর নিহত রোকেয়ার পার্টনার নজরুলকে গ্রেফতার করে ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
ঘটনার পর রাইসা জানিয়েছিল, তানিয়া নামের একটি মেয়ে ও তার সঙ্গে থাকা একটি ছেলে তার আম্মু ও ভাইয়াকে মেরে ফেলেছে।
কোতোয়ালি থানার ওসি গৌছুল হোসেন জানান, ছবি দেখে তানিয়ার সঙ্গে থাকা ছেলেটিকে নজরুল বলে শনাক্ত করেছে রাইসা। মা-ছেলে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে সুমন, পাপলু, শিপন ও মারুফের নাম উল্লেখ থাকলেও তাদের সন্ধান পায়নি পুলিশ। ঘটনার ছয়দিনেও তানিয়ার পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
তদন্ত সংশ্লিষ্টদের দাবি, বাসা ভাড়ার তালিকায় রোকেয়া বেগম, তার ছেলে রোকন ও মেয়ে রাইসার নাম রয়েছে। পাশাপাশি লোকন মিয়া নামের এক ব্যবসায়ীর নামও রয়েছে।
কিন্তু কে এই লোকন? তার ব্যপারে কিছু জানা নেই তদন্ত কর্মকর্তাদের। রোকেয়ার পরিবারের সদস্য ও বাসার মালিক কেউই জানেন না লোকন মিয়া কে? খুন হওয়া রোকেয়ার স্বামী হেলাল মিয়াও এ ব্যাপারে মুখ খুলতে নারাজ।
কোতোয়ালি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গৌছুল হোসেন বলেন, নিহত মহিলার ছেলের নাম রোকন। লোকন নামের কেউ থাকলে আমার জানা নেই। থানার ওসি (তদন্ত) রোকেয়া খানম বলেন, লোকন নামের কেউ তালিকায় আছে কি-না দেখতে হবে।-যুগান্তর
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস