সিলেট : অবশেষে জানা গেল সিলেটে আ. লীগের পরাজয়ের নেপথ্য কারণ! বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন। গতকাল সোমবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে রাজশাহী ও বরিশালে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিজয়ী হলেও সিলেটে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান পরাজিত হয়েছেন। অনেকটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই সিলেটে পরাজিত হয়েছেন কামরান। রাজশাহী ও বরিশালে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের যতটা শক্তিশালী ক্যান্ডিডেট মনে করা হচ্ছিল, তারচেয়েও বেশি শক্তিশালী ক্যান্ডিডেট মনে করা হচ্ছিল কামরানকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জিততে পারলেন না তিনি। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে পরাজিত হলেন কামরান।
সিলেটে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মতে, জনপ্রিয়তার কারণে জেতেননি আরিফুল হক চৌধুরী। বরং দলীয় কোন্দলের কারণেই হেরেছে আওয়ামী লীগ।
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকর্মীর ভাষ্যমতে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এই জেলায় এমপি বলয় এবং এন্টি এমপি বলয় তৈরি হয়। এছাড়া বিভিন্ন গ্রুপ এবং উপগ্রুপেও বিভক্ত হয়ে পড়ে জেলা আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের গ্রুপিংও দলের মধ্যে স্বাভাবিক ভাতৃত্বের পরিবেশ নষ্ট করেছে। যে কারণে আপাতদৃষ্টিতে সব ঠিকঠাক মনে হলেও ভেতরে ভেতরে সিলেট আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অসহযোগিতার মাত্রা চরমে পৌঁছেছে। আর নিজ দলের ভেতর থেকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা না পাওয়াকেই কামরানের পরাজয়ের কারণ বলে মনে করছেন তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্রের নেতাকর্মীরা। অনেকে এই বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ‘দলের স্বার্থে সিলেটের নেতারা ঐক্যবদ্ধ হতে পারল না’, ‘সিলেট আওয়ামী লীগের ভেতরে মোশতাক ঢুকেছে’ – এমন মন্তব্যও করেছেন অনেকে।
সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ছাড়াও সিলেট থেকে এবার মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল আনোয়ার আলোয়ার, অধ্যাপক জাকির হোসেন এবং সিলেট সিটি করপোরেশনের ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ। কামরান তাঁদের কাছ থেকে নির্বাচনী লড়াইয়ে যথেষ্ট সহযোগিতা পাননি বলে মন্তব্য করছেন অনেকে।
এমন অভিযোগও উঠেছে, ছাত্রদলের ছেলেদের নৌকার কার্ডও দেওয়া হয়েছিল। গতকালের নির্বাচনে নৌকায় স্লোগান দিয়ে ধানের শীষে ভোট দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে সিলেটে।
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৩২ টি কেন্দ্রের ফলাফলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান পেয়েছেন মোট ৮৫,৮৭০ ভোট। বিএনপি প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী ৯০,৪৯৬ ভোট পেয়ে মাত্র ৪,৬২৬ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। অপরদিকে দুইটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত রয়েছে। ভোটের ফলাফল অনুযায়ী আবারও আরিফুল হক চৌধুরী সিলেটের মেয়র নির্বাচিত হলেন।
সিলেট মোট ভোটার ৩ লাখ ২১ হাজার ৭৩২ জন। পুরুষ ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৪৪ জন এবং মহিলা ভোটার ১ লাখ ৫০ হাজার ২৮৮ জন। ভোটকেন্দ্র ১৩৪টি ও ভোট কক্ষ ৯২৬টি। এই সিটিতে মেয়র পদে অংশগ্রহণ করেছেন মোট ৭ জন।