সিলেট: সিলেটের কুশিয়ারা নদী আর হাকালুকি হাওরপাড়ের উপজেলা ফেঞ্চুগঞ্জের ঘিলাছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম যুধিষ্ঠিপুর গ্রামের বাসিন্দা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে শুরু করে পাক-ভারত বিভক্তি বা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ- সব ইতিহাসই মুখস্থ দীর্ঘদেহী এই মানুষটির।
এই তৈয়ব আলীর দাবি, তাঁর জন্ম ১৮৮৪ সালে। এসব যুদ্ধ তাঁর স্মৃতিতে এখনো অমলিন। তৈয়ব আলীর হিসাব অনুযায়ী, তাঁর বয়স ১৩৫ বছর। বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক মানুষ দাবি করে এর স্বীকৃতি চান তিনি।
বয়স ১৩৫ হলেও তৈয়ব আলী এখনো বেশ শক্ত-সমর্থ। হাঁটাচলা করেন স্বাভাবিক। নিজের প্রয়োজনীয় কাজগুলো করে নেন নিজেই। নিজের কাজে অন্যের সহযোগিতা চাওয়া তাঁর মোটেই পছন্দ নয়। ব্রিটিশ আমলে চতুর্থমান (চতুর্থ শ্রেণি) পড়া তৈয়ব আলী এখনো পত্রিকা পড়তে পারেন চশমা ছাড়াই। মুখে দাঁত না থাকলেও এ নিয়ে তাঁর আফসোস নেই। বরং ক্ষোভ আছে চিকিৎসকদের ওপর। দাঁতের ব্যথা নিয়ে দন্ত চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পর জোর করে তাঁর দাঁত ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে ক্ষোভ জানান তৈয়ব আলী।
তৈয়ব আলীর জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্মসাল লেখা ১৯১২ খ্রিস্টাব্দ। কিন্তু এটা মানতে নারাজ তিনি। তৈয়ব আলীর দাবি, ‘নির্বাচনের আগে বাড়িতে এসে লোকজন তথ্য নিয়েছে। ওই সময় জন্মতারিখ জিজ্ঞাসা না করে তারা মনগড়া জন্মসাল বসিয়েছে।’ তৈয়ব আলীর ১০ ছেলে, ৩ মেয়ে।
বর্তমানে ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনিসহ ৬৯ জনের বিশাল পরিবার তাঁর। তৈয়ব আলীর বাবা আমজদ উল্লাহও মারা গিয়েছিলেন ১১৩ বছর বয়সে। তৈয়ব আলী জানান, দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধ, ব্রিটিশবিরোধী যুদ্ধ, দেশবিভাগ (পাকিস্তান-ভারত বিভক্তি), ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ- সবই তাঁর স্মৃতিতে জমা আছে। এসব ঐতিহাসিক ঘটনার অনেক স্মৃতি এখনো তাঁকে আলোড়িত করে, স্মৃতিকাতর করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় শত বছর আগে মোমিনছড়া চা-বাগান প্রতিষ্ঠার সময় বাগান কর্তৃপক্ষকে ছয় টাকায় ভূমি লিজ দিয়েছিলেন তৈয়ব আলী। আর এই মোমিনছড়া বাগানের সঙ্গে করা বন্দোবস্ত চুক্তি প্রমাণ দেয় তৈয়ব আলীর বয়সের সত্যতা।
তৈয়ব আলী জানান, তাঁর শৈশবে এলাকার সরপঞ্চ ছিলেন আবদুর রশীদ চৌধুরী। সরপঞ্চের বাড়িতেই ছিল চতুর্থমান স্কুল। বাড়ির টঙ্গি (বাংলো) ঘরের ওই স্কুলে চতুর্থমান (চতুর্থ শ্রেণি) পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, এর আগে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জেরনটলজি রিসার্চ গ্রুপ জানিয়েছিল, বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি জাপানের নাবি তাজিমা। ২০১৮ সালের ২১ এপ্রিল মৃত্যুবরণের সময় তাঁর বয়স ছিল ১১৭ বছর। তৈয়ব আলীর মতো তাঁর এলাকার লোকজনও বিশ্বাস করেন, তাঁর বয়স ১৩৫ বছর। ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হলে তৈয়ব আলী শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশে^র সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি হতে পারেন বলে মনে করেন এলাকাবাসী।