নিউজ ডেস্ক : সিলেটের বিশ্বনাথে দেশের সবচেয়ে ক্ষুদ্রারকৃতি ও কম ওজনের ব্যক্তি ৬৫ বছর বয়স্ক চেরাগ আলী কটু। তিনি উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের চকরামপ্রসাদ গ্রামের মৃত আবদুল হামিদ ও মৃত টেকার মা দম্পতির সন্তান। চেরাগ আলীর পূর্বে তার বড় ভাই বিশ্বনাথের সবচেয়ে খাটো মানুষ ছিলেন।তিনি ৩১ ইঞ্চি অধিকারী মানুষ ছিলেন। তবে তিনি কয়েক বছর আগে মারা যান। চেরাগ আলী কটু মিয়া পাঁচ সন্তানের জনক। তার ওজন মাত্র ১৩ কেজি, উচ্চতা ৩২ ইঞ্চি।বর্তমানে সাত সদস্যের পরিবার নিয়ে রয়েছেন বিপাকে।
জানা গেছে, চেরাগ আলী কটু ১২ বছর আগে নিজের জমি-জামা বিক্রি করে ভাগ্যের চাকা ঘুরানোর জন্য পাড়ি দিয়েছিলেন স্বপ্নের দেশ লন্ডনে। কিন্তু তার ভাগ্যর পরিবর্তনের সুযোগ থাকা সত্বেও এক প্রবাসী লন্ডনির কারনে প্রতারিত হন তিনি।পাঁচ সন্তানের জনক চেরাগ আলী বর্তমানে বাবার রেখে যাওয়া পারিবারিক কৃষি সম্পদ রক্ষনাবেক্ষন এবং চাষাবাদ করেছেন। কৃষিকাজ ছাড়া এর আনুসাঙ্গিক যেমন জমিতে সেচ দেওয়া এই জাতীয় ছোট খাটো কাজ করতে বেশ পারদর্শী চেরাগ আলী। নিজের পরিবারের সাত সদস্যদের বিশাল সংসার, কৃষি জমি থেকে প্রাপ্ত ফসল দিয়ে সংসার চলে না। বর্তমানে বসত ভিটা তার মূল সম্বল।
চেরাগ আলীর একমাত্র পুত্র জাহেদ আহমদ (১৫) চায়ের দোকানে চাকরি করে। ছেলের উর্পাজিত টাকা দিয়ে তাদের সংসার কোন মতো চলছে। পরিবারের দু বেলা দুমুঠো ভাত জোগাড়ের ব্যবস্থা না হওয়ায় নিকটাত্মীয়রা নিয়মিত সহযোগিতা করায় কোন মতো বেঁচে আছে চেরাগ আলীর পরিবার।
১৯৯৬ সালে বিয়ের স্বাদ জাগলেও পাত্র (খাটো) পছন্দ না হওয়ায় বিয়ে করা হয়নি চেরাগ আলীর। এসময় লন্ডন এক প্রবাসী চেরাগ আলীকে লোভ দেখান ভিজিট ভিসায় লন্ডন নিয়ে যাবার। অচেনা অজানা দেশে চেরাগ আলী যেতে রাজি না হওয়ায় ধোকা দেওয়া হয় বিয়ের প্রলোভন দিয়েই। কনেকে দেখে পাত্রের পছন্দ হলেও পাত্র দেখে পাত্রীর কোন অবস্থায় পছন্দ হয়নি।
এ সময় চতুর প্রবাসী আতিক মিয়ার বাড়ীতে পিতা মাতাহীন ৬৪ ইঞ্চির সুন্দরী জরিনা বেগমকে (২২) প্রলোভন দেয় চেরাগ আলীকে বিয়ে করলে সহজেই লন্ডনে যাওয়া যাবে। এর সাথে ছিল মানসিক ছাপ। তাই বাধ্য হয়েই ৬৪ ইঞ্চির সুন্দরী জরিনাকে ৩২ ইঞ্চির কালো চেরাগ আলীর সাথে বিয়ের পীড়িতে বসতে হয়।
চেরাগ আলী কটু জানান, তার পিতার রেখে যাওয়া জায়গা জমি বিক্রি করে লন্ডন প্রবাসী আতিক মিয়া নামের এক ভন্ড প্রতারকের ফাঁদে পড়ে স্বপ্ন পুরনের আসায় পাড়ি দেন স্বপ্নের দেশ লন্ডনে।লন্ডনের বৃহত্তর ম্যানচেষ্টার এলাকায় সম্ভবত আজিজ মিয়ার মালিকানাধীন রেষ্টুরেন্টে কাজ হয় চেরাগ আলীর। রেষ্টুরেন্টের প্রধান ফটকে বিলাতি পোশাক পরে আতিক মিয়ার শিখানো ইংরেজী ভাষা ‘‘হ্যায়’ হ্যালো’’বলে রেষ্টুরেন্টে খেতে আসা সাদা চামড়ার পুরুষ ও মহিলাদেরকে অভিবাদন জানানোই ছিল তার প্রধান কাজ।
আর এতে সাদা রঙের মানুষগুলো চেরাগ আলীর হায় হ্যালোতে মুগ্ধ হয়ে এক পাউন্ড দুই পাউন্ড করে টিপস দিত। অনেকেই আরো বেশি দিত। রেষ্টুরেন্টে আসা কোন কাষ্টমারের কাছ থেকেই খালি হাতে ফিরতে হয়নি চেরাগ আলীকে।রেষ্টুরেন্টের উপরে থাকা আর সময় মতো রেষ্টুরেন্টে এসে কাষ্টমারদের স্বাগত জানানোই তার একমাত্র কাজ। কাজ শেষে কোথায়ও বাহিরে যাওয়া কিংবা কারো সাথে কথা বলা বন্ধ করার জন্য আতিক মিয়ার এক ছেলে সিকিউরিটি গার্ডের ন্যায় সার্বক্ষনিকভাবে ছায়ার মতো পাহারা দিত।
অন্যদিকে টিপসের টাকা যাতে চেরাগ আলী সরাতে না পারে সেজন্য রেষ্টুরেন্টের ভিতর ও বাহিরে লাগানো হয় সিসি টিভি ক্যামেরা। প্রতিদিন কাজ শেষে টিপসের সব টাকা আতিক মিয়া বা তার লোকজন সব নিয়ে যেতো। এভাবে দীর্ঘ প্রায় ১৫ মাস আতিক মিয়া দেশী-বিদেশী লোকদের কাছ থেকে টিপস নিয়ে কয়েক লক্ষ টাকা কামিয়ে নেয়।
তার পরও প্রতারক আতিক মিয়া দেশে থাকা চেরাগ আলীর পরিবার পরিজনদের জন্য একটি টাকাও পাঠায়নি। বরং এই দীর্ঘ ১৫ মাস পর কোন টাকা পয়সা ছাড়াই অনেকটা জোর করে চেরাগ আলীকে দেশে পাঠায় প্রতারক আতিক মিয়া।তিনি বলেন, সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে আতিক মিয়ার মিষ্টি কথায় মুগ্ধ হয়ে প্রচুর জায়গা জমি বিক্রি করে স্বপ্নের দেশ লন্ডনে পাড়ি জমালেও স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। সপ্তাহের মজুরি ও বিলাতিদের টিপস স্বপ্ন দেখাতে শুরু করে চেরাগ আলীর।
কিন্তু ভন্ড প্রতারক আতিক মিয়া সব অর্জন লুটে পুটে নিলে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে দেশে। বর্তমানে বয়সের বারে নিজের কাজই করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ১৫ বছর বয়সের একমাত্র ছেলে বাড়ীর পাশে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিকটে চায়ের দোকানে টি বয় হিসাবে যা বেতন পায় তা দিয়ে চলে আমার পরিবার।
সূত্র: আমাদেরসময়.কম