শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট থেকে : দুই দফায় শেষ হয়েছে সিলেট বিভাগের চার জেলার ৩৬ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। নির্বাচনে বিভাগের পাঁচ মন্ত্রীর এলাকায় ঘটেছে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীদের ভরাডুবি।
দলীয় প্রতীক নৌকার এ ভরাডুবির কারণ হিসেবে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, দলের পদধারী নেতাদের বিদ্রোহীদের পক্ষে অবস্থান ও প্রার্থী বাছাইয়ে নেতাদের স্বেচ্ছাচারিতাকে দায়ী করছেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। বিদ্রোহীদের এই দাপুটে জয়ে দলের ‘চেইন অব কমান্ড’ নষ্টের আশঙ্কাও করছেন তারা।
এদিকে, সিলেট জেলায় দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিএনপির কোনো নেতাই বিজয়ী হতে পারেননি। উল্টো দলের ‘অবাধ্য’ হয়ে তাদের হতে হয়েছে বহিষ্কৃত। নির্বাচনে পরাজিত হয়ে সব কুলই হারাতে হয়েছে তাদের।
সোমবার দ্বিতীয় পর্বে সিলেট জেলার ১২ ও মৌলভীবাজারের ৭ উপজেলায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সিলেটের ১২ উপজেলার মধ্যে ৭টিতে পরাজিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। দলীয় প্রতীক নৌকাকে টেক্কা দিয়ে ৫টিতে বিজয়ী হয়েছেন বিদ্রোহীরা। নির্বাচনে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এলাকা সিলেট সদরে নৌকার প্রার্থী আশফাক আহমদ বিজয়ী হলেও প্রবাসীকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমদের এলাকা জৈন্তা, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জে ঘটেছে ‘নৌকাডুবি’।
তিন উপজেলায়ই দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা। জৈন্তায় দলীয় প্রার্থী লিয়াকত আলীকে পরাজিত করে বিজয়ী হয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কামাল আহমদ।
একইভাবে গোয়াইনঘাটে গোলাম কিবরিয়া হেলালকে পরাজিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমদ এবং কোম্পানীগঞ্জে জাহাঙ্গীর আলমকে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন ইসলামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম আহমদ।
এ ছাড়া সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের এলাকার দুই উপজেলার মধ্যে বিয়ানীবাজারে নৌকা ডুবিয়ে বিজয়ী হয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আবুল কাশেম পল্লব। মৌলভীবাজারে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের এলাকা বড়লেখা ও জুড়ীতে নৌকার ভরাডুবি ঘটেছে।
বড়লেখায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রফিকুল ইসলাম সুন্দরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী সোয়েব আহমদ। একইভাবে জুড়ী উপজেলায় নৌকার বিপরীতে বিজয়ী হয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী এম এ মুহিত।
প্রথম দফায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারেও মন্ত্রীদের এলাকায় নৌকার ভরাডুবির ঘটে। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের এলাকার দুই উপজেলার মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে শুধু দক্ষিণ সুনামগঞ্জে। এ উপজেলায় নৌকা প্রতীককে পরাস্ত করে প্রায় ১৩ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন জেলা বিএনপির সহসভাপতির পদ থেকে বহিষ্কৃত মো. ফারুক আহমদ।
বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলীর এলাকার মধ্যে একটি উপজেলায় পরাজিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। তার নির্বাচনী এলাকা চুনারুঘাটে নৌকা প্রতীক বিজয়ী হলেও হেরেছে মাধবপুরে। মাধবপুরে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে পরাজিত করে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা এস এফ এ এম শাহজাহান।
এদিকে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে সিলেট জেলায় বিএনপির ১২ নেতা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছিলেন। দলের অবাধ্য হওয়ায় নির্বাচনের আগেই তাদের বহিষ্কার করা হয়। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী যুদ্ধেও বিজয়ী হতে পারেননি কেউ। এমনকি গোয়াইনঘাট ছাড়া অন্য কোনো উপজেলায় শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায়ও আসতে পারেননি বিএনপির বহিষ্কৃতরা। বিডি প্রতিদিন