সিলেট থেকে : রোজায় মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবারগুলোতে প্রতিদিনই ইফতারি নিয়ে থাকে নানা আয়োজন। বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের উদ্যোগেও আয়োজন করা হয় ব্যয়বহুল ইফতার মাহফিল।
তবে, চাকচিক্যের এই ইফতারি কপালে জুটে না নিম্নবিত্ত শ্রমজীবী কিংবা অসহায় রোজাদার মানুষের। ইফতারি নিয়ে এই বৈষম্য পীড়া দেয় গালিব, নাদের ও রবিন এই তিন ভাইকে। নিজেদের আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে উদ্যোগ নেন রোজায় অসহায়দের জন্য কিছু করার।
আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতজনদের সাথে কথা বলতে গিয়ে উৎসাহ পান ব্যাপক। তাদের উৎসাহে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে খুলেন ইভেন্ট। নাম দেন ‘হেল্পিং উইং’। ইভেন্ট খুলতেই পড়ে ব্যাপাক সাড়া। মহতী এই উদ্যোগে এগিয়ে আসেন তাদের বন্ধু-বান্ধব ও সহপাঠীরা।
সিদ্ধান্ত নেন রোজায় দুই টাকায় অসহায়দের ইফতার করানোর। গত পাঁচদিন ধরে সিলেট নগরীর বিভিন্ন ব্যস্ততম এলাকায় বিক্রি হচ্ছে এই দুই টাকার ইফতার। নামমাত্র মূল্যে বাহারি আইটেমের ইফতার পেয়ে হাসি ফুটেছে অসহায় লোকদের মুখে।
দুই টাকায় ইফতার কেন? এ প্রসঙ্গে উদ্যোক্তা গালিব চৌধুরী জানান, ‘শ্রমজীবী ও অসহায়রাও তাদের মতো করে আত্মসম্মান নিয়ে সমাজে বাস করছেন। সম্পূর্ণ ফ্রিতে ইফতারি দেয়া হলে মনে হবে তাদেরকে করুণা করা হচ্ছে। তাদের আত্মসম্মানবোধে আঘাত করা হবে। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নেই ফ্রিতে নয়, দুই টাকা মূল্যে আমরা অসহায়দের কাছে ইফতার বিক্রি করবো।’
দুই টাকার বিনিময়ে ‘হেল্পিং উইং’র ইফতারির প্যাকেটে দেয়া হচ্ছে ভুনা খিচুড়ি, ছোলা ভুনা, পিয়াজু, বেগুনী, আলুর চপ, শাকের বড়া, কাবাব, কাঁচা ছোলা, খেজুর, জিলাপি ও বোতলজাত খাবার পানি। মাত্র দুই টাকায় ১১ আইটেমের এই ইফতারি কিনতে প্রতিদিন দীর্ঘ লাইন পড়ে শ্রমজীবী মানুষের।
গত ১৩ মে সিলেট নগরীর চৌহাট্টায় ‘হেল্পিং উইংস’র এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। ওইদিন চৌহাট্টায় প্রায় এক হাজার লোকের মধ্যে দুই টাকায় ইফতারি বিক্রি করা হয়।
গত মঙ্গলবার রিকাবিবাজার, বুধবার সুবিদবাজার, বৃহস্পতিবার শাহী ঈদগাহ ও শুক্রবার নয়াসড়ক এলাকায় পাঁচশত প্যাকেট করে আরও দেড়হাজার মানুষকে দুই টাকায় ইফতার খাওয়ার সুযোগ করে দেয় হেল্পিং উইং। এছাড়া আগামী ২৬ মে নগরীর শিবগঞ্জ এলাকায় ইফতার বিতরণের মাধ্যমে এবারের কার্যক্রম সমাপ্ত করবেন তারা।
রিকাবিবাজারে ইফতার নিতে আসা মধুশহীদ এলাকার সুফিয়া বেগম বলেন, রোজা রেখে সারাদিন কন্সট্রাকশনের শ্রমিকের কাজ করেন। মজুরি হিসেবে তিনি যে টাকা পান তা দিয়ে সংসার চালানোই কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। ঘরে বিশেষ কিছু রান্না বা বাজার থেকে ইফতার কিনে খাওয়ারও সামর্থ্য নেই তার। দুই টাকায় ১১ আইটেমের ইফতার পেয়ে তিনি খুব খুশি।
সংগঠনের আরও দুই উদ্যোক্তা নাদের চৌধুরী ও রবীন চৌধুরী জানান, আগামী তিনদিন নগরীর তিনটি পয়েন্টে তারা আরও প্রায় দুই হাজার প্যাকেট ইফতার দুই টাকা মূল্যে বিক্রি করবেন।
দুই টাকা মূল্যে ইফতার বিক্রির এই আয়োজন বেশ প্রশংসিত হয়েছে উল্লেখ করে তারা বলেন, ‘আমরা যেভাবে মানুষের কাছ থেকে সাড়া পেয়েছি, সহযোগিতা পেয়েছি তাতে মনে হচ্ছে সুযোগ পেলে অনেকেই গরীব অসহায়দের জন্য কাজ করতে চান। রমজানের পরেও অসহায় লোকজনের জন্য আমরা কিছু একটা করতে চাই। এ নিয়ে আমাদের চিন্তা-ভাবনা চলছে।’