সিলেট থেকে : দালালের মাধ্যমে অবৈধ পন্থায় ইউক্রেন থেকে ফ্রান্স যাওয়ার পথে স্লোভাকিয়ার জঙ্গল থেকে নি'খোঁ'জ হয়েছেন সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার ফরিদ উদ্দিন আহমেদ (৩৫)। ফরিদ উপজেলার কারিকোনা গ্রামের সমশাদ আলীর পুত্র।
এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে তার পরিবার। এছাড়াও তার সহযাত্রীরা জানিয়েছে, দালাল ও ৫ জন যাত্রীসহ ফ্রান্স যাওয়ার উদ্দেশ্যে গত ২ আগস্ট ইউক্রেন থেকে পায়ে হেঁটে যাত্রা করেন তারা। পথিমধ্যে স্লোভানিয়ার একটি জঙ্গলে নি'খোঁ'জ হয়ে যান তিনি। পরে গত সোমবার ফরিদ ছাড়া সকলেই ফ্রান্স প্রবেশ করেন।
ফরিদ উদ্দিনের ছোট ভাই আলা উদ্দিন জানান, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত ফুটবল বিশ্বকাপ দেখতে রাশিয়া যান ফরিদ। খেলা শেষ হওয়ার মাস খানেক পর তিনি রাশিয়া থেকে ইউক্রেন পৌঁছেন। সম্প্রতি ইউক্রেন থেকে ফ্রান্স যাওয়ার জন্য বাংলাদেশে থাকা দালালের সাথে চুক্তি করে তার পরিবার। চুক্তি অনুযায়ী এক ব্যক্তির কাছে দেয়া হয় ৭ লাখ টাকা।
কথা ছিল গাড়িতে করে ফরিদকে ফ্রান্স পৌঁছানোর। চুক্তির পর ইউক্রেনে দালালের শিবিরে যান ফরিদ। সেখানে প্রায় ১ মাস অবস্থান করেন তিনি। সর্বশেষ গত ২৭ আগস্ট পরিবারের সাথে মোবাইল ফোনে কথা হয় তার। এ সময় তিনি জানান, পরদিন ২৮ আগস্ট ফ্রান্সের উদ্দেশ্যে তিনি যাত্রা করবেন। এরপর থেকে আর কারো সাথে কথা হয়নি তার।
গত সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) ফ্রান্স যাত্রী ফরিদের এক সঙ্গী, যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত তার ভাই কাওছার আলীকে ফোনে জানান, গত বুধবার একজন দালালের সঙ্গে ফরিদ উদ্দিনসহ তারা ৬ জন ইউক্রেন থেকে ফ্রান্সের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। পায়ে হেঁটে ফ্রান্স পৌঁছাতে তাদের ৫ দিন সময় লাগবে। কিন্তু তাদের সাথে খাবার ছিল মাত্র দু’দিনের।
খাবার শেষ হয়ে গেলে তাদের শুকরের মাংস খেতে দেয় দালাল। তা খেতে অপারগতা প্রকাশ করেন ফরিদ। সাথে থাকা খেঁজুর খেয়ে আরো একদিন পার করেন তিনি। দুই দিন পায়ে হেঁটে তারা পৌঁছান স্লোভাকিয়ার একটি জঙ্গলে। সেখানে পৌঁছার পর জীবন রক্ষায় শুকরের মাংস খেতে বাধ্য হন ফরিদ। খাওয়ার সাথে সাথেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।
নাকে ও মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। বমি আর ডায়রিয়ায় একেবারেই দুর্বল হয়ে পড়েন। ওই জঙ্গলে সেদিন রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে একটি বিকট শব্দে ঘুম ভাঙে সবার। ঘুম থেকে উঠে ফরিদকে পাশে দেখতে না পেয়ে জঙ্গলে খুঁজতে থাকেন তারা। কিন্তু কোথাও ফরিদকে না পেয়ে এক পর্যায়ে তাকে রেখেই ফ্রান্সের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন দালাল ও অন্য ৫ জন।
ফরিদের ছোটভাই আলা উদ্দিন বলেন, আমরা ধারণা করছি আমার ভাই অসুস্থ হয়ে পড়লে স্লোভাকিয়ার ওই জঙ্গলে ফেলে রেখেই অথবা তাকে হত্যা করে দালাল ও সঙ্গীরা ফ্রান্সে চলে যায়। আল্লাহ যেন আমার ভাইকে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দেন সকলের কাছে এই দোয়া চাই। পাশাপাশি স্লোভাকিয়ার ওই জঙ্গল থেকে ফরিদ উদ্দিনকে উদ্ধারে প্রদক্ষেপ গ্রহণের জন্য তিনি সরকারের কাছে আবেদন জানান।
এদিকে, ফরিদ উদ্দিনের নি'খোঁ'জ সংবাদ পাওয়ার পর থেকে তার পরিবারে হ'তা'শার কালো ছায়া নেমে এসেছে। কান্নাকাটি করছেন স্বজনরা। পরিবারের ৬ ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড় ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। তার স্ত্রী সেলিনা সুলতানা বিশ্বনাথ উপজেলার রামধানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। ইরা তাসফিয়া নামে তার ৩ বছর বয়সী এক কন্যা সন্তান রয়েছে।