রাহিব ফয়ছল, সিলেট প্রতিনিধি: আজ পহেলা ফাল্গুন। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় দিবস আজ। ১৯৯১ সালের পহেলা ফাল্গুন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা-কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর একেএকে ২৫ পেরিয়ে আজ ২৬ বছরে পদার্পণ করল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে নানাবিধ অনুুষ্ঠানসূচি হাতে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। জাতীয় পতাকা উত্তোলন, কেককাটা, বর্ণাঢ্য র্যালী সহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করবেবিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী।
১৯৯১ সালের ১ ফাল্গুন ৩২০ একর জায়গায় ৩টি বিভাগে ১২০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। এই ২৫ বছরে শুধুমাত্র নিজের নামের পিছনে সংখ্যাটিকে বাড়ায়নি, উত্তরোত্তর একের পর এক সাফল্যের মুকুট আরোহন করেছে নিজের পালকে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সবোর্চ্চ স্থান করে নেয়ার পাশাপাশি মাত্র ২৫ পেরুনো এই বিশ্ববিদ্যালয় টেক্কা দিচ্ছে দেশসেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে প্রতিভার স্বাক্ষর রাখছে। তবে দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম ও পুরো ক্যাম্পাসে ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক সহ কিছু ক্ষেত্রে সফলতা থাকলেও পথচলার ২৫ বছরেমহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়েছে অর্ধেকেরও কম। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটেও গবেষণায় বরাদ্দের পরিমাণও একেবারেই নগন্য।
মুঠোফোনে ভর্তি কার্যক্রম, পুরো বিশ্ববিদ্যালয়কে ইন্টারনেটে আবদ্ধ করতে রয়েছে ফ্রি ইন্টারনেট সেবা তথা ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক, নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ২০০৭ ও ২০০৮ সালে বৃক্ষরোপণে লাভ করে জাতীয় পুরষ্কার, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুরো করতে পুরোক্যাম্পাসে রয়েছে প্রায় শতাধিক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা।
এছাড়া দেশের সর্বপ্রথম বাংলায় সার্চ ইঞ্জিন পিপীলিকার যাত্রা শুরু হয় শাবি থেকেই। গবেষণা কাজে সহায়তার জন্য তৈরী হয় ইন্টিলিজেন্ট লেজার কন্ট্রোলার। দৃষ্টিহীন ব্যাক্তিদের পথ দেখাতে উদ্ভাবন করা হয় বিশেষ ডিভাইস। দেশে ড্রোন তৈরীর যাত্রাটাও এখান থেকে। দৈনন্দিন কাজের সুবিধার্থে নানা রকম সফটওয়্যার ও ডিভাইসছাড়াও ফিল্টার মেমব্রেন টেকনোলজির মাধ্যমে সমুদ্রের পানি বিশুদ্ধ করণ যন্ত্র ও রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং সিস্টেম, ন্যানো টেকনোলজী প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে স্বল্প ব্যয়ে সহজলভ্য উপাদান থেকে বিভিন্ন ধরনের আস্তরণ তৈরি করা, দেশের প্রথম সোস্যাল ইন্টারেকশন রোবটও এসেছে সবুজে ঘেরা এই ক্যাম্পাসের হাত ধরেই।
প্রতিবছর এখান থেকে একাধিক শিক্ষার্থী যোগ দিচ্ছে বিশ্বসেরা জায়ান্ট কোম্পানিগুলোতে। গতবছরে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং প্রতিযোগীতার সবচেয়ে বড় আসর এসিএম আইসিপিসি ২০১৫ এর ওয়ার্ল্ড ফাইনালে বিশ্বের বড় বড় বিশ^বিদ্যালয়কে পেছনে ফেলে ৫৪ তম স্থান অর্জন করে এই বিশ্ববিদ্যালয়। ওয়েবমেট্রিকস এর জরিপে দেশসেরাও হয় শাবিপ্রবি।
এতোসব অর্জনের মাঝেও রয়েছে সীমাবদ্ধতা। ১৯৯১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় মূলত ১৯৮৬ সালে। সেসময় হাতে নেয়া ৩০ বছর মেয়াদী মহাপরিকল্পনার মেয়াদ শেষ হলেও এর অর্ধেকও বাস্তবায়িত হয়নি।
ছয়টি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অধীনে ১৯৮৫ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং এমফিল ও পিএইচডি কোর্স চালু, আবাসন, পরিবহন, চিকিৎসা, বিনোদনের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধাসহ ১ হাজার ৫শ’ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের কথা মাথায় রেখে ৩০ বছর মেয়াদী এ পরিকল্পনা করা হয়।
এ মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী বিভিন্ন অনুষদ ও ইনস্টিটিউট এর অধীনে ৩৭টি বিভাগ চালু করার কথা থাকলেও চালু হয়েছে মাত্র ২৬টি বিভাগ। ১৭টি একাডেমিক ভবনের মধ্যে নির্মিত হয়েছে মাত্র ৬টি। একটি দুইটি ক্লাসরুম নিয়ে শিক্ষা-কার্যক্রম সম্পন্ন হচ্ছে বেশিরভাগ বিভাগেই।
আবাসন সমস্যা দূরীকরণের জন্য ২০১৫ সালের মধ্যে ৬টি ছাত্রহল ও ৩টি ছাত্রীহল নির্মাণের কথা। অথচ ২০১৫ পেরিয়ে গেলেও বর্তমানে ছাত্র হল আছে মাত্র ৩টি এবং ছাত্রীহল ২টি। শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য পৃথক পৃথক ২৮টি কোয়ার্টার স্থাপনের কথা থাকলেও নির্মিত হয়েছে মাত্র ৪টি। স্টেডিয়াম নির্মাণের কথা থাকলেও তা হয়নি।পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্মিত হয়নি সুইমিং পুল, সিনেট হল, বিজ্ঞান কারখানা, প্রজেক্ট অফিস, বিপনী কেন্দ্র, নিরাপত্তা ক্যাম্প, লেক, হকি,ক্রিকেট মাঠ ও ইলেকট্রিক সাবস্টেশন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিরও অবস্থা বেহাল। চিকিৎসা সেবা নামে মাত্র বলা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য ইউনিভার্সিটি সেন্টার নির্মাণ করা হলেও তা হস্তান্তরের আগেই ফাটল দেখা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনারে ১৮ বছরেই দেখা দিয়েছে একাধিক ফাটল। টিলা বেষ্টিত এই সুউচ্চ শহীদ মিনার থেকে প্রায়ই ইট-সুরকি খসে পড়ে মাটিতে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. আমিনুল হক ভুইয়া বলেন, নানাবিধ কারণে আমরা মহাপরিকল্পনার দিকে খুব ভালোভাবে এগিয়ে না যেতে পারলেও দুই যুগ পার হয়ে আমরা একটি ভালো অবস্থানে দাড়িয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক হিসেবে শিক্ষা, গবেষনা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের সুবাতাস অব্যহত রাখায়ই তার লক্ষ্য বলে জানালেন তিনি। পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় সামনের দিকে এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি। এজন্য তিনি সরকারের তরফ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের জন্য পাশে থাকার আহ্বান জানান।
১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এইচএস/কেএস