রাহিব ফয়সাল, সিলেট প্রতিনিধি : সিলেটে কতটি কোচিং সেন্টার রয়েছে এ সঠিক হিসেব কারো জানা নেই। শিক্ষাক্ষেত্রে বাণিজ্যিকীকরণ বহুগুণে বাড়িয়ে তুলেছে এসব কোচিং সেন্টারগুলো। অনেক ক্ষেত্রেই মানহীন শিক্ষকরা সেখানে পাঠদান করছেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০১২ সালে গৃহিত কোচিং বাণিজ্য বন্ধের একটি নীতিমালা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না দীর্ঘদিন থেকে। বরং দিনে দিনে সিলেটে কোচিং সেন্টারের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষার্থীদেরকে কোচিং বিমুখ ও স্কুলের প্রতি অগ্রসর করতে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের ওই নির্দেশনা অনুযায়ি এবার ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন সিলেট বিভাগীয় কমিশনার জামাল উদ্দিন আহমদ।
গত শনিবার সকাল থেকেই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে। এমনকি এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করার জন্য সিলেট বিভাগের প্রতিটি শিক্ষা অফিস, পুলিশ প্রশাসনকে তদারকি করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যদি কেউ এ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হন তাহলে তার বিরুদ্ধে নেয়া হবে প্রশাসনিক ব্যবস্থা। এবার স্কুল চলাকালীন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কোন ধরণের কোচিং চলবে না। আর শিক্ষামন্ত্রণালয় থেকে কোচিং-বাণিজ্য বন্ধের আইন প্রকাশ হওয়ার পর পরই নেয়া হবে আরো কঠোর ব্যবস্থা।
সূত্রে জানা যায়- সিলেট বিভাগের ৪টি জেলায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে কয়েক হাজার কোচিং সেন্টার। শিক্ষার্থীরা সকালে স্কুলে না গিয়ে কোচিংয়ের উপর নির্ভর হয়ে পড়ছে। এ থেকে উত্তোরণের জন্য সিলেট বিভাগের প্রতিটি কোচিং সেন্টার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যদি কোন কোচিং কর্তৃপক্ষ এ আদেশ অমান্য করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোরভাবে আইনিব্যবস্থা নেয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে- নগরীতে অন্তত পক্ষে আড়াই শতাধিক কোচিং সেন্টার রয়েছে। যেগুলোর বেশিরভাগই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষক দ্বারা। আবার কোন কোন কোচিং সেন্টার নিয়ন্ত্রণ করা হয় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে দিয়ে।
সিলেট নগরীর সবচেয়ে বেশী কোচিং সেন্টার ব্যাঙের ছাতার মতো বাসা বেধেছে লামাবাজার ও শিবগঞ্জ এলাকায়। এগুলোর মধ্যে প্রত্যয়, প্রয়াস, অপশন, টেকনিক, স্টুডেন্ট, নিউক্লিয়াস, মাদার, সিটি, ক্রিয়েটিভ, স্টার, অরবিট, এবি, কনসেপ্ট, প্রতিভা, ফিউচার কেয়ার, সৃজন, এডু ই এড, স্টাডি হোম, সাকসেস, ই-টাইম, সিডিএ, কনটেস্ট, ক্যালকুলাস প্রভৃতি অন্যতম। এসব কোচিং সেন্টারগুলো শিক্ষার্থী টানার জন্য চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে শিক্ষার্থীদের অনেক ক্ষেত্রেই বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে।
সিলেট বিভাগীয় কমিশনার জামাল উদ্দিন আহমদ বলেন এমটি নিউজ টোয়েন্টফোরকে জানান- শিক্ষামন্ত্রণালয়ের পূর্বের নীতিমালার উপর ভিত্তি করে আপাতত কোচিং সেন্টারগুলো স্কুল চলাকালীন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বন্ধ রাখার জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। যদি এ সিদ্ধান্তের বাহিরে কোথাও কোন কোচিং সেন্টার চালু থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে নেয়া হবে কঠোর আইনিব্যবস্থা। এমনকি এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করার জন্য পুলিশ প্রশাসন ও সিলেট বিভাগের বিভিন্ন শিক্ষা অফিসে চিঠি দিয়ে অবহিত করা হয়েছে।
এছাড়াও শিক্ষামন্ত্রণালয় থেকে কোচিং সেন্টার বন্ধের আইন পূর্ণাঙ্গ প্রকাশ হওয়ার পর এদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক জয়নাল আবেদীন সত্যতা নিশ্চিত করেন বলেন- সিলেট বিভাগীয় কমিশনার মহোদয় এ উদ্যোগটি গ্রহণ করেছেন। এই উদ্যোগটি বাস্তবায়ন হলে শিক্ষার্থীরা অনেক লাভবান হবে। পাশাপাশি অভিভাবকরাও অনেক লাভবান হবেন।
১৬মে,২০১৬এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এইচএস/কেএস