শাহ্ দিদার আলম নবেল : সারাদিন তারা ঘুরে বেড়ায় সিলেটের হজরত শাহজালাল (রহ.) ও শাহপরাণ (রহ.)-এর মাজারের আশপাশে। অনুসরণ করে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মাজারে আসা নারীদের। বোঝার চেষ্টা করেন কোন নারী কোন ‘মানত’ নিয়ে মাজারে এসেছেন কি-না?
যেমন সন্তান লাভের আশা, দাম্পত্য সমস্যার সমাধান, প্রতিবন্ধী শিশুর আরোগ্য লাভ— এমন ম্পর্শকাতর সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কোনো নারী মাজারে এলে তার পিছু নেয় ‘জিনের বাদশা’ চক্রের সদস্যরা। সিএনজি অটোরিকশা চালক, মাজারের কর্মী, ভিক্ষুক, পীর সেজে কৌশলে তারা ওই নারীর মোবাইল ফোন ও ঠিকানা সংগ্রহ করেন। এরপর গভীর রাতে ‘জিনের বাদশা’ সেজে প্রতারক চক্রের সদস্যরা ওই নারীকে ফোন দেন।
সমস্যা সমাধানের কথা বলে হাতিয়ে নেন স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা। রবিবার রাতে সিলেটে নূরে আলম নামের এক কথিত জিনের বাদশাকে গ্রেফতারের পর প্রতারণার এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। নূরে আলম নগরীর ভাতালিয়ার মৃত নাছির উদ্দিনের ছেলে। তার কাছ থেকে ফরিদপুর জেলার এক গৃহবধূর কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া ১৬ ভরি স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করা হয়েছে। নূরে আলমের সহযোগী ‘জিনের বাদশা’ চক্রের অন্য সদস্যদের খোঁজে মাঠে নেমেছে পুলিশ ও গোয়েন্দারা।
সিলেট মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. ইকবাল হোসাইন জানান, লাইজু নামের ফরিদপুরের ওই নিঃসন্তান গৃহবধূর সঙ্গে জিনের বাদশা পরিচয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলেন সিলেটের নূরে আলম। বিভিন্ন রকম আধ্যাত্মিক কথা, গজল, কোরআনের আয়াত, ইসলামিক কবিতা শুনিয়ে ‘জিনের বাদশা’ হিসেবে লাইজুর বিশ্বাস অর্জন করেন তিনি। একপর্যায়ে তাবিজ-কবচের মাধ্যমে সন্তান পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাসে লাইজুকে তার সব স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনালে আসতে বলেন।
লাইজু স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে এলে কৌশলে হাতিয়ে নেয় প্রতারক নূরে আলম। এর দুদিন পর নূরে আলম লাইজুর কাছে আরও ২০ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে লাইজুর পুরো পরিবারের ক্ষতি হবে বলে ভয় দেখান। আতঙ্কিত হয়ে লাইজু ১০ লাখ টাকা সংগ্রহ করেন। পরবর্তীতে নূরে আলমের কথাবার্তায় প্রতারণা আঁচ করতে পেরে তিনি বিষয়টি সিলেট মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে জানান। রবিবার রাত সাড়ে ১১টায় সিলেট নগরীর একটি হোটেলের সামনে নূরে আলম দাবিকৃত টাকা লাইজুর কাছ থেকে নিতে এলে গোয়েন্দা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেন।
গ্রেফতারের পর নূরে আলম ‘জিনের বাদশা’ সেজে প্রতারণার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তার কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া স্বর্ণালঙ্কারও উদ্ধার করেছে গোয়েন্দারা। সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. রহমত উল্লাহ জানান, প্রতারক কথিত ‘জিনের বাদশা’র চক্রটির মূল টার্গেট থাকে মাজারে আসা অসহায় নারীরা। প্রথমে মাজারে আগত নারীদের অসহায়ত্বের কথা জেনে কৌশলে তারা মোবাইল ফোন সংগ্রহ করেন। পরে মোবাইলে কথা বলে তাদের টোপে ফেলে প্রতারিত করেন। নূরে আলমের সহযোগিদের খোঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
৮ জুন ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস