চৌধুরী মুমতাজ আহমদ: মন ভালো নেই তাদের। দীর্ঘদিনের স্বপ্নটি যেন মুহূর্তেই ভেঙে গেছে এক দমকা হাওয়ায়। অনেকদিন ধরেই তারা পাখির চোখ করে রেখেছিলেন সিলেট-১ আসনটিকে। স্বপ্ন ছিল বাঙালির ঐতিহ্যের প্রতীক নৌকা নিয়ে এ আসন থেকে নির্বাচনী লড়াইয়ে নামার। তবে মাঠে নামার আগেই যেন বন্ধ হয়ে গেল তাদের লড়াইয়ের পথ। জাতীয় সংসদের মর্যাদাপূর্ণ এ আসনের বর্তমান সদস্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের একটি ঘোষণাতেই স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় পুড়ছেন সিলেট আওয়ামী পরিবারের অনেক শীর্ষ নেতা। আবুল মাল আবদুল মুহিত ঘোষণা দিয়েছেন তিনি আর নির্বাচনে লড়বেন না, আসনটি ছেড়ে দেবেন তার ছোট ভাই জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করে আসা ড. আবুল কালাম আবদুল মোমেনকে। সে ঘোষণাই ঝড় হয়ে আঘাত হেনেছে সিলেটের স্থানীয় অনেক শীর্ষ আওয়ামী নেতার স্বপ্নে। তাদের স্বপ্ন ছিল আবুল মাল আবদুল মুহিত সরে দাঁড়ালে সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগের হয়ে লড়াইয়ে নামবেন তারা।
গেল সপ্তাহে সচিবালয়ে সিলেট সংক্রান্ত এক বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের কাছে আগামীতে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। জানিয়ে দেন, পরের নির্বাচনে তিনি আর লড়াইয়ে নামবেন না। তিনি আরো জানান, এ আসনে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারই ছোট ভাই আবুল কালাম আবদুল মোমেন। আবুল মাল আবদুল মুহিতের এমন ঘোষণায় সিলেট আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নানা হিসাবনিকাশ শুরু হয়েছে। যদিও মুখ ফুটে কিছুই বলছেন না কেউই। আবুল মাল আবদুল মুহিত মাঠ ছেড়ে দিলে লড়াইয়ে নামার ইচ্ছে ছিল আওয়ামী লীগের স্থানীয় অনেক নেতারই। সে দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। জনপ্রতিনিধি হিসেবে দীর্ঘদিন এ এলাকার মানুষের কাছাকাছি থাকার অভিজ্ঞতাও রয়েছে তার। সে অভিজ্ঞতার ঝুলিকে আরো সমৃদ্ধ করার পথে তার স্বপ্ন হয়ে আছে সিলেট-১ আসনটি। তাই অর্থমন্ত্রীর ঘোষণায় দুঃখ পাওয়ারই কথা কামরানের। তবে মুখ ফুটে বেরোয়নি সে দুঃখের কথা। কিংবা দুঃখ পেয়েছেন কিনা সেটাও টের পেতে দিচ্ছেন না সিলেটের সাবেক এ নগর পিতা।
গেল সংসদ নির্বাচনেও সিলেট-১ আসনে প্রার্থী হিসেবে তার নাম জোরেশোরে আলোচনায় ছিল। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত যদি নির্বাচন না করতেন নিশ্চিত বদরউদ্দিন আহমদ কামরান আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতেন। সিলেটজুড়ে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তাই এমন নিশ্চয়তার পালে হাওয়া যুগিয়েছিলো। দীর্ঘদিন নগরপিতার দায়িত্বে থেকেই জনপ্রিয়তার এ ভিত্তি তৈরি করে নিয়েছিলেন বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। তবে দেশের বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত যতদিন সামনে আছেন তাকে ডিঙিয়ে এ আসনে নির্বাচনের কথা ভাবতেই চান না কামরান। তাই গতবারের সংসদ নির্বাচনে দলের হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও পরে তা তুলে নেন তিনি। সেবার আবুল মাল আবদুল মুহিত নির্বাচনী লড়াইয়ে না থাকলে আওয়ামী লীগের টিকিটটা কামরানের পকেটেই জমা পড়তো। আর সে টিকিটটি পেলে সংসদ সদস্যদের তালিকায় ২২৯ নাম্বারে সিলেট-১ আসনে শোভা পেতো বদরউদ্দিন আহমদ কামরানেরই নাম। কারণ গত নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো দলের প্রার্থীই ছিল না।
সিলেট-১ আসন থেকে লড়াইয়ে নামার ইচ্ছে ছিল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজেরও। কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে থাকায় তৃণমূলে তার একটা ভালো যোগাযোগ তৈরি হয়েছিলো। সেটাই তার সবচেয়ে বড় পুঁজি। আর সে পুঁজির বলেই গেলো নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থিতা চেয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন তিনিও। আবুল মাল আবদুল মুহিতের ঘোষণায় তাই তার হৃদয়েও রক্তক্ষরণের কথা। তবে সে রক্তক্ষরণ তিনিও টের পেতে দিচ্ছেন না। সিলেট-১ আসনে অর্থমন্ত্রীর বিকল্প হিসেবে আগে থেকেই আলোচনায় ছিলেন বদরউদ্দিন আহমদ কামরান ও মিসবাহ সিরাজ। আর ছিলেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের প্রশাসকের দায়িত্ব পালনকারী বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আবদুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ান।
তবে জহির সুফিয়ানের মৃত্যুতে লড়াই সীমিত হয়ে পড়ে মূলত কামরান ও মিসবাহ সিরাজের মাঝেই। এরই মাঝে দৃশ্যপটে আবির্ভূত হন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন শেষে দেশে ফিরে আসা ড. আবদুল মোমেন। ২০১৫ সালের শেষের দিকে দেশে ফেরার পর অর্থমন্ত্রীর ছোট ভাই আবদুল মোমেন ধীরে ধীরে সরব হতে থাকেন রাজনীতিতে। হয়ে উঠেন সিলেট-১ আসনে লড়াইয়ের দাবিদারও। আবার লড়াই হয়ে উঠে ত্রিমুখী। তবে অর্থমন্ত্রীর ঘোষণার পর প্রদীপের সব আলো নিজের দিকেই টেনে নিলেন ড. আবুল কালাম আবদুল মোমেন।-সুত্র:মানবজমিন
১৫ জুন,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ