সিলেট: ভর দুপুর! তপ্ত রোদ আর অসহ্য গরম উপেক্ষা করে চলছিল খোঁজাখুঁজি। চলতিপথে কোনো শিশুর দেখা পেলে প্রথমে নাম জানতে চাওয়া, পরে পরম মমত্বে কাছে টেনে নেওয়া। নাম-ঠিকানা লিপিবদ্ধ করে বলে দেওয়া হচ্ছিল পথে নেমে এভাবে নাম সংগ্রহের কারণ। গতকাল বুধবার সিলেট রেলওয়ে স্টেশন এলাকা ঘুরে এভাবে পথে নেমে ১০০ জন পথশিশুর নাম সংগ্রহ করেন ফেসবুক ব্যবহারকারী কয়েকজন শিক্ষার্থী। তাঁদের উদ্দেশ্য সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ঈদের নতুন পোশাক দেওয়া। কাল শুক্রবার ১০০ শিশুকে নিয়ে তাঁরাও ইফতার করবেন। পরে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে ঈদের নতুন পোশাক।
যাঁরা এ কাজ করছিলেন, তাঁরা সবাই সিলেট নগরের বাসিন্দা। পড়াশোনা করছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে। ফেসবুক ব্যবহারের সুবাদে একটি ‘ইভেন্ট’-এর মাধ্যমে নিজেদের ও বন্ধুদের কাছ থেকে অর্থসহায়তা নিয়ে ১০০ পথশিশুকে ঈদে নতুন পোশাক দিতে এভাবেই পথে নেমে তালিকাভুক্ত করেছেন সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের নাম। প্রায় এক সপ্তাহ এভাবে খোঁজাখুঁজির কাজ তাঁরা সম্পন্ন করেছেন গতকাল। জানা গেল, দুই বছর ধরে পথশিশুদের খোঁজে ঈদের নতুন পোশাক দিচ্ছেন তাঁরা। শুরুটা হয়েছিল চারজন উদ্যোগী তরুণের মাধ্যমে। এঁরা হলেন সিলেটের মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী জাহান আহমদ, লিডিং ইউনিভার্সিটির মুসা আহমদ, মদনমোহন কলেজের এমদাদুল ইসলাম ও মিজানুর রহমান। ২০১৪ সালে পবিত্র ঈদুল ফিতর সামনে রেখে এ চারজন তাঁদের পরিবার থেকে ঈদ উপলক্ষে পাওয়া টাকা থেকে এক হাজার টাকা করে দিয়ে ৩০ জন পথশিশুর হাতে ঈদের নতুন পোশাক কিনে দেন।
তিন বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে এমন উদ্যোগ নেওয়া প্রসঙ্গে জাহান আহমদ জানালেন, গত বছরের পরই এবারের প্রস্তুতি শুরু হয় বড় পরিসরে। এ উদ্যোগে সম্পৃক্ত হন নতুন বন্ধুও। গঠন করা হয় ‘প্রত্যাশা ফাউন্ডেশন’। এতে এ পর্যন্ত ৭০ জন যুক্ত হলে তাঁদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে এবার ১০০ জন পথশিশুকে ঈদের পোশাক দিতে প্রস্তুত প্রত্যাশা। প্রত্যাশার সঙ্গে যুক্ত বিবিএর শিক্ষার্থী সৈয়দা ফাইরুজ জারিন বলেন, ‘আমরা পথে পথে ঘুরে যে পথশিশুদের সংগ্রহ করেছি, তাদের মধ্য থেকে বাছাই করে অন্তত পাঁচজন শিশুর উচ্চশিক্ষার খরচ বহন করার চিন্তাভাবনা করছি।’
ফেসবুকে প্রত্যাশার ইভেন্ট পেজে পাঁচজন সুবিধাবঞ্চিত শিশুর পড়াশোনার দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলা হয়েছে এভাবে ‘আসুন সবাই মিলে মানবতার পাশে দাঁড়াই, অসহায় শিশুর মুখে হাসি ফোটাই।’ এমনি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, ‘আমরা কত মিনিটে কত হাজার টাকা খরচ করে ফেলি তা আমাদের কোনো হিসাবেই থাকে না। হোটেলে গেলেই এক হাজার টাকা ব্যয় হয়। কেএফসিতে গেলে টাকার অঙ্ক হিসাবই থাকে না। একটি মোমের শিখায় হয়তো পুরো আঙিনা আলোকিত করতে পারব না...কিন্তু পাঁচটি মোমের প্রদীপ্ত আলোকে এ আঙিনা আলোকমেলায় উদ্ভাসিত করতে পারি...প্রাণে প্রাণে বইয়ে দিতে পারি পারি আলোকবন্যা...।-প্রথম আলো
৩০ জুন,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ