রবিবার, ০৭ আগস্ট, ২০১৬, ০২:৫৭:০১

ইলিয়াস পত্নী লোনা পারবেন তো?

ইলিয়াস পত্নী লোনা পারবেন তো?

রাহিব ফয়ছল, সিলেট প্রতিনিধি: বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হয়েছেন নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদি লুনা। তিনি কি পারবেন ইলিয়াস আলীর শূণ্যতা পূরণ করতে! এমটাই মনে করছেন ইলিয়াস আলীর নিজ জন্মভূমি সিলেটের মানুষ। তবে লুনাকে উপদেষ্টা করায় দলীয় নেতাকর্মীর পাশাপাশি এলাকাবাসীও অনেক খুশি।

তারা মনে করেন, ইলিয়াস আলী যেভাবে বিএনপি তথা সিলেটবাসীকে আন্তরিকভাবে ভালবাসতেন তেমনি লুনাও দলীয় নেতাকর্মী পাশাপাশি ভালবেসে যাবেন। তাহসিনা রুশদি লুনা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদার উপদেষ্ঠা হওয়ার খবর মূহুর্তের মধ্যে সারাজেলায় ছড়িয়ে পড়লে দলীয় নেতাকর্মীর মধ্যে প্রাণঞ্জলতা ফিরে এসেছে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেইসবুকে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করতে দেখা যায়।

জানা গেছে, ইলিয়াস আলী নিখোঁজের পর তার স্ত্রী তাহসিনা রুশদি লুনা ইলিয়াসের নির্বাচনী এলাকা বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরের বিএনপিকে আরও সুসংগঠিত করতে কেন্দ্র থেকে নির্দেশ পেয়ে লুনা দলীয় নেতাকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখেন। গত উপজেলা নির্বাচনে তাহসিনা রুশদি লুনার একান্ত প্রচেষ্ঠায় দলীয় সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিজয়ী হন।

সদ্য সমাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ইলিয়াসপত্নী তাহসিনা রুশদি লুনা দলীয় নেতাকর্মীর পক্ষ মাঠ চুষে বেড়ান। ইতিমধ্যে বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরে ইলিয়াসপত্নী লুনার উপস্থিতি বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তবে এখনও ওই তিন উপজেলায় পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। ইলিয়াস আলীর শূন্যতা পূরণ করতে পারবেন কি লুনা, কেবল এটা দেখার বিষয়।

তাহসিনা রুশদি লুনা।  যার সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি নিখোঁজ বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক,সাবেক সংসদ সদস্য ও সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম ইলিয়াস আলীর সুযোগ্য সহধর্মিনী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কুয়েত মৈত্রী হলের সাবেক এজি এস তাহসিনা রুশদি লুনা স্বামী ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর বাংলাদেশ রাজনীতিতে ব্যাপক পরিচিত লাভ করেন তিনি। তাহসিনা রুশদি লুনা সিলেটের বিশ্বনাথের গৃহবধু।

তাহসিনা রুশদি লুনা বলেন, ইলিয়াস আলীর শূণ্যতা কখনও পূরণ করা সম্ভব নয়। এটা যেমন আমার পক্ষেও নয়, তেমন আর কারো পক্ষে সম্ভব হওয়ার নয়। কারন তিনি ছিলেন একজন জাতীয় নেতা। তাকে দেশ-বিদেশের সকল পর্যায়ের মানুষ অন্যভাবে মূল্যয়ন করে আসছিল। তার শূণতা কখনও পূরণ হওয়ার নয়। তিনি (ইলিয়াস আলী) নিখোঁজ রয়েছেন, এখন তার ফিরে আসার অপেক্ষার প্রহর গুণছেন হাজার হাজার মানুষ। তিনি বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্ঠা হওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন ইলিয়াস আলী। কিন্তু আজও তাঁর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। অনেক বার প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি,কিন্তু এতে কোনো লাভ হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে কোনো সাড়াও পাইনি। এর আগে ২০১২ সালের ২ মে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করেছিলাম। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) ইলিয়াস আলীকে উদ্ধার করার আশ্বাস দেন। কিন্তু এখনও ইলিয়াস আলীকে ফিরে না পেয়ে হতাশায় ভুগছি।

লুনা বলেন, সরকার আন্তরিক হলে ইলিয়াসকে খোঁজে পাওয়া সম্ভব। কেননা গুম-নিখোঁজ হওয়ায় অনেক ব্যক্তি তাদের পরিবারের কাছে ফিরে এসেছেন। আমরাও বিশ্বাস করি ইলিয়াস আলী ফিরে আসবেন! আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ইলিয়াসের অপেক্ষায় থাকব। তিনি এখনও মনে করেন তার স্বামী বেঁেচ আছেন, পরিবারের মাঝে আবার ফিরে আসবে? এখন শুধু আল্লাহর ওপর ভরসা করে ইলিয়াস ফিরে আসার পথে চেয়ে রয়েছেন তিনি।

লুনা আরও বলেন, ইচ্ছা থাকা সত্তেও চাকুরি ও সন্তানের লেখা-পড়ার কারণে স্বামীর বাড়ি রামধানায় আসা হয় কম। ইলিয়াস আলীর নিজ এলাকায় বিএনপি অধিক শক্তিশালী ও সুসংগঠিত। ইলিয়াস আলীর ভালবাসার কারণে এলাকার অসংখ্য নেতাকর্মী নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। মাঝে মাঝে তাদের প্রতি সমবেদনা জানাতে বিশ্বনাথে স্বামীর বাড়িতে আসা হয়।

ইলিয়াস নিখোঁজ আন্দোলন প্রসঙ্গে তাহসিনা রুশদি লুনা বলেন, ইলিয়াস আলী নিখোঁজের পর সারা দেশের ন্যায় তাঁর জন্মস্থান সিলেটবাসী ইলিয়াস সন্ধান দাবি দলমত নির্বিশেষে সকল শ্রেনী পেশার মানুষ রাস্তা নেমে আসে। ২০১২ সালের ২৩ এপ্রিল সিলেটের বিশ্বনাথে ইলিয়াস সন্ধান আন্দোলন করতে গিয়ে তিনজন প্রাণ দিয়েছে। অসংখ্য বিএনপি নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা দেয়া হয়েছে। কারাববণ করেছেন কয়েকশত নেতা। সেইদিন দেশবাসীকে জানিয়েছিলেন ইলিয়াসকে বিশ্বনাথবাসী কত ভালবাসেন। যা গোটা বাংলাদেশে নতুন এক ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল। হত্যা-হামলা-মামলা অনেক নির্যাতন করেও ইলিয়াস নিখোঁজ আন্দোলন দমন করা সম্ভব হয়নি। সিলেটে এখন তাঁর সন্ধান আন্দোলন অব্যাহত রয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন।

তিনি বলেন, বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরে প্রতিটি ঘরে ঘরে ইলিয়াস আলী তার সৈনিক তৈরি করে রেখে গেছেন। তিনি বিএনপি নেতাকর্মীদের বিএনপির আর্দশে লালিত হওয়ার ট্রেনিং দিয়ে গেছেন। তার প্রমাণ বিশ্বনাথবাসী ইলিয়াস আলী গুমের পর দেখিয়েছেন। ইলিয়াস আলী নিখোঁজের পর বিশ্বনাথে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। সেই আন্দোলনে আমাদের তিন ভাই প্রাণ দিয়েছিল। বাংলাদেশে ইতিহাসে এটা বিরল। সে কারণে বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বনাথ উপজেলাকে অন্য ভাবে দেখে, অন্যভাবে মূল্যয়ন করে। কারণ এটা ইলিয়াস আলীর এলাকা।
০৭ আগস্ট, ২০‌১৬/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে