শনিবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০১৫, ১০:৩৪:০৯

আনন্দ-বিষাদের মিলন মেলা

আনন্দ-বিষাদের মিলন মেলা

ফরিদুল ইসলাম (রঞ্জু), ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: দু’পাশে দুই দেশের নাগরিক, মাঝে কাঁটাতারের বেড়া, দু’দেশের নাগরিকেরই চোখে জল। কাঁটাতারের বেড়া হয়তো আটকাতে পারে এক অপরের আলিঙ্গন।কিন্তু আঁটকাতে পারেনি চোখের অশ্রু। ঠাকুরগাঁওয়ে কোচল ও হরিপুর চাপসা সীমান্তে ভারত ও বাংলাদেশের ৪ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়। প্রতি বছর পাথর কালীর মেলা বিজিবি ও বিএসএফের সম্মতিতে পাসপোর্ট ভিসা ছাড়াই এই সুযোগের সৃষ্টি হয়। কাঁটাতারের বেড়া তাদের আলাদা করে রাখলেও আবেগ পৌঁছে যায় দেশকালের সীমানা ওপারে। শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৬টা পর্যন্ত চলে এই মিলন মেলা। সীমান্ত এলাকার স্থানীয়রা জানান, ভোর থেকে দুই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষেরা এসে জড়ো হয় সীমান্তে, দীর্ঘদিন ধরে বিচ্ছিন্ন থাকায় একে অপরের সঙ্গে মিলিত হবার এ সুযোগ হাত ছাড়া করতে চায় না কেউ। প্রতি বছর ২’দেশের স্বজনদের মিলন মেলায় পরিণত হয় এ জায়গা। ২’দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা যেসকল সাধারণ মানুষ টাকা পয়সার অভাবে পাসপোর্ট ভিসা করতে পারেন না তারা এই দিনটির অপেক্ষয় থাকে। সারা বছর দু’দেশের মানুষ অপেক্ষা করে এই দিনটির জন্য। ভারতীয় অধিবাসীরা কাঁটাতারের পাশে এলে সেখানে বাংলাদেশের ও লাখো নারী পুরুষ সমবেত হয়। বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও,পঞ্চগড়, দিনাজপুর, রংপুর এবং ভারতের কোচবিহার, আসাম, দার্জিলিং, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, কলকাতা সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বাই সাইকেল, অটোরিক্সা, মাইক্রোবাস, মিনিবাস যোগে মেলা স্থলে এসে হাজির হন তারা। মেলায় আসা হামিদ নামের একজনের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ১০ বছর পর ছোট ভাইকে দেখে চোখে যেন আনন্দ বাঁধ মানছিল না, সে থাকেন ভারতের জলপাইগুরি জেলার রায়গঞ্জ থানায়। হাজারো মানুষ কথা বলেছে এই দিনে তাদের প্রিয় স্বজনদের সাথে। ২’দেশের সীমারেখা কাটাতার দিয়ে আলাদা করা হলেও আলাদা করা যায়নি তাদের ভালবাসার টান,আত্মার টান। দীর্ঘদিন দুরে থাকা,দেখা হওয়ায় কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে অনেকে। আবার কেউ প্রিয়জনের দেখা না পেয়ে বাড়ি ফেরে নিরাশ হয়ে, যেতে হয় চোখের পানি নিয়ে। শাপলা নামের এক মহিলা বলেন ৫ বছর পর ভাইয়ের দেখা পেলাম একে অপরকে জড়িয়ে ধরার ইচ্ছা থাকলেও পারছিনা ধরতে। বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মাঝখানে কাঁটাতারের বেড়া। পাথর কালীর মেলার সভাপতি নগেন কুমার পাল বলেন, হরিপুর উপজেলার অধিকাংশ এলাকা পাকিস্তান-ভারত বিভক্তির আগে ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার অধীনে ছিল। এ কারনে দেশ বিভাগের পর আত্মীয় স্বজনেরা দুই দেশে ছড়িয়ে পড়ে । তাই সারা বছর এদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করতে পারেনা। অপেক্ষা করে থাকে পাথর কালির মেলার জন্য। ৫ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে