ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনয়ন পেতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। শেষ মুহূর্তে এসে এখন প্রার্থিতা নিশ্চিত করতে লবিং-তদবির-দৌড়ঝাঁপ ও দেনদরবারে ব্যস্ত তারা।
ঠাকুরগাঁও-১ আসনে ধানের শীষ মার্কা ইতিমধ্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একক প্রার্থী হিসেবে মনোনীত সেটি দলীয় সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
অন্যদিকে নৌকায় মনোনয়ন পেতে আওয়ামী লীগ থেকে ঠাকুরগাঁও-১ আসনে মনোনয়ন ক্রয় ও জমা দিয়েছেন ১৪ জন।
বিভিন্ন মিডিয়ায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন তালিকায় ইতিমধ্যে রংপুর বিভাগের আসনগুলো প্রার্থী চূড়ান্ত করার তালিকায় প্রকাশ করেছেন। এর মধ্যে ঠাকুরগাঁও-১ আসনে বর্তমান সাংসদ রমেশ চন্দ্র সেনের নামও রয়েছে।
এ আসনটিতে এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরিবর্তনের আশায় ছিল তৃণমূল থেকে জেলা আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতাকর্মী। মিডিয়ায় ঠাকুরগাঁও-১ আসনের নৌকার প্রার্থী রমেশ চন্দ্র সেনের নাম থাকায় আওয়ামী লীগের কর্মীদের মধ্য চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সোমবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত তালিকা মনগড়া দাবি করে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জোটগতভাবেই দলের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। মনোনয়ন নিয়ে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত তালিকা মনগড়া। এগুলো অবাস্তব ও সম্মত ভিত্তি নেই।’
এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রীসহ প্রায় ৫০ জন এমপি মনোনয়ন থেকে বাদ পড়েছেন তা বিভিন্ন সূত্র জানা গেছে।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক ঠাকুরগাঁওয়ের এক মনোনয়নপ্রত্যাশী বলেন, দলের সভানেত্রী সাক্ষাৎকার গ্রহণের সময় বলেছেন ‘পুরনোদের বিদায় না করলে কীভাবে নতুনরা স্থান পাবে? বাদপড়াদের তালিকায় কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রিসভার সদস্যও আছেন।’ তাই যাকে নৌকা মার্কা দিয়ে পাঠাব তাকেই জয়ী করে আনতে হবে।
তাই নৌকাকে আবারও বিজয়ী করার লক্ষ্যে ঠাকুরগাঁও-১ আসনে নতুন নৌকার মাঝি হিসেবে প্রয়াত এমপি খাদেমুল ইসলামের ছেলে ছাত্রলীগ নেতা সাহেদুল ইসলাম সাহেদকে গুরুত্ব দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতারা।
ঠাকুরগাঁও-১ আসনে ১৪ মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে তরুণ ও যোগ্য প্রার্থী হিসেবে প্রয়াত এমপি খাদেমুল ইসলামের ছেলে সাহেদের নাম প্রাধান্য পাচ্ছে। সাহেদুল ইসলাম সাহেদ নতুন প্রার্থী হিসেবে নৌকা মার্কা পেলে বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে হারানো সম্ভব বলে বেশিরভাগ আওয়ামী লীগ ও সাধারণ ভোটারও মনে করছেন।
স্থানীয় কয়েকজন প্রবীণ রাজনৈতিক জানান, বর্তমান এমপি রমেশ সেনের অবদান রয়েছে এ সরকারের উন্নয়ন ক্ষেত্রে। যেহেতু উনি দলের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে একজন। তাই ঠাকুরগাঁওয়ের একসময়ের উন্নয়নের রূপকার ও জনমানুষের বন্ধু প্রয়াত এমপি খাদেমুল ইসলাম যেভাবে আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করেছিলেন, তা এখনও মানুষ মনে রেখেছে।
তার ছেলে সাহেদুল ইসলাম একজন শিক্ষিত ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। আমরা আশাবাদী, দলের সভানেত্রী তাকে নৌকা মার্কায় মনোনয়ন দিলে তিনি তার বাবার অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করতে পারবেন।
অন্যদিকে বিএনপিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ আসনটি পুনরুদ্ধার করতে চান এবার।
ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমান বলেন, ‘বিএনপির মহাসচিব আমাদের অভিভাবক। এ আসনে তার কোনো বিকল্প নেই। সুষ্ঠু ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হবেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর যে জুলুম নির্যাতন নেমে আসে, সেই রোষানল থেকে খাদেমুল ইসলাম মুক্তি পাননি। তাকে ১০ মাস কারাগারে রাখা হয় ।
জেল থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি আওয়ামী রাজনীতির সবচেয়ে সংকটাপন্ন সময়ে ঠাকুরগাঁও মহকুমা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করে দলকে সংগঠিত করেন। এরই ধারাবাহিকতায় পরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি নির্বাচিত হন।
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সফলভাবে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৮৬, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে ঠাকুরগাও-১ আসন থেকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
অবশেষে ১৯৯৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর সংসদ সদস্য থাকাকালীন হৃদযন্ত্রের ক্রীড়া বন্ধ হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এ জননেতা।
পরে উপনির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান এমপি রমেশ চন্দ্র সেন নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হোন। প্রয়াত খাদেমুল ইসলামের সঙ্গে নির্বাচনে সবসময় হেরেছেন বিএনপির প্রার্থী মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সর্বশেষ ২০০১ সালে বর্তমান এমপি রমেশ চন্দ্র সেনকে হারিয়ে মির্জা ফখরুল এ আসনে এমপি নির্বাচিত হোন।
খাদেমুল ইসলামের মৃত্যুর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে সদ্য এমএ পাস করা সাহেদুল ইসলামকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপানে বাংলাদেশি হাইকমিশনের কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেন।-যুগান্তর