আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ‘খুন হয়ে যাওয়া’র ১৪ দিন পরে নাটকীয়ভাবে বাড়ি ফিরে এল কিশোর। শুক্রবার হাওড়ার সাঁকরাইল থানার নলপুর এলাকার এই ঘটনাকে ঘিরে রীতিমতো হুলস্থূল পড়ে যায়। তবে, ফিরে আসা কিশোর, দশম শ্রেণীর ছাত্র ইনামুল পুরকাইত (১৬) অসুস্থ হয়ে পড়ায় তার সঙ্গে এখনও কথা বলতে পারেনি পুলিস। ২৮ জুলাই নলপুরের পশ্চিম রঘুদেববাটী গ্রামের বাসিন্দা ইনামুলকে তার পাড়ারই বন্ধু মহিম মিদ্দে (১৭) ত্রিকোণ প্রেমের জেরে খুন করেছিল বলে অভিযোগ ওঠে।
ইনামুল বাড়ি ফিরে না আসায় পরের দিন তার বাড়ির লোকজন এবং প্রতিবেশীরা মহিমকে চেপে ধরেন। যেদিন মহিমের সঙ্গে ইনামুলকে এলাকার লোকজন শেষ দেখেছিলেন, এই দাবি করে তার দিকেই ইনামুলকে খুন করার অভিযোগ তোলা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের চাপে এবং মারের জেরে সেই সময় মহিম খুনের কথা স্বীকার করে জানায়, ত্রিকোণ প্রেমের জেরে যে ইনামুলকে খুন করে গঙ্গায় ভাসিয়ে দিয়েছে। সেদিন তারা রাজগঞ্জ নর্থ মিলের পেছনে যায়। যেখানে ইনামুলকে প্রচুর মদ্যপান করিয়ে বেঁহুশ করে দেয়।
এরপর গলা টিপে খুন করে ইনামুলকে গঙ্গার জলে ফেলে দেয় সে। ত্রিকোণ প্রেমের জেরে প্রতিশোধ নিতেই এমনটা করেছিল মহিম, পুলিসি জেরায় সে একথাই জানায়। তার পরই তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিস।
এরপর টানা দুদিন ইনামুলের দেহ উদ্ধারের জন্য গঙ্গায় তন্ন তন্ন করে তল্লাশিও চালানো হয়। কিন্তু তার দেহ পাওয়া যায়নি। যদিও মহিমের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে বন্ধুকে খুনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে তাকে হোমে পাঠানো হয়।
এদিকে ১৪ দিন পরে শুক্রবার সকালে এই ঘটনার নাটকীয় মোড় নেয়। এদিন নলপুর স্টেশনে ইনামুলের পিসি নিজানি খাতুন তাকে বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখতে পান। নিজানি উলুবেড়িয়া থেকে ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন।
নলপুর স্টেশনে তাঁকে দেখতে পেয়েই পিসি বলে ডেকে ওঠেন ইনামুল। চেনা গলা শুনে থমকে দাঁড়িয়ে পড়েন নিজানি। ঘুরে দেখে তাজ্জব হয়ে যান তিনি। তখন যেন নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছেন না।
নিজানি দেখেন, কোনওমতে খোঁড়াতে খোঁড়াতে তার দিকে এগিয়ে আসছে ইনামুল। তার অবস্থা একেবারে বিধ্বস্ত। এই ক’দিন একেবারে হাড় জিরজিরে রোগা হয়ে গেছে। ভাল করে কথাও বলতে পারছে না। তার সারা শরীরে সুচ ফোটানোর দাগ। তাকে দেখে অবাক পিসি নিজানি। তাকে প্রথমে বাউড়িয়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল ও পরে উলুবেড়িয়া ই এস আই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
উলুবেড়িয়ার মানসিক রোগের এক ডাক্তারের কাছে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। সে ‘মেন্টালি ট্রমাটাইজড’। সন্ধেয় তাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। যদিও ইনামুল এখনও বিস্তর অসংলগ্ন কথাবার্তা বলে চলেছে।
সাংবাদিকদের জানায়, তাকে কোনও মারধর করা হয়নি। সে কলকাতায় কোথাও ছিল। সেখান থেকে কোনওভাবে এদিন সকালে হাওড়া স্টেশনে আসে। এরপর ট্রেনে নলপুর। সেখানেই পিসির সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। কিছুই তার মনে পড়ছে না। মাঝে মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
নিজানি খাতুন জানান,‘স্টেশনে ইনামুলের পাশে আরও দুটি ছেলে ছিল। আমাকে দেখেই তারা পালিয়ে যায়। চিনতে পারিনি।’ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন ইনামুলের বাড়ির লোকেরা। তার মা
আরজিনা বেগম বলেন,‘ওকে যে আর ফিরে পাব তা কল্পনাও করতে পারিনি। হাওড়ার পুলিস সুপার (গ্রামীণ) সুকেশ জৈন জানান, ইনামুল একটু সুস্থ হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এই ঘটনায় ধৃত মহিমের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে।-আজকাল
১৩ আগস্ট, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ