শনিবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৬, ০১:৩১:৪৪

পশ্চিমাদের কপালে ভাঁজ

 পশ্চিমাদের কপালে ভাঁজ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ও ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপিমস্কো-আঙ্কারার মধ্যে সম্পর্ক আকস্মিকভাবে নতুন মোড় নিয়েছে। দুই দেশের সম্পর্কের এই মোড়ে পশ্চিমাদের কপালে ভাঁজ পড়েছে।

গত ১৫ জুলাই তুরস্কে ব্যর্থ অভ্যুত্থানচেষ্টা হয়। ওই ঘটনার পর তুরস্কের অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্রনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন লক্ষ করা যায়।

অভ্যুত্থানচেষ্টা-পরবর্তী সময়ে তুরস্কের ক্ষমতাসীন সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) শীতল সম্পর্ক চলছে।

ব্যর্থ অভ্যুত্থানের হোতাদের পশ্চিমা দেশগুলো সমর্থন দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। তাঁর এই অভিযোগ গুরুতর। এমন পরিস্থিতিতে পশ্চিমাদের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্ক একটা পরীক্ষার মধ্যে পড়েছে।

অভ্যুত্থানচেষ্টার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত তুর্কি ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লা গুলেনকে দায়ী করছে তুরস্ক। তাঁকে ফেরত দেওয়ার জন্য ওয়াশিংটনকে চাপ দিয়ে যাচ্ছে আঙ্কারা। শুধু চাপ নয়, তারা ওয়াশিংটনকে রীতিমতো শাসিয়েছে।

নিছক অভিযোগ নয়, অকাট্য তথ্য-প্রমাণ ছাড়া কথা না বলতে তুরস্কের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

সেনা অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার পর দেশের নিরাপত্তা বাহিনী থেকে শুরু করে সর্বত্র ব্যাপক শুদ্ধি অভিযান চালাচ্ছেন এরদোয়ান। তাঁর কথিত এই শুদ্ধি অভিযানের বিষয়ে পশ্চিমা দেশগুলো সমালোচনা করছে।

পশ্চিমাদের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ এরদোয়ান। তিনি বলেছেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে পশ্চিমারা সন্ত্রাসী ও অভ্যুত্থানের হোতাদের পক্ষাবলম্বন করছে। অথচ তাদের আমরা বন্ধু মনে করেছিলাম।’

অভ্যুত্থানের পর সম্প্রতি প্রথম বিদেশ সফর করেন এরদোয়ান। সফরের জন্য তিনি রাশিয়াকে বেছে নেন। তাঁর এই সিদ্ধান্ত পশ্চিমাদের ভাবনায় ফেলে। তারা এরদোয়ানের সফরের দিকে গভীর মনোযোগ দিয়ে নজর রাখে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এরদোয়ানের রাশিয়া সফর বেশ গুরুত্ব পায়। সফরের নানা দিক নিয়ে চলে বিচার-বিশ্লেষণ।

১৫ জুলাইয়ের আগেও তুরস্কের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক এমনটা ছিল না। গত বছরের নভেম্বরে সিরিয়া-তুরস্ক সীমান্তে তুর্কি বাহিনীর গুলিতে রুশ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হলে মস্কো-আঙ্কারার মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। তীব্র বাগ্যুদ্ধে নেমে পড়ে দুই দেশ। একপর্যায়ে তুরস্কের ওপর অবরোধ পর্যন্ত আরোপ করে রাশিয়া। পরে তুরস্ক নরম হয়। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন এরদোয়ান। এরপর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের বরফ কিছুটা গলে।

ব্যর্থ অভ্যুত্থানচেষ্টার পর আঙ্কারার প্রতি সমর্থন দেয় ক্রেমলিন। এতে এরদোয়ান খুশি হন। পশ্চিমারা যখন সমালোচনায় মুখর, তখন এরদোয়ানের শুদ্ধি অভিযানের ব্যাপারে মস্কো নিশ্চুপ। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে ক্রেমলিনমুখী তুর্কি প্রেসিডেন্ট।

সেন্ট পিটার্সবার্গে পুতিনকে ‘প্রিয় বন্ধু’ বলে সম্বোধন করেছেন এরদোয়ান।

‘কঠিন পরিস্থিতিতে’ এরদোয়ানের রাশিয়া সফরের প্রশংসা করেছেন পুতিন। তিনি বলেছেন, তুর্কি প্রেসিডেন্টের এই সফর দুই দেশের সম্পর্ক পুনঃস্থাপনেরই ইঙ্গিত।

পুতিনকে ধন্যবাদ জানিয়ে এরদোয়ান বলেছেন, দুই দেশের সম্পর্ক এখন ‘খুব অন্য রকম পর্যায়ে’ প্রবেশ করেছে। তাঁর এই সফর এক ‘নতুন মাইলফলক’।

ভূরাজনীতিসহ নানা কারণে তুরস্ককে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে পশ্চিমারা। এই প্রেক্ষাপটে পুতিন-এরদোয়ানের দৃঢ় করমর্দন এবং হাস্যোজ্জ্বল মুখ—পশ্চিমাদের জন্য নিঃসন্দেহে অন্তর্দহনের কারণ হয়ে উঠেছে। বিবিসি অবলম্বনে প্রথম আলো
১৩ আগস্ট,২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে