আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল সাড়ে এগারোটা৷ ভারতের মুম্বাইগামী বিমানটি সবেমাত্র কলকাতার রানওয়ে থেকে উড়তে শুরু করেছে৷
১৪৪টি আসনবিশিষ্ট বেসরকারি বিমান সংস্থার প্রত্যেকটি আসনেই বসা যাত্রীদের কেউ তখন কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনছেন৷ আবার কেউ মগ্ন গল্পের বইয়ে৷
বিমানটি ৫০০ মিটার উঁচুতে উঠতেই বিপত্তি৷ আচমকা চিত্কার শুরু দেন মাঝখানে বসা এক যাত্রী৷ সন্দীপ দাঁ নামের ওই যাত্রী চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘এ বিমানে আমি যাব না, বিমানে গণ্ডগোল রয়েছে’৷
যাত্রীর এমন চিত্কার কানে পৌঁছতেই ছুটে আসেন কর্মীরা৷ বোঝাতে থাকেন, বিমানে কোনো সমস্যা নেই৷ দয়া করে আতঙ্কিত হবেন না৷
তবে বিমানের কর্মীদের আশ্বাসবাণী কানে না তুলে নিজের বক্তব্যেই অবিচল থাকেন সন্দীপ৷ তিনি বলতে থাকেন, বিমান দমদম বিমানবন্দরে অবতরণ করাতে হবে৷
হুঁশিয়ারি দেন, বিমান গন্তব্যের পথে যেতে গিয়ে তার কোনো ক্ষতি হলে তার দায় নিতে হবে বিমানসংস্থাকে৷
যাত্রীর চেঁচামেচিতে বাধ্য হয়েই কলকাতা বিমানবন্দরের এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন বিমানচালক৷ দু'তরফে বক্তব্য শেষে ঠিক হয়, বিমানটি দমদমে অবতরণ করাতে৷
পাইলট জানান, মিনিট পনেরর মধ্যে তিনি দমদম বিমানবন্দরের রানওয়েতে বিমানটি অবতরণ করাতে পারবেন৷ পাইলটের বার্তা পেয়েই প্রস্ত্ততি শুরু হয়ে যায় বিমানবন্দরে৷
ওই যাত্রীর কথামতো আদৌ বিমানে কোনো ত্রুটি রয়েছে কি-না তা দেখতে রানওয়েতে ছুটে আসে দমকল, বিপর্যয় মোকাবেলা বাহিনীর টিম৷
ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছেন নিরাপত্তাকর্মীরাও৷ বিমানটি কলকাতার মাটি ছুঁতেই কর্মকর্তারা ওই বিমানটি পরীক্ষা করে দেখেন তাতে কোনো ত্রুটি নেই৷
এরপরই সন্দীপ দাম নামে ওই ব্যক্তি কেন এ রকম করলেন তা জানতে চান সিআইএসএফের কর্মকর্তারা৷
বক্তব্যে অসঙ্গতি মেলায় তাঁকে বিমানবন্দর থানা পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়৷ পুরো ঘটনাটি জানাজানি হতেই ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সহযাত্রীদের মধ্যে৷
যদিও কিছুক্ষণের মধ্যেই বিমান সংস্থাটি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে৷ দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ ফের মুম্বাইয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় বিমানটি৷
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, মধ্য কলকাতার বাসিন্দা সন্দীপ মুম্বাইয়ে একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত৷ তবে কেন তিনি এমন আচরণ করলেন তা নিয়ে হতবাক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষও৷
কর্মকর্তা অতুল দীক্ষিত জানিয়েছেন, ঘটনার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট না পেলে বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে পারব না৷ বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দাপ্রধান কঙ্করপ্রসাদ বারুই জানিয়েছেন, সন্দীপ দাঁ নামে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে৷ কেন তিনি এমন কাণ্ড ঘটালেন তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে৷
ওই বিমানসংস্থার জনসংযোগ কর্মকর্তা অসীমা ভার্মা বলেন, অন্য যাত্রীদের সুরক্ষার কথা ভেবেই পাইলট বিমানটির উড়ান স্থগিত করে দেন৷
ওই যাত্রীকে বিমান থেকে নামিয়ে তার মালপত্র কলকাতা বিমানবন্দরে থাকা পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে জানা গেছে৷
১৯ আগস্ট, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম