আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুরের নিচাগোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দাদের সকলেই জন্মসূত্রে ভারতীয় নাগরিক। বড়দের সকলের রয়েছে রেশনকার্ড ও সচিত্র পরিচয়পত্র। কিন্তু সেই নাগরিকত্বের কদর শুধুমাত্র নির্বাচনের সময়ে। ওঁরা জানেন, ভোটাধিকারের আগের মুহূর্ত পর্যন্ত তাঁদের জামাই আদর আর প্রতিশ্রুতি আসলে মিছে স্বপ্ন দেখানো ছাড়া কিছুই নয়। তাই স্বাধীনতার ৭০ বছর পরেও দেশের শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য চালু স্বাক্ষরতা-সহ সমস্ত প্রকল্প থেকে বঞ্চিত ভারত ভূখণ্ডের এই গ্রামের মানুষ।
ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করতে যেতে হয় সীমান্তের ওপারে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতকেই নিজেদের বলে জানে সকলে। জাতীয় সঙ্গীতের কথা জিজ্ঞেস করলেই ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি...’ শুনিয়ে দেয় তারা।
বাংলাদেশ সীমান্তের জিরো পয়েন্ট লাগোয়া এই গ্রামটির কাছাকাছি কোনও স্কুল না-থাকায় এখানকার ছেলেমেয়েদের বেশির ভাগই পড়াশোনা শিখতে যায় বাংলাদেশের বিরামপুর থানার চণ্ডীপুর ও কাটলা এলাকার স্কুল অথবা মাদ্রাসায়। বাংলাদেশের স্কুলে পড়াশোনার সুবাদে ওই সব ছেলেমেয়েরা স্বদেশের জাতীয় সঙ্গীত ‘জনগণমন...’ ভুলে ওপারের ‘আমার সোনার বাংলা’কেই নিজেদের জাতীয় সঙ্গীত বলে জানে।
প্রশাসন হিলি ব্লকের ধলপাড়া পঞ্চায়েতের এই গ্রামটির শিশুদের শিক্ষার উন্নয়নের কোনও উদ্যোগ সেভাবে নেয়নি বলে অভিযোগ। স্বাধীনতার ৫৮ বছর পরে ২০০৫ সাল নাগাদ নিচাগোবিন্দপুর গ্রামে একটি শিশু শিক্ষাকেন্দ্র চালু হয়েছিল। কিন্তু তার পরে আর কেউ খোঁজখবর নেয়নি। সেই সময়ে স্কুলটির নিজস্ব কোনও বাড়ি না-থাকায় গ্রামের মধ্যে বাঁশঝাড়ের নীচে বসেই বাচ্চারা লেখাপড়া শিখত।
কচিকাঁচাদের অসহায় অবস্থা দেখে গ্রামেরই আফাজ মোল্লা স্কুল তৈরির জন্য জমিও দান করেছিলেন। বছর তিনেক আগে ধলপাড়া পঞ্চায়েতের উদ্যোগে সেই জমিতে স্কুল বিল্ডিং তৈরি হয়। সেই বিল্ডিং-এ পঠনপাঠন শুরুও হয়। কিন্তু শিক্ষকরা কোনও সাম্মানিক না-পাওয়ায় কয়েক মাসের মধ্যে তা বন্ধও হয়ে যায়। এর পরে আর কিছু করেনি প্রশাসন।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি ললিতা টিগ্গা জানিয়েছেন, স্কুলের অভাবে শিশুরা বাংলাদেশে পড়াশোনা করতে যায় এমন কোনও খবর তাঁর জানা নেই। তবে তিনি জানিয়েছেন, নিচাগোবিন্দপুর গ্রামে শিশুশিক্ষা কেন্দ্রটি কেন বন্ধ হয়ে রয়েছে সে সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে তিনি তা পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নেবেন। -এবেলা।
০৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম