শুক্রবার, ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:৫২:১৪

রোগী সেজে ‘দালাল’ ধরবে ভারতীয় পুলিশ

রোগী সেজে ‘দালাল’ ধরবে ভারতীয় পুলিশ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : এবার রোগী সেজে দালাল ধরবে পুলিশ। পিজি হাসপাতালের দালালচক্র ভাঙতে এই অভিনব উদ্যোগ নেওয়া হল। গত তিনদিনে বেশ কয়েকজন দালাল ধরা পড়েছে পিজিতে। এদিনও একজনকে গ্রেফতার করেছে ভবানীপুর থানার পুলিশ।

টাকার বিনিময়ে বেড পাইয়ে দেওয়া, এমআরআই-সিটি স্ক্যান, ডায়ালিসিসের তারিখ এগিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা বারবার ঘটছে পিজিতে৷ রোগীদের একাংশের অন্তত তেমনই অভিযোগ।

সম্প্রতি জুনিয়র ডাক্তাররাও এই অভিযোগ সামনে রেখে দালালচক্র ভাঙার দাবি তোলেন৷ ঘেরাও করেন অধিকর্তা ডা. মঞ্জু বন্দ্যোপাধ্যায়কে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি পিজিতে গিয়ে ‘দালালচক্র’ ভাঙার নির্দেশ দেন। তার পরই নড়েচড়ে বসে পিজি কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসন। রাতারাতি বন্ধ করে দেওয়া হয় রাজনৈতিক দল নির্বিশেষে সমস্ত কর্মী সংগঠনের অফিস। বন্ধ করা হয় রোগী সহায়তা কেন্দ্রের নামে চলা অফিসটিও৷ এগুলো থেকেই দালালচক্র অক্সিজেন পেত বলে অভিযোগ৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও দালালরাজ বন্ধ হয়নি৷ গত তিনদিনে বেশ কয়েকজন দালাল ধরা পড়ে পিজি থেকে৷ এবার তাই নতুন কায়দায় দালাল ধরার অভিযান শুরুর প্রস্তুতি নিতে শুরু করল পুলিশ৷ সিলমোহর দিল রোগী কল্যাণ সমিতি।

এদিন পিজির অ্যাকাডেমি বিল্ডিংয়ে রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠক হয়৷ নেতৃত্বে ছিলেন চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের পূর্ত, যুবকল্যাণ ও ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। উপস্থিত ছিলেন ডিসি (দক্ষিণ) মুরলীধর শর্মা। হাসপাতাল সূত্রের খবর, এদিনের বৈঠকে মুরলীধরকে অরূপবাবুই রোগী সেজে দালাল ধরার পরামর্শ দেন।

প্রস্তাবটি সঙ্গে সঙ্গে গৃহীত হয়৷ ঠিক হয়, আগামী সপ্তাহ থেকেই রোগীর ছদ্মবেশে পুলিশ পিজির এমার্জেন্সিতে বা বহির্বিভাগে ঢুকবে৷ তার পর শুরু করবে ‘নাটক’৷ সাদা পোশাকের পুলিশও মোতায়েন করা হচ্ছে পিজিতে৷ বদলানো হচ্ছে নিরাপত্তারক্ষী সরবরাহের দায়িত্বে থাকা বেসরকারি এজেন্সিও৷ জানা গিয়েছে, নবান্নেও এই এজেন্সিই কাজ করে৷ বাড়ানো হচ্ছে পুলিশের সংখ্যা৷ এমার্জেন্সি-সহ স্পর্শকাতর জায়গাগুলিতে দু’শোরও বেশি পুলিশ নিয়োগ করা হবে।

এদিন রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকের পর অ্যাকাডেমি বিল্ডিংয়ের বাইরে দাঁড়িয়েও মুরলীধরের সঙ্গে একান্তে কথা বলেন অরূপবাবু। তাড়াতাড়ি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা বলেন৷ জানা গিয়েছে, বন্ধ হয়ে যাওয়া কর্মচারী সংগঠনের অফিসগুলি পুলিশ ও বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীরা ব্যবহার করবে।

আরকেএসের সাফ যুক্তি, সংগঠন করাতে সমস্যা নেই৷ কিন্তু অফিসের নাম করে ঘর আটকে রাখা চলবে না। পরে অধিকর্তা ডা. মঞ্জু বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, দালালরাজ বন্ধ করার জন্য কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ বিশেষভাবে তৎপর হয়েছে৷ প্রতিদিনই দু’-তিনজন করে দালাল ধরা পড়ছে। দালালরাজ ভাঙতে বেআইনি পার্কিং বন্ধ করারও উদ্যোগ নিচেছ পিজি।

পিজির আধিকারিক, ডাক্তার ও নার্সদের গাড়ির জন্য চালু হচ্ছে বিশেষ ‘স্টিকার’৷ অন্য কোনও গাড়ি ঢুকতে পারবে না ভিতরে৷ দীর্ঘ সময় অ্যাম্বুল্যান্স রাখাও চলবে না৷ রোগীদের অবশ্য ছাড় থাকছে৷ পিজির এক আধিকারিক জানালেন, অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের সাহায্যেই দালালরা পিজিতে ‘অপারেট’ করে৷ স্টিকার চালু হলে এই সমস্যা মিটবে।

এছাড়াও আইভিএফ ক্লিনিক চালু করা-সহ অনেক বিষয় নিয়ে এদিনের বৈঠকে আলোচনা হয়৷ অরূপবাবু জানতে চান, কেন নিউরোসার্জারি ও কার্ডিও-থোরাসিক সার্জারিতে দেরি করে অপারেশনের ‘ডেট’ দেওয়া হচ্ছে রোগীদের! কেন একই অবস্থা এমআরআই-সিটিস্ক্যান-ইউএসজি করার ব্যাপারেও।

এদিনের বৈঠকে প্রায় সমস্ত বিভাগীয় প্রধানই উপস্থিত ছিলেন৷ প্রত্যেককেই সতর্ক করেন অরূপবাবু৷ মুখ্যমন্ত্রীর মনোভাবের কথা জানিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের কাউন্সেলিং করার কথা বলেন।

পিজির এমএসভিপি ডা. করবী বড়াল কাউন্সেলিংয়ের জন্য সিনিয়র ডাক্তারদের নিয়ে একটি কমিটি করবেন৷ তাঁরাই জুনিয়রদের দেবেন ‘মানবিক’ হওয়ার পাঠ৷ শেখাবেন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে বা রোগী মৃত্যুর জেরে অশান্তির সময় কীভাবে পরিস্থিতি সামলাতে হবে৷ এদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ডা. নির্মল মাজি, ডা. শান্তনু সেন, ডা. ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। -সংবাদ প্রতিদিন
০৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে