সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৯:২৯:৩৯

একটি বিজ্ঞাপন কি পারবে শিক্ষা নিয়ে সিঙ্গাপুরের মানুষের ধারণা বদলে দিতে?

একটি বিজ্ঞাপন কি পারবে শিক্ষা নিয়ে সিঙ্গাপুরের মানুষের ধারণা বদলে দিতে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সিঙ্গাপুরে শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে তৈরি একটি বিজ্ঞাপন এখন দেশটির আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশটির শিক্ষা ব্যবস্থা, বিশ্বের অন্যতম শিক্ষা ব্যবস্থাগুলোর একটি ধরা হয়। যেখানে পরীক্ষা এবং গ্রেডের ওপর বিশেষ জোর দেয়া হয়।

কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তৈরি একটি ভিডিওতে বলা হচ্ছে,এই দৃষ্টিভঙ্গি বদল করা উচিত। এই শর্টফিল্মটি সত্য একটি ঘটনার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।

সেখানে দেখানো হচ্ছে, ভূগোলের শিক্ষক ম্যাডাম পুয়া তাঁর ছাত্রী শিরলিকে উৎসাহ দেয়ার চেষ্টা করছেন , সাহায্য করার চেষ্টা করছেন। শিরলি বারবার পরীক্ষায় ফেল করছে।

পরীক্ষায় ফেল করা সত্ত্বেও শিরলিকে তার পরিশ্রমের জন্য প্রশংসা করেছে তাঁর শিক্ষক। ম্যাডাম পুয়া তাঁকে বুঝিয়েছে সফলতা মানে সব পরীক্ষায় বেশি গ্রেড পাওয়া নয়, পরিশ্রমই সফলতার মূল চাবিকাঠি।

এই ভিডিওটি প্রকাশের পর ফেসবুকে ব্যাপক আলোড়ন পড়ে গেছে।

একজন লিখেছে যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে এভাবে চিন্তা করছে সেটা দেখে তারা খুবই আনন্দিত। আরেকজন লিখেছে আবেগে তার চোখে পানি চলে এসেছে।

সিঙ্গাপুরের শিক্ষক দিবস উপলক্ষে এই ভিডিওটি প্রকাশ করে দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

তারা বলছে যে দেশটির শিক্ষকরা সবসময় শিক্ষার্থীদের চরিত্র গঠন, শিক্ষা বিষয়ক কার্যকলাপসহ প্রতিষ্ঠানে তাদের ভূমিকা কী হবে তার ওপর জোর দিয়েছে।

সেকেন্ডারি স্কুলগুলোতে শিক্ষার বাইরে কার্যকলাপ যেমন শিল্প ও খেলাধুলাও চালু করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন তেমনভাবে হয়নি। এ কারণেও ভিন্ন উদ্যোগ নিতে চায় কর্তৃপক্ষ।

তবে এ নিয়ে সমালোচনাও হচ্ছে অনেক। একজন ফেসবুকে লিখেছেন "এই বিজ্ঞাপনটি বিভ্রান্তি তৈরি করছে। অনেক শিক্ষক আছে যারা শুধু অভিভাবকদের বলে কেন তার সন্তান ভালো ফল করছে না। সিঙ্গাপুরের শিক্ষা ব্যবস্থা অদ্ভুত"।

আরেকজন লিখেছেন "এটা শুধুমাত্র একটা বিজ্ঞাপন। আমার অভিজ্ঞতা হলো শিক্ষকরা ছাত্র-ছাত্রীদের উৎসাহ দেয়ার পরিবর্তে তাদের শুধু নীচু দেখাতে পছন্দ করে"।

"অভিভাবকদের এ বিষয়ে বুঝানোর চেষ্টা করুন"-মন্তব্য করেছেন আরেকজন।

সরকারের করা সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা যাচ্ছে, সিঙ্গাপুরে প্রতি বছর প্রাইভেট টিউশনে খরচ হয় প্রায় ১.১ বিলিয়ন সিঙ্গাপুরিয়ান ডলার (প্রায় ৮২৭ মিলিয়ন ডলার)। এক দশক আগের তুলনায় এ খরচ দ্বিগুণ বেড়েছে।

তবে এর ইতিবাচক প্রভাবও পড়েছে, ২০১৫ সালে গ্লোবাল স্কুল র‍্যাঙ্কিংয়ে প্রথম হয়েছে সিঙ্গাপুর। ফলাফলটা মূলত অংক ও বিজ্ঞানের ওপর ভিত্তি করেই হয়েছে। এই র‍্যাঙ্কিংয়ে ২০তম হয়েছে যুক্তরাজ্য এবং ১৮তম অবস্থানে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র।

সিঙ্গাপুরের শীর্ষ স্কুলের একটি অ্যাঙলো-চাইনিজ স্কুলের একজন শিক্ষার্থী নিকোলাস ওং বলছেন "শিশুরা এখানে জন্মের পর থেকেই যেন প্রতিযোগিতার দৌড় শুরু করে"।

"আমার অভিভাবকেরা ভালো ফলাফলের জন্য কখনও আমাকে চাপ দেয়নি। কিন্তু সমাজের কাছ থেকে নিরব বা সূক্ষ্ম চাপ যেন আসতেই থাকে ভালো ফল করতে হবে"।

জুনিয়র কলেজের একজন শিক্ষক মনে করছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের জন্য একটি ভাল প্রচেষ্টা। কারণ ভালো গ্রেড মানেই কিন্তু সফল হওয়া নয়। এ বিষয়টি শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের সবাইকেই বুঝতে হবে। -বিবিসি
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে