সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৬:০৯:১৭

ফ্রান্সে বুরকিনি পরায় তাড়িয়ে দেয়া হলো মুসলিম নারীকে

ফ্রান্সে বুরকিনি পরায় তাড়িয়ে দেয়া হলো মুসলিম নারীকে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : অস্ট্রেলিয়ার এক মুসলিম নারী বলেছেন, বুরকিনি পরার কারণে ফ্রান্সের একটি সমুদ্র সৈকত থেকে তাকে কীভাবে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছিল।  তার নাম জয়নাব আলসেল।  বয়স ২৩। মেডিকেলের ছাত্রী।

অস্ট্রেলিয়ার সংবাদ মাধ্যমকে তিনি বলেছেন, ইউরোপের মুসলিম নারীদের প্রতি সংহতি জানাতে তিনি ইউরোপ সফর করতে এসেছিলেন এবং তখনই এ ঘটনাটি ঘটেছে।

চ্যানেল সেভেনে এরকম একটি ভিডিও ফুটেজও প্রচার করা হয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে- স্থানীয় লোকজন তাকে সমুদ্র সৈকত থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছেন।

তারা বলছেন, তিনি যদি সৈকত থেকে চলে না যান তাহলে তারা পুলিশ ডাকবেন।  দক্ষিণ ফ্রান্সের উপকূলীয় কয়েকটি শহরে এই বুরকিনি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

পরে উচ্চতর আদালত এ নিষেধাজ্ঞাকে অবৈধ ঘোষণা করে।  ওইসব শহরের মেয়ররা এ আইনটি করেছিলেন। তারা বলছেন, পুরো শরীর ঢেকে রাখা সাঁতারের এই পোশাকটি ইসলামের একটি প্রতীক এবং গত জুলাই মাসে নিসে সন্ত্রাসী হামলার পর এই পোশাকটি উস্কানিমূলক হতে পারে।

মিস আলসেল বলছেন, ফ্রান্সে মুসলিম নারীরা কি অবস্থার মধ্যে আছেন সেটা দেখতেই তিনি তার পরিবারকে নিয়ে সেখানে বেড়াতে গিয়েছিলেন।

‘এই নারীরা যাতে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে সেজন্যে তাদেরকে সহযোগিতাও করাও ছিল আমাদের উদ্দেশ্য,’ বলেন তিনি।

রোববার রাতে চ্যানেল সেভেন টেলিভিশনে ভিডিও ফুটেজটি প্রচার করা হয়।  তাতে দেখা যায়, একজন পুরুষ বুরকিনি পরিহিত অস্ট্রেলিয়ান এই মুসলিম নারীকে সমুদ্র সৈকত থেকে চলে না গেলে পুলিশ ডাকার হুমকি দিচ্ছেন।

সৈকতে উপস্থিত অন্যান্যদেরকেও তার প্রতি নেতিবাচক ইঙ্গিত করতে দেখা গেছে।

কি এই বুরকিনি :

এটি সাঁতারের এমন একটি পোশাক যা মুখ, হাত ও পা ছাড়া পুরো শরীরকে ঢেকে রাখে।

 এই নামটি এসেছে বুরকা ও বিকিনির মিশেল ঘটিয়ে।

বুরকায় মুখ ঢাকা থাকলেও বুরকিনিতে মুখ উন্মুক্ত থাকে।

 বুরকিনি বাজারে এসেছে মুসলিম নারীদের টার্গেট করেই যাতে তারা আরো লোকজনের সামনে সাঁতার কাটতে পারেন।

‘আমরা সেখানে যাওয়াতে তারা খুশি হয়নি। যদিও বুরকিনির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছিল,’ বলেন মিস আলসেল।

‘সমুদ্র সৈকত থেকে এটা শুরু হয়েছে এবং আল্লাহই জানেন এটা কোথায় গিয়ে শেষ হয়,’ বলেন তিনি।
তিনি বলেন, যেসব নারী তাদের মাথার চুল বা মুখ ঢেকে রাখতে চান তারা নির্যাতিত বলে অনেকের যে ধারণা সেটি ভ্রান্ত ধারণা।

‘এটা হলো আমার বিশ্বাসের একটা প্রতীক। আমি যে ধর্ম পালন করি তার একটা প্রতীক। এটা ইসলামের প্রতীক। হিজাব পরার অর্থ হলো বাইরে কি আছে সেটা নয়, বরং ভেতরের মানুষটা কেমন সেদিকে মনোযোগ দেয়া।’

গত সপ্তাহেই অস্ট্রেলিয়ার একজন রাজনীতিক বুরকা নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছিলেন।
অভিবাসন-বিরোধী ওয়ান ন্যাশন পার্টির নেতা পলিন হেনসন বলেছেন, তার দেশ 'মুসলিমে প্লাবিত' হয়ে যাচ্ছে।

এই বুরকিনি আবিষ্কারের কৃতিত্ব যিনি দাবি করেছেন অস্ট্রেলিয়ার সেই নারী আহেদা জানেতি বলেছেন, ‘সাঁতারের এই পোশাক মুক্তি ও স্বাস্থ্যকর জীবনেরই অংশ, নিপীড়নের নয়।’

ধর্মীয় পোশাকের ব্যাপারে ফরাসী আইনে কি বলা হয়েছে-

ইউরোপের প্রথম দেশ ফ্রান্স যেখানে ২০১০ সালে প্রকাশে পুরো মুখ ঢেকে রাখার পোশাক নিকাব নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

স্কুল-কলেজে ধর্মীয় প্রতীক পরা নিষিদ্ধ করা হয় ২০০৪ সালের একটি আইনে।

 ১৯০৫ সালের সংবিধানে গির্জা ও রাষ্ট্রকে আলাদা রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।  ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। আবার একইসাথে ধর্ম পালন ও চর্চ্চার স্বাধীনতার ওপরেও জোর দেয়া হয়েছে। -বিবিসি
১৯ সেপ্টেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে