আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কাশ্মীরের উরিতে ভারতীয় ১৮ সেনা নিহতের ঘটনায় অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ডের আশংকা করছে দেশটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দরা সংস্থা এনআইএ। সংস্থাটির কর্মকর্তাদের ধারনা, উরিতে হামলার ঘটনায় সেনাঘাঁটির ভেতর থেকেই তথ্য-সাহায্য পেয়েছিল হামলাকারীরা। এ কারণে সবার আগে সর্ষের মধ্যে ভূত খুঁজতে নেমেছে সংস্থাটি।
ভারতীয় বাংলা সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে। নয়াদিল্লি ও শ্রীনগর থেকে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে অনমিত্র সেনগুপ্ত ও সাবির ইবন ইউসুফ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বছরের শুরুতে পঠানকোটের পর শনিবার উরিতে সেনাঘাঁটিতে হামলার ঘটায় উদ্বিগ্ন সেনা কর্তৃপক্ষ। তারা মনে করছেন নজরদারির ফাঁক গলেই বারবার সেনাঘাঁটিতে ঢুকে পড়ছে হামলাকারীরা। আর তাদের স্থানীয় ভাবে সাহায্য করা হচ্ছে।
উরি সেনাঘাঁটি থেকে নিয়ন্ত্রণরেখার দূরত্ব ছয় কিলোমিটার। আর বারামুলা শহর থেকে ওই ঘাঁটির দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটারের কাছাকাছি। নিয়ন্ত্রণরেখা বা বারামুলা, যে দিক দিয়েই জঙ্গিরা আসুক সেনাঘাঁটিতে ঢোকার আগে বেশ কিছুটা দূরত্ব পার হতে হয়েছে জঙ্গিদের।
এ কারণে গোয়েন্দারা প্রশ্ন তুলছেন, হামলাকারীরা প্রবেশের সময় কোথায় ছিল টহলদারিতে নিযুক্ত সেনারা? তারা কেন হামলাকারীদের চ্যালেঞ্জ করেননি?
উরি সেনাঘাঁটির মূল প্রবেশপথটি নিয়ন্ত্রণরেখার দিকে। ফলে স্বভাবতই সে দিকে পাহারা বেশি। হামলাকারীরা তাই বেছে নেয় পিছনের দিকের রাস্তা। ঘাঁটির পিছনের কোন অংশ দিয়ে হামলাকারীরা ঢুকেছিল তা এখন খুঁজে বের করা হচ্ছে।
এনআইএ'র গোয়েন্দাদের কাছে মূল প্রশ্ন হল, পেছন দিক দিয়ে ঢুকলে কোনও সমস্যায় পড়তে হবে না এই তথ্য পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইকে জানিয়েছিল কে?
ভারতরীয় সেনা সূত্রের বরাতে আনন্দবাজার জানিয়েছে, সাধারণত ফিদাইন বা আত্মঘাতী যোদ্ধাদের দাড়িগোঁফ কামানো থাকে। কিন্তু উরি ঘাঁটিতে হামলাকারীরা একদিন আগে দাড়ি কামিয়েছিল।
তা দেখে গোয়েন্দারা মনে করছেন, হামলাকারীরা এক দিন আগে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে প্রবেশ করে। এরপর প্রথম যে লক্ষ্যবস্তু পাওয়া যাবে তার উপরেই হামলা চালাতে হামলাকারীদের নির্দেশ দেয় আইএসআই। সামরিক পরিভাষায় এ কৌশলের নাম 'শ্যালো ইনফিলট্রেশন'।
প্রাথমিক ভাবে গোয়েন্দাদের সন্দেহ, বারামুলা-উরি এলাকায় আইএসআইয়ের স্লিপার সেল আছে। যাদের কথা স্থানীয় পুলিশের অজানা। গোয়েন্দাদের অনুমান, সেনাঘাঁটি থাকায় ওই স্লিপার সেল তৈরি করা হয়েছিল। জঙ্গিদের রাতের আশ্রয় ও রাস্তা চিনিয়ে দেওয়ার দায়িত্বে ছিল ওই স্লিপার সেলের সদস্যরা। শুধু তাই নয়, ঘাঁটির ভিতরের সমস্ত খবরও সরবরাহ করেছে তারা।
গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, প্রতিদিন নানা কাজের প্রয়োজনে বহু স্থানীয় মানুষ উরি সেনাঘাঁটিতে আসেন। তারা দিনভর সেখানে থাকেন। কাজ করেন। আবার রাতে ফিরে যান।
প্রতিদিন আসা-যাওয়ার ফলে ঘাঁটির ভিতরের খবর সংগ্রহ করাটা তাই কঠিন নয়। বিশেষ করে কবে ঘাঁটিতে দায়িত্ব বদল হচ্ছে, ডিজেল কোথায় মজুত করে রাখা আছে, সেনারা কোথায় ঘুমোতে যান- এ সব তথ্য ওই স্থানীয় বাসিন্দারা সহজেই জানতে পারেন।
স্থানীয়দের একাংশও আইএসআইকে তথ্য সরবরাহ করে থাকতে পারেন বলে সন্দেহ গোয়েন্দাদের। খোদ ভারতীয় সেনাবাহিনীর মধ্যেই পাকিস্তানের সেনার গুপ্তচর চক্র রয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা। কারণ গত এক বছরে দেশের বিভিন্ন সেনাঘাঁটি থেকে একাধিক পাকিস্তানী গ্রেফতার হয়েছে।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্তা জানাচ্ছেন, বাজপেয়ীর আমলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাশ্মীর সংক্রান্ত দফতরের যুগ্মসচিবের ব্যক্তিগত সহকারীর কাছে এক কাশ্মীরি শালওয়ালা আসতেন।
পরে জানা যায় অর্থের বিনিময়ে শালওয়ালার কাছে ওই সহকারী কাশ্মীর সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য দিতেন। তা পাচার হয়ে যেত আইএসআইয়ের কাছে। এ ক্ষেত্রেও সেনাকর্মীদের সঙ্গে স্থানীয় কোনও বাসিন্দার যোগ রয়েছে কি না জানার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা।
উরির হামলার সামগ্রিক তদন্তের ভার দেওয়া হয়েছে এনআইএ-কে। সোমবার তাদের একটি দল উরি সেনাঘাঁটিতে গিয়ে কিছু সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে। সেনা সূত্রে খবর, নিহত হামলাকারীদের ডিএনএ নমুনা চেয়েছেন এনআইএ অফিসাররা। কথা বলেছেন ঘাঁটিতে মোতায়েন সেনা অফিসারদের সঙ্গেও।
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/হাবিব/এইচআর