বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১০:৩৪:৪৩

ঝাড়ফুঁকের ‘খদ্দের’ ধরতে হাসপাতালে ওঝার ‘দালাল’

ঝাড়ফুঁকের ‘খদ্দের’ ধরতে হাসপাতালে ওঝার ‘দালাল’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ঝাড়ফুঁকে ভরসা কমছে মানুষের। ‘খদ্দের’ ধরতে তাই সরকারি হাসপাতালে দালাল নামিয়েছে ওঝারা।

হাসপাতালে বেড নেই, চিকিৎসা হবে না। প্রথমে এমন ভয় দেখানো হচ্ছে। কাজ না হলে রোগীর পরিবারের উপর জোর খাটানো হচ্ছে। বারাসত হাসপাতালে এমনই ঘটনা ঘটেছে। সাপে-কাটা এক রোগীকে হাসপাতাল থেকে জোর করে ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল এক দালাল। অভিভাবকরা সচেতন হওয়ায় ‘অঘটন’ অবশ্য ঘটেনি। হাসপাতালে চিকিৎসা করেই সাপে-কাটা ওই নাবালিকা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরল।

গত শনিবার রাতে কালাচ সাপ দংশন করেছিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অশোকনগরের নোটনি গ্রামের বাসিন্দা বিভাস দাসের মেয়ে শিপ্রাকে। এগারো বছরের মেয়েকে রাতেই অশোকনগর হাসপাতালে নিয়ে আসেন বিভাসবাবু। কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. অপর্ণা ভট্টাচার্য শিপ্রাকে ১২ ভায়াল এভিএস দেন।

রবিবার অন্য এক চিকিৎসক শিপ্রাকে বারাসত হাসপাতালে রেফার করে দেন। মেয়েকে নিয়ে রবিবার রাতে বিভাসবাবু আসেন বারাসত হাসপাতালে। সেখানেই দালালের খপ্পরে পড়েন তিনি ও তাঁর স্ত্রী। বিভাসবাবুর অভিযোগ, ওঝার কাছে মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার জন্য রীতিমতো জোর করা হয় তাঁকে। বিভাসবাবু রাজি না হওয়ায় তাঁর স্ত্রীকে পাকড়াও করে। শেষে বিভাসবাবু পুলিশ ডাকতে গেলে পালিয়ে যায় ওই দালাল।

বারাসতের চিকিৎসক অমিত আগরওয়ালের অধীনে ভর্তি করা হয় শিপ্রাকে। দেখা যায়, অশোকনগরে পাওয়া এভিএসের গুণেই শিপ্রা সুস্থ হয়ে গিয়েছে। রাতটুকু পর্যবেক্ষণে থাকার পর সোমবার সকাল এগারোটা নাগাদ হাসপাতাল থেকে ছুটি পায় শিপ্রা। বাড়ি ফিরে রাতে ডা. অপর্ণা ভট্টাচার্যকে ফোন করে ধন্যবাদও জানান বিভাসবাবু। তখনই দালালের বিষয়টি উঠে আসে৷ জানা যায়, ওই দালাল বারাসতের মেডিসিন ওয়ার্ডে ঘুরঘুর করছিল।

বিভাসবাবুদের ‘অসহায়’ অবস্থার সুযোগ নিয়ে ওই দালাল ঘনিষ্ঠতা বাড়ায়৷ বলে, “কাছেই এক ধন্বন্তরী ওঝা রয়েছেন। যেকোনও সাপের বিষ নামাতে পারেন। ওখানে মেয়েকে নিয়ে চলুন। এখানে থাকলে মেয়ে বাঁচবে না৷” বিশিষ্ট চিকিৎসক দয়ালবন্ধু মজুমদার এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়ার থেকে অনেক বেশি মানুষ সাপের কামড়ে মরেন। তা-ও এই বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার প্রয়াস সেভাবে গতি পায়নি।

বিভাসবাবু অবশ্য হাসপাতালের উপরই ভরসা রেখেছেন। শুধু বিভাসবাবু নন, এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি অনেকেই হয়েছেন। গোসাবাতে কিছুদিন আগে এর থেকেও ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটেছিল। একটি সাপে-কাটা রোগীকে হাসপাতালের বেড থেকে তুলে ওঝার কাছে নিয়ে গিয়েছিল একদল মানুষ। এমনকী চিকিৎসকদের উপর চড়াও হয়েছিল তারা।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় ওঝাদের নিয়ে কর্মশালা করা উচিত সরকারের। একই মত ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির রাধানগর শাখার সম্পাদক সৌম্য সেনগুপ্তর। তিনি জানিয়েছেন, সাপের কামড়ে মৃত্যু হওয়া রোগীর ক্ষতিপূরণে সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করছে৷ এর অর্ধেকও যদি প্রচারে ব্যবহার হত তাহলে মানুষকে চেষ্টা করেও ভুল বোঝাতে পারত না ওঝারা। -সংবাদ প্রতিদিন
২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে