 
                                        
                                        
                                       
                                        
                                             
                                                                                    
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দক্ষিণ এশিয়ায় যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে চলছে পরমাণু শক্তিধর দুই দেশ। জন্মলগ্ন থেকে শত্রুভাবাপন্ন দেশ দুটির মধ্যে কাশ্মীর সংকটকে কেন্দ্র করে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি কাশ্মীরের উরি সেনাঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলায় ১৮ ভারতীয় সেনা নিহত হয়।
 
এ ঘটনায় ইসলামাবাদকে দায়ী করে প্রতিশোধ নেয়ার কথা বলছে নয়াদিল্লি। ভারতীয় সেনাবাহিনীর বড় অংশই চাচ্ছে সীমান্ত অতিক্রম করে পাকিস্তানের ভেতরে আক্রমণ করতে। জবাবে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান রাহিল শরিফ বলেছেন, তার দেশ সব ধরনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ হুমকি মোকাবেলায় প্রস্তুত। পাকিস্তান আক্রান্ত হলে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিয়েছেন রাহিল।
 
এ অবস্থায় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রধান শক্তিধর দুই দেশ যদি যুদ্ধে জড়িয়ে যায় কী হবে পরিণতি? ক্ষয়ক্ষতি কি দুই দেশেই সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি আশপাশের দেশগুলোতেও বিস্তৃত হবে ধ্বংসযজ্ঞ।
 
ভারত-পাকিস্তান এ পর্যন্ত চারবার মুখোমুখি হয়েছে।
 
১৯৪৭, ১৯৬৫, ১৯৭১-তে যুদ্ধের পর ও ১৯৯৯ সালে কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে যুদ্ধে জড়িয়েছে তারা। তবে প্রতিবারের যুদ্ধই হারজিতের পরিবর্তে সমঝোতার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। এবারের উত্তেজনার মধ্যেও দেখা যাচ্ছে, পরমাণু অস্ত্রধারী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধে না জড়ানোর ব্যাপারে সচেতন রয়েছেন দু’দেশের নীতিনির্ধারকরা।
 
বিশ্লেষকদের মতে, বাগাড়ম্বর যতই চলতে থাকুক শেষ পর্যন্ত সামরিক যুদ্ধে জড়ানোর মতো ঝুঁকিতে যাবে না দুই দেশ। কারণ পরমাণু শক্তিধর দুই দেশের যুদ্ধ বাঁধলে কোনো পক্ষই জিতবে না।
 
দুই দেশের সামরিক শক্তি
 
দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ ভারত ও পাকিস্তান। এছাড়াও দুই দেশের সামরিক বাহিনীই জনবল ও অত্যাধুনিক অস্ত্রসম্ভারে সমৃদ্ধ। সিআইএ, দুই দেশের পাবলিক ডোমেইনগুলো, সংবাদমাধ্যম এবং উইকিপিডিয়ার তথ্য বিশ্লেষণ করে দুই দেশের সমর শক্তির তুলনামূলক চিত্র তৈরি করেছে গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ডটকম। সেই চিত্র তুলে ধরা হল-
 
জনবল..
 
ভারত : ১২৫ কোটি ১৭ লাখ জনসংখ্যার দেশটিতে ৬১ কোটি ৬০ লাখ জনশক্তি রয়েছে। এর মধ্যে চাকরির জন্য উপযুক্ত ৪৮ কোটি ৯৬ লাখ। দেশটিতে প্রতি বছর সামরিক দায়িত্ব পালনের উপযুক্ত বয়সী হন ২২ কোটি ৯ লাখ ব্যক্তি। ভারতে ১৩ লাখ ২৫ হাজার সেনা রয়েছে। সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবল ২১ লাখ ৪৩ হাজার।
 
পাকিস্তান : ১৯ কোটি ৯১ লাখ জনসংখ্যার দেশটিতে ৯ কোটি ৫০ লাখ জনশক্তি রয়েছে। এর মধ্যে চাকরির জন্য উপযুক্ত ৭ কোটি ৫৪ লাখ।
 
দেশটিতে প্রতি বছর সামরিক দায়িত্ব পালনের উপযুক্ত বয়সী হন ৪ কোটি ৩ লাখ ৪৫ হাজার ব্যক্তি। পাকিস্তানে ৬ লাখ ২০ হাজার সেনা রয়েছে। সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবল ৫ লাখ ১৫ হাজার।
 
বিমান বাহিনী
 
ভারত : সব মিলিয়ে ভারতের ২০৮৬টি সামরিক বিমান রয়েছে। এছাড়াও দেশটির ৬৪৬টি হেলিকপ্টার, ১৯টি অ্যাটাক হেলিকপ্টার, ৮০৯টি নির্ধারিত পাখাযুক্ত অ্যাটাক বিমান, ৬৭৯টি যুদ্ধবিমান, ৩১৮টি প্রশিক্ষণ বিমান এবং ৮৫৭টি ট্রান্সপোর্ট বিমান রয়েছে। দেশটির ব্যবহারযোগ্য বিমানবন্দর রয়েছে ৩৪৬টি।
 
পাকিস্তান : সব মিলিয়ে পাকিস্তানে ৯২৩টি বিমান রয়েছে। এছাড়াও দেশটির ৩০৬টি হেলিকপ্টার, ৫২টি অ্যাটাক হেলিকপ্টার, ৩৯৪টি নির্ধারিত পাখাযুক্ত অ্যাটাক বিমান, ৩০৪টি যুদ্ধবিমান, ১৭০টি প্রশিক্ষণ বিমান এবং ২৬১টি ট্রান্সপোর্ট বিমান রয়েছে। দেশটির ১৫১টি ব্যবহারযোগ্য বিমানবন্দর রয়েছে।
 
সেনাবাহিনীর অস্ত্রসম্ভার
 
ভারত : দেশটির ৬৪৬৪টি ট্যাংক, ৬৭০৪টি আর্মার্ড ফাইটার ভেহিক্যাল, ২৯০টি সেল্ফ প্রপেল্ড গান, ৭৪১৪টি টানা কামান এবং ২৯২টি মাল্টিপল লাঞ্চার রকেট সিস্টেম রয়েছে।
 
পাকিস্তান : দেশটির ২৯২৪টি ট্যাংক, ২৮২৮টি আর্মার্ড ফাইটার ভেহিক্যাল, ৪৬৫টি সেল্ফ প্রপেল্ড গান, ৩২৭৮টি টানা কামান এবং ১৩৪টি মাল্টিপল লাঞ্চার রকেট সিস্টেম রয়েছে।
 
নৌবাহিনীর শক্তি
 
ভারত : দেশটির ৩৪০টি মার্চেন্ট মেরিন জাহাজ রয়েছে। প্রধান সমুদ্রবন্দর রয়েছে সাতটি। এছাড়া দুটি বিমানবাহী ক্যারিয়ার, ১৪টি সাবমেরিন, ১৪টি ফ্রিগেট, ১০টি ডেস্ট্রয়ার, ২৬টি কর্ভাটি, ছয়টি মাইন ওয়ারফেয়ার ক্রাফ্ট এবং ১৩৫টি পেট্রল ক্রাফট রয়েছে।
 
পাকিস্তান : দেশটির ১১টি মার্চেন্ট মেরিন জাহাজ রয়েছে। প্রধান সমুদ্রবন্দর রয়েছে দুটি।
 
এছাড়া পাঁচটি সাবমেরিন, ১০টি ফ্রিগেট, তিনটি মাইন ওয়ারফেয়ার ক্রাফ্ট এবং ১৩৫টি পেট্রল ক্রাফট রয়েছে।
 
অর্থনীতি
 
ভারত: সামরিক শক্তি অনেকটাই অর্থনৈতিক শক্তির ওপর নির্ভরশীল। এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ভারতই পাকিস্তানের চেয়ে অনেকটা এগিয়ে রয়েছে। ভারতের ৪৫ হাজার ৯১০ কোটি মার্কিন ডলার বিদেশী ঋণ রয়েছে। ভারতের বার্ষিক সামরিক বাজেট চার হাজার কোটি মার্কিন ডলার। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৭ হাজার ৭০ কোটি মার্কিন ডলার।
 
ক্রয় ক্ষমতার ভিত্তিতে (পিপিপি) ৭৪ লাখ এক হাজার একশ’ মার্কিন ডলার। জ্বালানি তেল উৎপাদন ৭ লাখ ৬৭ হাজার ৬০০ ব্যারেল, জ্বালানি তেল ব্যবহার ৩৫ লাখ ১০ হাজার ব্যারেল/দিন এবং জ্বালানি তেলের প্রমাণিত রিজার্ভ ৫৬৭ কোটি ৫০ লাখ ব্যারেল/দিন। সড়ক পথ ৩৩ লাখ ২০ হাজার ৪১০ মাইল, রেলপথ ৬৩ হাজার ৯৭৪ কিলোমিটার, নৌপথ ১৪ হাজার পাঁচশ’ কিলোমিটার, উপকূলীয় এলাকা সাত হাজার কিলোমিটার, যৌথ সীমান্ত ১৩ হাজার ৮৮৮ কিলোমিটার এবং আয়তন ৩২ লাখ ৮৭ হাজার ২৬৩ কিলোমিটার।
 
পাকিস্তান : দেশটির ৫৮ হাজার ১৭০ কোটি মার্কিন ডলার বিদেশী ঋণ রয়েছে।
 
পাকিস্তানের বার্ষিক সামরিক বাজেট সাতশ’ কোটি মার্কিন ডলার। বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ ১৭৩০ কোটি মার্কিন ডলার।
 
পিপিপি ৮ লাখ ৮৮ হাজার ৪২০ মার্কিন ডলার। জ্বালানি তেল উৎপাদন ৯৩ হাজার ৬৩০ ব্যারেল, জ্বালানি ব্যবহার ৪ লাখ ৪০ হাজার ব্যারেল/দিন এবং জ্বালানি তেলের প্রমাণিত রিজার্ভ ৩৭ কোটি ১০ লাখ ব্যারেল/দিন। সড়ক পথ দুই লাখ ৬০ হাজার ৭৬০ মাইল, রেলপথ ৭ হাজার ৭৯১ কিলোমিটার, নৌপথ ২৫ হাজার ২২০ কিলোমিটার, উপকূলীয় এলাকা এক হাজার ৪৬ কিলোমিটার, যৌথ সীমান্ত ৭ হাজার ২৫৭ কিলোমিটার এবং আয়তন ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৯৫ কিলোমিটার। যুগান্তর
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি
 
  
                             
                                    
                 
  
                             
                                    
                 
  
                             
                                    
                 
  
                             
                                    
                