শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০১:০৪:৪৯

ভারতকে মোকাবিলায় পাকিস্তানের পাশে চীন, গোপনে ব্যাপক সামরিক প্রস্তুতি

ভারতকে মোকাবিলায় পাকিস্তানের পাশে চীন, গোপনে ব্যাপক সামরিক প্রস্তুতি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কাশ্মীরের এক সেনা ঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলায় পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। উভয় দেশের মধ্যে চলছে বাকযুদ্ধ। দুই দেশের সংবাদমাধ্যম এই উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে হামলার আভাস দিচ্ছে।

এমন প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের মিত্র প্রতিবেশী চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং বলেছেন, কাশ্মীর ইস্যুতে ইসলামাবাদের অবস্থানকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে থাকে বেইজিং। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সাথে নিউ ইয়র্কে বৈঠকের পর তিনি এ সমর্থন ব্যক্ত করেন।

চীনা প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, পাকিস্তানের অবস্থান সমর্থন করে চীন এবং প্রতিটি ফোরামে পাকিস্তানকে সমর্থন করে যাবে। তিনি বলেন, তার দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সর্বশেষ অচলাবস্থা নিরসনে সহায়তা করতে পারে।

ভারতের সাথে পাকিস্তানের উত্তেজনার কথা উল্লেখ করে কেকিয়াং বলেন, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের শিকার। তিনি আশা করেন, ভারত ও পাকিস্তান তাদের মধ্যকার দূরত্ব আর বাড়াবে না।

অধিকৃত কাশ্মীর উপত্যাকায় ভারতীয় নৃশংসতার বিরুদ্ধে চীনা অবস্থানকে সমর্থন করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। তিনি বলেন, পাকিস্তান সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে থেকেছে এবং থাকবে।

চীন-পাকিস্তানকে 'আয়রন-ব্রাদার্স' হিসেবে অভিহিত করে নওয়াজ শরিফ বলেন, এই দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক এখন নতুন দিকে মোড় নিয়েছে। পরমাণু সরবরাহ গ্রুপে পাকিস্তানের অবস্থান উপলব্ধি করার জন্য তিনি চীনা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

এদিকে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে অত্যন্ত গোপনে তিব্বতে সামরিক প্রস্তুতি বাড়াতে শুরু করে দিয়েছে চীন। হিমালয়ের কোলে ব্রহ্মস মোতায়েন করা নিয়ে চিন ভারতকে হুঁশিয়ারি দেয়ার কয়েক দিন পরই তিব্বতের এক বিমানবন্দরে দেখা গেছে চীনের জে-২০ স্টেল্থ ফাইটারকে। চীনের সবচেয়ে গোপন সামরিক প্রকল্পগুলির মধ্যে অন্যতম হল এই জে-২০। তিব্বতের দাওচেং ইয়াদিং বিমানবন্দরে ওই যুদ্ধবিমান নিয়ে এসেছে চীন। স্টেল্থ ফাইটারটিকে ঢেকে রাখা হয়েছে। কিন্তু প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত দু’টি ওয়েবসাইটে সেই ছবি প্রকাশ করে দিয়েছে।

ভারতীয় মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, জে-২০ স্টেল্থ ফাইটার সম্পর্কে কোনো তথ্য বেইজিং প্রকাশ করে না। যুদ্ধবিমানটি সম্পূর্ণ প্রস্তুত, নাকি পরীক্ষা-নিরীক্ষার স্তরে রয়েছে, তাও জানানো হয় না। কয়েক মাস আগে চীনের একটি বিমানঘাঁটির রানওয়েতে জে-২০ স্টেল্থ ফাইটার দাঁড়িয়ে থাকার একটি ছবি প্রকাশ্যে আসে। তার পরই বিশ্বজুড়ে জল্পনা শুরু হয়ে যায়, চীনের জে-২০ স্টেল্থ ফাইটার তৈরি হয়ে গিয়েছে। বেইজিং সেই জল্পনা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। চীনা বিমানবাহিনীতে ওই যুদ্ধবিমানের অন্তর্ভুক্তি ঘটেছে কি না, তাও জানানো হয়নি। কিন্তু

তিব্বতের দাওচেং ইয়াদিং বিমানবন্দরে ওই যুদ্ধবিমান দেখা যাওয়ার পর প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, জে-২০ চীনা বিমানবাহিনীর অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছে। পৃথিবীর সর্বোচ্চ অসামরিক বিমানবন্দর দাওচেং ইয়াদিং-এর টারম্যাকে ত্রিপল দিয়ে ঢাকা অবস্থায় দেখা গেছে জে-২০-কে। প্রতিপক্ষ যাতে ওই স্টেল্থ ফাইটার মোতায়েন করা সম্পর্কে সচেতন না হতে পারে, তার জন্যই ক্যামোফ্লাজ ত্রিপল দিয়ে সেটি ঢেকে রাখা হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি আর শেষ পর্যন্ত গোপন থাকেনি।

কী বিশেষত্ব এই যুদ্ধবিমানের?
• চীনের এই যুদ্ধবিমানে দু’টি ইঞ্জিন।
• জে-২০ অত্যন্ত দ্রুতগামীও।
• যে বিমানঘাঁটিতে জে-২০ বিমানটিকে আনা হয়েছে, সেটি প্রায় ১৪ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। এর থেকে বোঝা যাচ্ছে, অনেক উঁচুতেও এই যুদ্ধবিমান সহজেই কাজ চালাতে পারে।
• জে-২০ যুদ্ধবিমানের সবচেয়ে বড় সক্ষমতা হল, এটি স্টেল্থ ফাইটার গোত্রের। অর্থাৎ বিশেষ কিছু পরিস্থিতিতে রেডারকে ফাঁকি দিয়ে গোপনে প্রতিপক্ষের এলাকায় হানা দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে জে-২০ যুদ্ধবিমানের।

লাদাখ এবং অরুণাচল প্রদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় ভারত যে ভাবে পরিকাঠামো বাড়াচ্ছে, তিব্বতে জে-২০ স্টেল্থ ফাইটার মোতায়েন করাকে তার পাল্টা হিসেবেই দেখছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা। লাদাখে শতাধিক ট্যাঙ্ক মোতায়েন করা বা অরুণাচলে ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র রাখার কথা প্রকাশ্যে আসার পর, চীন ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল। অরুণাচলে ভারত নিজেদের প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ব্রহ্মস রেখেছে বলে চীনা সেনার মুখপত্রে লেখাও হয়েছিল।

ভারতীয় বাহিনী অবশ্য জানিয়েছিল, নিজেদের এলাকায় সামরিক পরিকাঠামো ভারত কী ভাবে গড়ে তুলবে, তাতে অন্য কোনো দেশের নাক গলানোর প্রয়োজন নেই। চীন যে গোপনে পাল্টা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে, তাও এ বার স্পষ্ট হয়ে গেল।
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে