সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৯:০৯:১২

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ডাক দিলেন অবসরপ্রাপ্ত সেনাপ্রধান জেনারেল ভিপি মালিক

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ডাক দিলেন অবসরপ্রাপ্ত সেনাপ্রধান জেনারেল ভিপি মালিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: উরিতে ১৮ জন সেনা জওয়ানকে হত্যার অপরাধে উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত পাকিস্তানের৷ এমনই মত ভারতের অবসরপ্রাপ্ত সেনাপ্রধান জেনারেল ভিপি মালিকের৷ কারগিল যুদ্ধে সেনাপতিত্বের দায়িত্বে ছিলেন জেনারেল মালিক৷ উরির হামলার পরিপ্রেক্ষিতে টাইমস অব ইন্ডিয়ায় তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অজয় সূর্য৷ কলকাতা 24×7-এ তার বাংলা রূপান্তর তুলে দেওয়া হল৷

প্রশ্ন: ভারতের কি উরির ঘটনার মোক্ষম জবাব দেওয়া উচিত? আমাদের দিক কি থেকে কোনও সামরিক পন্থা অবলম্বনের সুযোগ আছে?

ভিপি মালিক: এবার যদি আমরা জবাব দিতে ব্যর্থ হই, তাহলে জঙ্গিদের তালিম দেওয়ার পাশাপাশি সীমান্ত পার করে তাদের ভারতে ঢোকাতে পাকিস্তান আরও উৎসাহী হয়ে উঠবে৷ কাশ্মীর সহ আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারেও নাক গলাতে তারা ইতস্তত করবে না৷ সেইসঙ্গে জঙ্গিদের ক্রমাগত অস্ত্রশস্ত্র জোগানোও বন্ধ হবে না৷ সামরিক পথে জবাব দেওয়ার সুযোগ অবশ্যই আছে৷ একইসঙ্গে বিমান অভিযান ও দূরপাল্লার কামান থেকে উপর্যুপরি গোলাবর্ষণ৷ অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গি শিবিরগুলি গুঁড়িয়ে দিতে অতর্কিতে অভিযানও চালানো যেতে পারে৷ পাশাপাশি যেসব জায়গা জঙ্গি অনুপ্রবেশের সব চাইতে উপযোগী সেগুলিও কবজা করা যেতে পারে৷ তবে যখন আমরা এই ধরনের অভিযানে শামিল হব তখন দেখা দরকার, সেখানে যেন যথেষ্ট সমন্বয় থাকে৷ সামরিক অভিযানে যদি আকস্মিকতাই না থাকে, তাহলে তা কিন্তু অসম্ভব ঝুঁকির ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে৷

যে কোনও সামরিক অভিযানের ক্ষেত্রেই একটা পালটা প্রতিরোধের ঝুঁকি থাকে৷ তাই আমাদের দিক থেকেও ধাপে ধাপে ক্রমবর্ধমান চাপ বাড়ানোর কথা ভেবে রাখা দরকার৷ খরচ, ঝুঁকি, পালটা চাপ রোখার সুযোগ এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে সাফল্যের সম্ভাবনা, সব দিক বিচার করে তবেই সুসমন্বিত সামরিক অভিযানের পথে পা বাড়ানো উচিত৷

প্রশ্ন: কূটনৈতিক পথে এগনোর কোনও রাস্তা কি ভারতের সামনে খোলা আছে?

ভিপি মালিক: পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র বলে ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত আমাদের নিতেই হবে৷ এর জন্য শুধু আবেদন-নিবেদন করলে চলবে না৷ বিশ্বগোষ্ঠীকে সোজাসুজি বলতে হবে, অত্যন্ত কড়া সামরিক পদক্ষেপ ছাড়া আর কোনও রাস্তা পাকিস্তান আমাদের সামনে খোলা রাখেনি৷ মিন মিন করে বললে হবে না যে, আমরা নিরুপায়৷ বিশ্বগোষ্ঠীকে বলা দরকার, তোমরা যদি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নাও, তাহলে যুদ্ধে যাওয়া ছাড়া আমাদের সামনে আর কোনও রাস্তা খোলা নেই৷

কারগিল যুদ্ধের সময় আমরা আমেরিকাকে চরমসীমা দিয়ে বলেছিলাম, আন্তর্জাতিক সীমান্ত পার করে পাকিস্তানে ঢোকা ছাড়া তোমরা আমাদের সামনে আর কোনও রাস্তা খোলা রাখনি৷ আমরা আমাদের সেনাবাহিনীকে আর ধরে রাখতে পারছি না৷ আমেরিকার তৎকালীন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা স্যান্ডি বার্জারকে এমনই বার্তা দিয়েছিলেন আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা ব্রজেশ মিশ্র৷ আমরা এই বার্তা দেওয়ার পরেই কিন্তু মার্কিন প্রশাসন বলেছিল, ‘‘প্লিজ, তোমরা এখনই কিছু ক’রো না৷ আমরা কী করি শুধু একবার দেখ৷’’ এর পরেই আলোচনাপর্ব শুরু হয়৷ হয় সামরিক প্রতিক্রিয়া জবরদস্ত হতে হবে, নয়তো কূটনীতিক প্রতিক্রিয়া৷ স্থল, বায়ু এবং নৌবাহিনীর তিন প্রধানকেই একেবারে এক চিন্তার সূত্রে বাঁধা পড়তে হবে৷

প্রশ্ন: পাঠানকোট এবং অন্যান্য উসকানি থেকে কি কোনও শিক্ষা আমরা পেলাম?

ভিপি মালিক: আমাদের শেখা উচিত ছিল, কিন্তু শিখিনি৷ অনুপ্রবেশের ক্ষেত্রে একই ভুল আমরা ক্রমাগত করে চলেছি এবং অনবরত অনুপ্রবেশ ঘটতে দিচ্ছি৷ কোনও সন্দেহ নেই, পাঠানকোট হোক কিংবা উরিই হোক— সব ঘটনাতেই আমাদের মধ্যে ‘যাক গে, চলছে চলুক’ এ রকম একটা ভাব এসে গিয়েছে৷ অস্বীকার করার উপায় নেই যে, পাঠানকোটের পর আমরা সঠিক এবং উপযুক্ত উত্তর জবাব দিতে পারিনি৷ পাঠানকোটের পর আমাদের প্রতিক্রিয়া স্রেফ দেশলাইকাঠির মতো জ্বলে উঠে আস্তে আস্তে নিভে গিয়েছে৷ আমাদের পদক্ষেপ ব্যর্থ হয়েছে৷

প্রশ্ন: কারগিল যুদ্ধের সময় কিছু রাজনীতিক বলেছিলেন, অবিলম্বে আগুয়ান হয়ে অধিকৃত কাশ্মীরের দখল নেওয়া উচিত৷ আপনি সেই প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছিলেন৷ কেন?

ভিপি মালিক: আজকের পরিস্থিতির থেকে কারগিল যুদ্ধের পরিস্থিতি ছিল একেবারেই ভিন্ন৷ ১৯৯৯ সালের গোড়ায় আন্তর্জাতিক মহলে আমরা প্রায় এক ধরনের দুষ্ট রাষ্ট্র হিসাবে গণ্য হচ্ছিলাম৷ পরমাণু বোমা পরীক্ষার প্রতিক্রিয়া হিসাবে আমরা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছিলাম৷ একবার এক বৈঠকের সময় আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, গোটা অধিকৃত কাশ্মীর আমরা মুঠোয় আনতে পারব কি না৷ উত্তরে আমি বলেছিলাম, সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয় রসদ শুধু নয়, এর জন্য দীর্ঘ সময়ও আমাদের দরকার৷ অতঃপর নির্দেশ পেয়েছিলাম, তাহলে আর প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরনোর কোনও দরকার নেই৷

প্রশ্ন: ১৯৯৯ এবং ২০০২-এর সংসদ আক্রমণের সময়কালের চাইতে আজকের বিশ্ব পরিস্থিতি কতটা বদলেছে?

ভিপি মালিক: ১৯৯৯ সালে সবেমাত্র আমরা পরমাণু পরীক্ষা ঘটিয়েছি এবং সেটাই তখন সর্বত্র আলোচিত হচ্ছে৷ সংসদ আক্রমণের পরেও আমরা কিছু করলাম না৷ অর্থাৎ আবারও ভুল করলাম৷ যদিও আমরা আমাদের সেনাবাহিনীকে টানা দশ মাস যুদ্ধের জন্য তৈরি রেখেছিলাম৷ সীমান্ত জুড়ে সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছিলাম৷ ২০০২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত পাকিস্তান ভয়ে ভয়ে ছিল৷ কিন্তু তার পর ওরা বুঝতে পারল, আমরা কিছুই করব না৷ এর পরই ঘটল গুজরাতের ঘটনা এবং তার পর আমরা আস্তে আস্তে সীমান্ত থেকে সেনা সরিয়ে আনতে শুরু করলাম৷ এটাই স্বতঃসিদ্ধ হয়ে গিয়েছে যে, আমরা কোনও কিছুই করতে যাচ্ছি না৷ কারণ আমরা যাই করি না কেন, তার একটা না একটা প্রভাব পড়বেই৷ ২০০১-০২-এর অপারেশন পরাক্রমের সময় কিন্তু চাইলে আমরা অনেক কিছুই ঘটাতে পারতাম৷ কিন্তু তখন সেই সুযোগের সদ্ব্যবহারে ব্যর্থ হয়েছি৷

প্রশ্ন: এখনকার রাজনৈতিক ও সামরিক প্রস্তুতি নিয়ে আপনার কী মত?

ভিপি মালিক: আমাদের বর্তমান রাজনৈতিক কর্তৃমণ্ডলীর একটাই খামতি— ওঁরা দেশের নিরাপত্তার ব্যাপারে যথেষ্ট নিষ্ঠা দেখাচ্ছেন না৷  ওঁরা বিষয়টিকে নানা বিভাগের হাতে তুলে কোটরাবদ্ধ করে দিয়েছেন৷ অটলবিহারী বাজপেয়ির আমলে নিরাপত্তা বিষয়ে আমি যত ক্যাবিনেট কমিটি মিটিং হতে দেখেছি, তা আর অন্য কারও সময়ে দেখিনি৷ আমাদের সামরিক প্রস্তুতি নিয়ে সব কথা খোলাখুলি আমি বলতে পারছি না৷ তবে এটুকু বলতে পারি, যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবিলার হিম্মত আমাদের সেনাবাহিনীর আছে৷-কলকাতা২৪
২৬ সেপ্টেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে