রবিবার, ০৯ অক্টোবর, ২০১৬, ০৬:৫৫:৪৮

সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে ৩ পাকিস্তানি সৈন্যের মাথা কেটে নিয়েছিল ভারত!

সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে ৩ পাকিস্তানি সৈন্যের মাথা কেটে নিয়েছিল ভারত!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ২০১৬-তেই প্রথম নয়, ২০১১-তেও নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডে ঢুকে আক্রমণ চালিয়েছিল ভারতীয় সেনা। এমনই দাবি ভারতের ইংরেজি সংবাদপত্র ‘দ্য হিন্দু’র।
এবারে ভারতীয় বাহিনীর দাবি করা সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে নানা সন্দেহের প্রেক্ষাপটে এই দাবি করা হলো। পাকিস্তান এ ধরনের কোনো আক্রমণের কথা দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে। ভারতের অনেক রাজনীতিবিদ প্রমাণ দিতে বলেছেন। কিন্তু ভারতীয় পক্ষ কোনো প্রমাণ দেবে না বলে জানিয়েছে।

এ প্রেক্ষাপটে ‘দ্য হিন্দু’ সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১১-র জুলাই মাসের পর কয়েক সপ্তাহজুড়ে নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে হামলা-পাল্টা হামলা চলেছিল। এই ঘটনায় দুই পক্ষের ১৩ সৈন্যের মৃত্যু হয়েছিল। তাদের মধ্যে দুইজনের মাথা কেটে নিয়ে গিয়েছিল পাকিস্তান। এর জবাবে ভারত কেটে এনেছিল ৩ পাকিস্তান সেনার মাথা।

এই ঘটনার সরকারি নথি, ভিডিও ও ফটোগ্রাফিক সাক্ষ্যপ্রমাণ তাদের কাছে রয়েছে বলে দাবি করেছে দ্য হিন্দু।

কুপওয়ারার ২৮ ডিভিশনের প্রধান মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এস কে চক্রবর্তীর নেতৃত্বে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে এই অভিযানের পরিকল্পনা ও কার্যকর হয়েছিল বলে দ্য হিন্দুতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। অভিযানের নাম দেয়া হয়েছিল ‘অপারেশন জিঞ্জার’। মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এস কে চক্রবর্তী ওই অভিযানের সত্যতা স্বীকার করে নিয়েছেন বলেও জানিয়েছে দ্য হিন্দু। যদিও তিনি এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানাতে অস্বীকার করেছেন।

সংবাদপত্রটিতে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, এই রক্তাক্ত পর্বের শুরুটা করেছিল পাকিস্তান। ২০১১-র ৩০ জুলাই কুপওয়ারায় গুগালধার রিজে ভারতের প্রত্যন্ত সেনা চৌকিতে বিকেলে আঘাত হানে পাক হামলাকারীরা। অতর্কিত হামায় হতচকিত হয়ে পড়েন রাজপুত ও কুমায়ুন রেজিমেন্চের ছয় জওয়ান। ১৯ রাজপুত রেজিমেন্টের হাত থেকে ২০ কুমায়ন রেজিমেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের সময় হানা দেয় পাক বর্ডার অ্যাকশন টিম (বিএটি)। হামলাকারীরা ২০ কুমায়ন রেজিমেন্টের হাবিলদার জয়পাল সিংহ অধিকারী ও ল্যান্স নায়েক দেবেন্দর সিংহের মাথা কেটে নিয়ে যায়। ১৯ রাজপুত রেজিমেন্টের এক জখম জওয়ান পুরো ঘটনার খবর দেন। পরে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

দ্য হিন্দু জানিয়েছে, এর বদলা হিসেবে অপারেশন জিঞ্জার-এর নকশা তৈরি হয়। অভিযান চালানোর আগে নিখুঁত প্রস্তুতি নেয়া হয়। সাতবার রেইকি চালিয়ে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত করা হয়। তিনটি পাক সেনা ঘাঁটি চিহ্নিত করা হয়। পাকিস্তান পক্ষের হতাহতের সংখ্যা যত বেশি করাই ছিল অভিযানের লক্ষ্য। একটি পুলিশ চৌকি, জোর, হিফাজত ও লাশদাত লজিং পয়েন্টের পাক সেনা ঘাঁটিতে আক্রমণ চালানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়।

অভিযানের গোপন রিপোর্ট উল্লেখ করে দ্য হিন্দুতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গুগালধারে হামলার পর অভিযানের জন্য আক্রমণ, অ্যামবুশ, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ও নজরদারির জন্য আলাদা আলাদা দল গঠন করা হয়।

গুগালধারে হামলার পর সীমান্ত পেরিয়ে অনুপ্রবেশ করতে গিয়ে এক সন্ত্রাসী মারা পড়ে। তার কাছ থেকে একটি ভিডিও ক্লিপ পাওয়া যায়। সেই ভিডিওতে দেখা যায়, দুই ভারতীয় জওয়ানের কাটা মাথা একটি উঁচু জায়গায় রেখে চারদিকে দাঁড়িয়ে রয়েছে পাকিস্তানিরা। সংবাদপত্রটির দাবি, তাদের কাছে ওই ভিডিওর কপি রয়েছে।

দুই মাস রেইকি চালানোর পর ২০১১-র ৩০ আগস্ট মঙ্গলবার অপারেশন জিঞ্জার চালায় ভারতীয় সেনা। অভিযানের সঙ্গে জড়িত একজনকে উদ্ধৃত করে একথা জানিয়েছে দ্য হিন্দু।

দি হিন্দু জানায়, অভিযানে সামিল হয়েছিলেন প্রধানত প্যারা কম্যান্ডোরা। অভিযানের আগের দিন ভোর তিনটেয় লঞ্চ প্যাডে সমবেত হন তারা। সেখানে রাত দশটা পর্যন্ত লুকিয়ে ছিলেন তারা। এরপর তারা নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে পুলিশ চৌকির কাছে পৌঁছে যান। সেখানে মাইন পাতা হয়। অ্যামবুশ টিম তখন শত্রু শিবিরে ঢুকে গিয়ে সঙ্কেতের অপেক্ষা করছিল। ৩০ আগস্ট সকাল সাতটায় চার পাক সেনাকে দেখতে পায় ভারতীয় জওয়ানরা।

তাদের অ্যামবুশ সাইটে পৌঁছনো পর্যন্ত অপেক্ষা করেন কম্যান্ডোরা। সেখানে পাকিস্তান সেনারা পৌঁছলে মাইন বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। আচমকা হানায় জখম হয় পাক জওয়ানরা। এক পাক সেনা নদীর পানিতে পড়ে যায়। বাকি তিন পাক সেনার মাথা কেটে নেন কম্যান্ডোরা। তাদের মাথাসহ সেনাতে পদমর্যাদার প্রতীক, অস্ত্র ও অন্যান্য ব্যক্তিগত সামগ্রীও নিয়ে নেয়া হয়। এরপর এক মৃত পাকিস্তান সেনার দেহের নিচে মাইন বিছিয়ে দেয়া হয়। বিস্ফোরণের শব্দ শুনে দুই পাক সেনা ছুটে এলে তাদের হত্যা করে অ্যামবুশ সাইটের কাছে অপেক্ষারত দ্বিতীয় ভারতীয় দল।

দ্বিতীয় দলকে আক্রমণের চেষ্টা করে দুই পাকিস্তানি সেনা। কিন্তু ভারতের কভারিং দলের জওয়ানরা ওই দুই পাকিস্তানি সেনাকে খুন করে। সূত্র উল্লেখ করে এ কথা জানিয়েছে সংবাদপত্রটি। ভারতীয় সেনার ৪৫ মিনিটের ওই অভিযানে আরো কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা মারা যায় বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

সকাল পৌনে আটটা নাগাদ নিয়ন্ত্রণ রেখার দিকে রওনা দেয় ভারতীয় দল। ভারতীয় সেনার প্রথম দলটি সেনা ঘাঁটিতে পৌঁছয় দুপুর বারোটা নাগাদ। শেষ দলটি পৌঁছয় আড়াইটেতে। প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, শত্রুদের অধিকৃত অঞ্চলে ৪৮ ঘন্টা থেকে ভারতীয় বাহিনী পুরো অভিযানটি চালায়। কম করে আট পাকিস্তানি সেনার মৃত্যু হয়। আরো দুই –তিনজন পাক সেনা গুরুতর জখম হয়ে থাকতে পারেন।

প্রতিবেদন অনুসারে, তিন পাকিস্তানি সেনা সুবেদার পারভেজ, হাবিলদার আফতাব এবং নাইক ইমরানের কাটা মাথা, তিনটি রাইফেল ও অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে ফিরে আসে ভারতীয় বাহিনী। এবিপি আনন্দ

০৯ অক্টোবর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/ইসলাম/নাঈম/

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে