বুধবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৬, ১০:৩৬:৫৪

গোপনে ভারত-রাশিয়ার চুক্তি, দুশ্চিন্তায় পাকিস্তান

গোপনে ভারত-রাশিয়ার চুক্তি, দুশ্চিন্তায় পাকিস্তান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রাশিয়া থেকে আরও একটি পরমাণু শক্তিচালিত অ্যাটাক সাবমেরিন আনতে চলেছে ভারত। গোয়ায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকেই ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে সেই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়ে গিয়েছে বলে রুশ সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর। আকুলা-২ শ্রেণির এই পারমাণবিক অ্যাটাক সাবমেরিন ভারতের হাতে ইতিমধ্যেই একটি রয়েছে। কিন্তু ভবিষ্যত্‍ পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে দ্রুত আরও একটি আকুলা-২ সাবমেরিনকে নৌসেনার অন্তর্ভুক্ত করতে চাইছে ভারত। খবর আনন্দবাজারের।

প্রখ্যাত রুশ সংবাদপত্র ভেদোমোস্তি-তে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ''রাশিয়ার প্রতিরক্ষা শিল্প মহল সূত্রের খবর, রুশ নৌসেনা থেকে একটি মাল্টিপারপাস প্রোজেক্ট ৯৭১ নিউক্লিয়ার সাবমেরিন ভারতকে দেওয়ার বিষয়ে যে চুক্তি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা চলছিল, সে চুক্তিটি গোয়ায় স্বাক্ষরিত হয়েছে।'' রুশ সংবাদপত্রের এই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার আগে পর্যন্ত কিন্তু এই চুক্তিটির ব্যাপারে কোনও খবর সামনে আসেনি।

অন্যান্য সামরিক চুক্তির বিষয়ে ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় যে ভাবে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে এগোয়, রাশিয়ার কাছ থেকে এই দ্বিতীয় পরমাণু শক্তিচালিত সাবমেরিনটি লিজ নেওয়ার ব্যাপারে কিন্তু সেই নীতি অনুসৃত হয়নি। কিন্তু নরেন্দ্র মোদি ও ভ্লাদিমির পুতিনের উপস্থিতিতে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়ে যাওয়ার পরেও কেন তা নিয়ে ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় মুখ খুলল না, সে প্রশ্ন রয়েই গিয়েছে।

ভারতীয় নৌসেনার হাতে আসা প্রথম পরমাণু শক্তিচালিত সাবমেরিনটি হল আইএনএস চক্র। সেটিও আকুলা-২ শ্রেণির ডুবোজাহাজ। এবং সেটিও রাশিয়ার কাছ থেকে ১০ বছরের লিজেই আনা হয়েছিল। ২০১২-র এপ্রিলে আইএনএস চক্র ভারতীয় নৌসেনার অন্তর্ভুক্ত হয়। কয়েক বছরের মধ্যেই সেই লিজের মেয়াদ ফুরিয়ে যাবে। তার আগেই আর একটি আকুলা-২ নিউক্লিয়ার সাবমেরিন রাশিয়া থেকে নিয়ে আসার চুক্তি ভারত সেরে ফেলল।

আইএনএস চক্র ভারতীয় নৌসেনার হাতে আসার আগে পারমাণবিক সাবমেরিন সংক্রান্ত কোনও অভিজ্ঞতাই ভারতের ছিল না। রাশিয়ার কাছ থেকেই সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করে ভারতীয় নৌসেনা। তার পর থেকে গত চার বছরেরও বেশি সময় ধরে পারমাণবিক সাবমেরিন নিয়ে কাজ করতে করতে ভারতীয় নৌসেনা সে বিষয়ে অত্যন্ত পারদর্শী হয়ে উঠেছে। ভারত নিজেই আরও আধুনিক পরমাণু শক্তিচালিত সাবমেরিন তৈরি করে ফেলেছে। আইএনএস চক্র অর্থাত্‍ রাশিয়ার তৈরি আকুলা-২ শ্রেণির সাবমেরিন হল পরমাণু শক্তিচালিত অ্যাটাক সাবমেরিন। আর ভারতের নিজের তৈরি আইএনএস অরিহন্ত হল পরমাণু শক্তিচালিত ব্যালিস্টিক মিসাইল সাবমেরিন।

আইএনএস চক্র থেকে টর্পেডো হামলা চালানো যায়। ক্রুজ মিসাইলও ছোড়া যায়। কিন্তু আইএনএস অরিহন্ত থেকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া যায়। অর্থাত্‍ সমুদ্রের গভীরে লুকিয়ে বহু দূরের ভূখণ্ডে পরমাণু হামলা চালাতেও সক্ষম অরিহন্ত। এই শ্রেণির দ্বিতীয় সাবমেরিন আইএনএস অরিদমনের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পথে। কিন্তু আইএনএস চক্রের মতো সাবমেরিনের প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে। তাই চক্রের লিজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ওই শ্রেণির দ্বিতীয় সাবমেরিনটি নিয়ে আসার জন্য রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি সেরে ফেলল ভারত।

আকুলা-২ শ্রেণির সাবমেরিনের গতি ঘণ্টায় ৩৫ নটিক্যাল মাইল। অর্থাত্‍ প্রায় ৬৫ কিলোমিটার। পরমাণু শক্তিচালিত অ্যাটাক সাবমেরিনের আধুনিকতম শ্রেণি এটি নয়। কিন্তু এখনও আকুলা-২ সাবমেরিনকে বিশ্বের অন্যতম সেরা নিউক্লিয়ার অ্যাটাক সাবমেরিন হিসেবে গণ্য করা হয়। টর্পেডো এবং ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে প্রতিপক্ষের উপর হামলা চালাতে সক্ষম এই ডুবোজাহাজ।

ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে প্রোজেক্ট ৮৮৫ ইয়াসেন শ্রেণির সাবমেরিন কিনতে চেয়েছিল। ইয়াসেন হল এই মুহূর্তে রাশিয়ার হাতে থাকা আধুনিকতম নিউক্লিয়ার পাওয়ার্ড অ্যাটাক সাবমেরিন। কিন্তু রাশিয়া সবেমাত্র একটি ইয়াসেন তৈরি করতে পেরেছে এবং সেটি রুশ নৌসেনায় কর্মরত। আরও বেশ কিছু ইয়াসেন সাবমেরিন তৈরি হচ্ছে। কিন্তু সেগুলির নির্মাণ কাজ কবে শেষ হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। সেই কারণেই নাকি ভারত ইয়াসেনের জন্য অপেক্ষা না করে আর একটি আকুলা-২ সাবমেরিন লিজ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সমুদ্রের গভীরে যাতায়াতের সময় অত্যন্ত কম শব্দ নির্গত হয় আকুলা-২ থেকে। ফলে প্রতিপক্ষ এর উপস্থিতি টের পায় না।

দ্বিতীয় আকুলা-২ সাবমেরিনটি ভারতে আনার পর তা বিশাখাপত্তনম নৌঘাঁটিতে রাখা হবে বলে খবর। দু'ধরনের কাজে একে ব্যবহার করা হতে পারে। প্রথমত, ভারতের নিউক্লিয়ার পাওয়ার্ড ব্যালিস্টিক মিসাইল সাবমেরিনের (অরিহন্ত শ্রেণি) যে বহর তৈরি হতে চলেছে, তার সুরক্ষা নিশ্চিত করবে আকুলা-২। দ্বিতীয়ত, ভারত মহাসাগরে চিনের যে সব সাবমেরিন গোপনে নজরদারি চালায়, সেগুলির উপর নাজরদারি চালাবে রাশিয়া থেকে আনা এই সাবমেরিন।

১৯ অক্টোবর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে