শুক্রবার, ০৪ নভেম্বর, ২০১৬, ০৯:৫১:৩৪

অনন্য দৃষ্টান্ত: ১৮ বছরের পুত্রের অঙ্গদান করলেন বাবা-মা

অনন্য দৃষ্টান্ত: ১৮ বছরের পুত্রের অঙ্গদান করলেন বাবা-মা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : একমাত্র সন্তানের ‘ব্রেন ডেথে’র খবর শুনলেন তাঁরা। তারপর চোখের জল মুছে জানালেন, তাঁরা সন্তানের অঙ্গ, চোখ দান করতে চান। ১৮ বছর বয়সী স্বর্ণেন্দু রায়ের কিডনি, লিভার এবং চোখ এখন নতুন জীবন দিতে পারে পাঁচজনকে।

সংখ্যার বিচারে, ‘ব্রেন ডেথ’ হওয়ার পর অঙ্গদানের চতুর্থ ঘটনার সাক্ষী হল এ রাজ্য। তবে সংগৃহীত অঙ্গ এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে নির্বিঘ্নে নিয়ে যেতে শহরের রাস্তায় ‘গ্রিন করিডর’ তৈরি করা হল এই প্রথম!

কিশোর পুত্রের অঙ্গদানের এহেন ঘটনায় অভিভূত একাধিক চিকিত্সক। তাঁদের মতে, এত অল্পবয়সি একজনের শরীর থেকে অঙ্গসংগ্রহের ঘটনা এ রাজ্যে নজির তৈরি করবে। একমাত্র সন্তানের মৃত্যুর পর বাবা-মায়ের তরফে অঙ্গদানের এমন প্রস্তাবও রাজ্যে অঙ্গদানের ইতিহাসে প্রথম বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্যভবন।

৩০ অক্টোবর সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পথে গাড়ির ধাক্কায় গুরুতর আহত হন বসিরহাটের বাসিন্দা, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী স্বর্ণেন্দু। ইএম বাইপাসের ধারে এক বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ জানিয়ে দেন, স্বর্ণেন্দুর ‘ব্রেন ডেথ’ হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রের খবর, চোখের জল মুছে বাবা চন্দ্রশেখর রায় এক চিকিত্সককে বলেন, ‘আমার ছেলের অঙ্গ দান করতে চাই। যা যা অঙ্গ নেওয়া সম্ভব, নিয়ে নিন।’ মা সুজাতা বলেন, ‘ছেলেটার শরীরের অংশে অন্য কেউ বাঁচুক। সেখানেই বেঁচে থাকবে আমার সন্তান।’

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করেন স্বাস্থ্যভবনে। অতিরিক্ত স্বাস্থ্য অধিকর্তা (প্রশাসন) অদিতিকিশোর সরকার সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেন। তিনি বলেন, ‘‘চার সদস্যের বিশেষজ্ঞ দল স্বর্ণেন্দুর ব্রেন ডেথ ঘোষণা করেন। আমরা ডি সি ট্র্যাফিক ভি সলোমন নেশাকুমারের সঙ্গে কথা বলি। অঙ্গসংগ্রহের পর তা এস এস কে এম পর্যন্ত নিয়ে যেতে যাতে রাস্তায় সিগন্যালে আটকাতে না হয় বা অন্য বাধার মুখে পড়তে না হয়, সেজন্য গ্রিন করিডর তৈরির অনুরোধ করি। পুলিশ সঙ্গে সঙ্গেই সাহায্য করেছে। রাজ্যে এই প্রথম গ্রিন করিডরের মাধ্যমে সংগৃহীত অঙ্গ নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা হল।’’

এদিন বিকেল ৫টা নাগাদ শুরু হয় অঙ্গ সংগ্রহ এবং প্রতিস্থাপনের প্রস্তুতি। স্বাস্থ্যভবন সূত্রের খবর, ওই বেসরকারি হাসপাতালে চিকিত্সাধীন, বালির বাসিন্দা রীতা ভদ্রের শরীরে স্বর্ণেন্দুর একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করা হবে। অন্য কিডনিটি এস এস কে এমে চিকিত্সাধীন একজনের শরীরে প্রতিস্থাপিত হবে। লিভার প্রতিস্থাপন করা হবে ওই হাসপাতালে ভর্তি সংযুক্তা মণ্ডলের শরীরে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, লিভারের দুরারোগ্য অসুখে পাঁচবছর ধরে আক্রান্ত সংযুক্তা।

অদিতিকিশোর বলেন, ‘‘স্বর্ণেন্দুর বাবা-মাকে, পরিবারকে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এমন মানুষদের প্রণাম!’’ -এবেলা।
০৪ নভেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে