আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বাংলা ঘেঁষে বাংলাদেশে ধেয়ে আসছে ‘নাডা’। আর যত এগোচ্ছে, শক্তি সঞ্চয় করে আরও গতি বাড়াচ্ছে বাংলাদেশমুখী এই গভীর নিম্নচাপ। শনিবারের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মাঝে উপকূলবর্তী এলাকায় প্রায় ৬০ কিলোমিটার গতিবেগে এই ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়তে পারে বলে জানিয়েছে মৌসম ভবন।
মূলত দক্ষিণবঙ্গের উপকূলবর্তী এলাকা-সহ দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি ও দুই মেদিনীপুরে এর প্রভাব পড়বে বলে জানিয়ে দিল আলিপুর আবহাওয়া দফতর৷ উৎসবের মরশুমে, বিশেষ করে ছটপুজোর মুখে রাজ্যের আবহাওয়ার এমন পরিবর্তন রীতিমতো শঙ্কা জাগিয়েছে রাজ্যের মানুষের মধ্যে।
তবে মৌসম ভবনের সতর্কতা জারির সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে নিয়েছে রাজ্য প্রশাসন৷ উপকূলবর্তী এলাকায় বিশেষ সতর্কতা জারির পাশাপাশি সম্ভাব্য সব এলাকায় জরুরি বিভাগগুলিকে সতর্ক করা হয়েছে৷ সেচ দফতরের পাশাপাশি কলকাতা পুরসভা ও সংশ্লিষ্ট এলাকার পুরসভাগুলিতেও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে৷ তৈরি রয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা দলও।
বাংলার উপকূলে এসে আঘাত করলেও ‘নাডা’ যে সরাসরি বাংলায় আছড়ে পড়বে তা বলছে না মৌসম ভবন৷ বাংলার দিকে এগোনোর মুখে অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা উপকূল ঘেঁষে আসতে হবে তাকে৷ ফলে ওই উপকূলবর্তী এলাকাতেও তার অনেকটাই প্রভাব পড়বে৷ একইসঙ্গে বাংলায় প্রবল ক্ষতির সম্ভাবনা কমবে৷ এমন পরিস্থিতির পূর্বাভাস হিসাবে বৃহস্পতিবার থেকেই বজ্রগর্ভ বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে৷ আজ থেকে ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে বাড়বে বৃষ্টিপাতের পরিমাণও৷ সব থেকে বেশি বৃষ্টি হওয়ার কথা অন্ধ্রপ্রদেশ ও এ রাজ্যে।
কিয়ন্তের পর বিশাখাপত্তনমের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব কোণে পারাদ্বীপের কাছে নতুন করে একটি নিম্নচাপ ঘনীভূত হতে শুরু করে দু’দিন আগেই৷ সে সময়ই জানিয়ে দেওয়া হয় এর প্রভাবে শীতও পিছোবে৷ এর প্রভাবেই আর্দ্রতা বেড়ে আবহাওয়া উষ্ণ হতে শুরু করে৷ বৃহস্পতিবার প্যাচপেচে গরমে রীতিমতো হাঁসফাঁস অবস্থা হয়৷ তবে সরাসরি সতর্কতা জারি না করলেও শঙ্কার কিছুটা আভাস মিলেছিল৷ কিন্তু সেই নিম্নচাপ ইতিমধ্যেই শক্তি সঞ্চয় করে ফেলেছে বলে বৃহস্পতিবার সতর্কতা জারি করে দিল মৌসম ভবন।
মৌসম ভবনের সাইক্লোন সংক্রান্ত বিভাগের প্রধান এম মহাপাত্র জানিয়েছেন, শুক্রবারের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিয়ে নিম্নচাপটি উত্তরপশ্চিম দিশায় অর্থাৎ ভারতের দক্ষিণ উপকূলে ধেয়ে আসবে৷ যার প্রভাব পড়বে অন্ধ্র উপকূলে৷ পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তার মুখ ঘুরে যাবে বাংলাদেশ উপকূলের দিকে৷ যার জেরে ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরের মধ্যবর্তী এলাকায় সমুদ্রে তীব্র জলোচ্ছাস দেখা দেবে।
বাংলাদেশের এলাকায় আছড়ে পড়ার পর এই ঘূর্ণিঝড় মণিপুর, মিজোরাম হয়ে ত্রিপুরার দিকে চলে যাওয়ার কথা৷ সার্বিকভাবে এই পরিস্থিতির কথা জানিয়ে জেলে-মাঝিদেরও সমুদ্রে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
আবহাওয়ার এই পরিবর্তনের জেরে অনেকেই বড়সড় ক্ষতির শঙ্কা প্রকাশ করেছেন৷ তবে ঘূর্ণিঝড় হলেও তা কোনও বিধ্বংসী চেহারা নিতে পারবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন আবহবিদরা।
দিল্লির মৌসম ভবন জানিয়েছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গভীর নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ের চেহারা নিলেও তা মূলত দু’টি ভাগে ভাগ হয়ে ভারত ও বাংলাদেশে প্রবেশ করবে। এর ৬০ শতাংশ অন্ধ্র, ওড়িশা ও বাংলার উপকূলে প্রবেশ করবে৷ তার জেরে মূলত ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে প্রবল বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা। ৩০ শতাংশ বাংলাদেশ উপকূলে আছড়ে পড়বে। যার জেরে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত অন্ধ্র ও ওড়িশার বিভিন্ন অংশে ভারী বৃষ্টিপাত হবে। বাংলায় সেই বৃষ্টিপাতের জের চলবে আরও একদিন পর্যন্ত।
এদিন কলকাতার সর্বাধিক তাপমাত্রা ছিল ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গেই এমন উষ্ণতা বৃদ্ধি। তার সঙ্গে দুপুর থেকেই আকাশ কালো করে মেঘ সঞ্চারিত হয়৷ শুরু হয় টানা প্রবল বৃষ্টিপাত। আগামিকাল পর্যন্ত এই পরিস্থিতি থাকবে। রবিবার থেকে আকাশ পরিচ্ছন্ন হতে শুরু করলেও ভারী বৃষ্টিপাত চলবে বলে জানিয়েছে আলিপুর হাওয়া অফিস। সংবাদ প্রতিদিন।
০৪ নভেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম