শনিবার, ০৫ নভেম্বর, ২০১৬, ০১:১৬:৩৭

পাকিস্তান চিন এই কারণেই 'বন্ধু'

পাকিস্তান চিন এই কারণেই 'বন্ধু'

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পাকিস্তান আর ভারতের এখন সম্পর্কটা কেমন? এই প্রশ্নটা করলেই সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ কোনও গভীর তত্ত্বে না গিয়েই সোজা উত্তর দেন ভারত এবং পাকিস্তান 'শত্রু'। আর যদি 'শত্রু' নাও বলেন, উত্তরটা হয় ভারত এবং পাকিস্তান 'মিত্র' নয়। কারণটা অবশ্যই দুই দেশের ইতিহাস।

জন্মলগ্ন থেকেই ভাগাভাগির ইতিহাসে হৃদয় বিষাক্ত হয়েছে লাখো লাখো মানুষের। কখনও বাংলাদেশের স্বাধীনতা, কখনও ভূস্বর্গ কাশ্মীর নিয়ে টানাপোড়েন। রয়েছে সন্ত্রাসের মত জ্বলন্ত বিষয়টাও। তবে পরিস্থিতির পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে ভারত আর পাকিস্তানের এই টানাপড়েনে যে বিষয়টা সবথেকে বেশি চর্চিত, তা হল কাশ্মীর।

একদিকে পাকিস্তান অন্যদিকে একটু একটু করে চিনের আস্ফালন। চিনও কি কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে চায়? হয়ত হ্যাঁ! একটা কাশ্মীর নিয়ে তিন দেশের তিন অবস্থান। তবে এই অবস্থানে যে বিষয়টি নজর এড়িয়ে যায় না কোনও দিন, তা হল, পাকিস্তানের অবস্থান নিয়ে চিনের মত। ভারতের মত বাজারকে চিন কখনই অবহেলা করে না, নিজের দেশের বাইরে এত বড় বাজার পাওয়াও কার্যত কঠিন। তাই ভারতকে না চটিয়েই পাকিস্তানের সঙ্গে বন্ধুতা বজায় রেখেছে চিন। কিন্তু কেন?

একে একে উত্তরগুলো খোঁজা যাক:

বন্ধুত্বের শুরুটা ১৯৫০ থেকে। স্বাধীনতা প্রাপ্তির মাত্র তিন বছরের মধ্যেই ১৯৫০ সালে চিনের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়ায় মুসলিম প্রধান দেশ পাকিস্তান। বিশ্বের অকমিউনিস্ট দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তানও একটি দেশ যারা চিনকে গণপ্রজাতন্ত্রী হিসেবেই স্বীকার করেছে।

 এরপর পাকিস্তান দ্বিতীয় পদক্ষেপ গ্রহন করে এক দশক পরে। সাল ১৯৬৩, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের (Pok) শাক্সগম উপত্যকার ৯,৯০০ কিলোমিটার ভূখণ্ড চিনকে সমর্পণ করে পাকিস্তান।  সাল ১৯৭১। পাকিস্তানের সহায়তায় চিন পরিদর্শন করেন ইউএস সেক্রেটারি অব স্টেট হেনরি কিসিংগার।

এরপর ১৯৭৮ সালে খুলে দেওয়া হয় কারাকোরাম হাইওয়ে। যে পথে উত্তর পাকিস্তান থেকে সোজাসুজি দক্ষিণ চিনে যাওয়া যায়। সুগম হয় স্থলপথের যোগাযোগ। দুই দেশের মধ্যে বাড়ে আত্মিকতা। সোভিয়েতের বিরুদ্ধে আফগানদের যুদ্ধে চিন এবং আমেরিকার সঙ্গে সহযোগিতা করে ১৯৮০ সালে আফগানিস্তানকে সাহায্য করে পাকিস্তান।

১৯৮৬ সালে পাকিস্তান এবং চিন যৌথ নিউক্লিয়ার সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করে। ১৯৯৯ সালেই পাক পাঞ্জাবে ৩০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন নিউক্লিয়ার প্ল্যান্ট তৈরি হয়। সহযোগিতা করে একমাত্র চিন। ২০০২ সালে গদর বন্দর তৈরিতেও সাহায্য করে পাকিস্তানের 'কমিউনিস্ট বন্ধু' চিন। 

সাল ২০০৪, পাকিস্তানের হাতে নিউক্লিয়ার বোমার ব্লু প্রিন্ট তুলে দেয় চিন, এমনই দাবি করেন পাক পরমাণু বিজ্ঞানি আব্দুর কাদির খান। ২০০৭ সালে চিন এবং পাকিস্তান যৌথ যুদ্ধ বিমানের মহড়া চালায়। ২০১০ সালে চিনের তৎকালীন রাষ্ট্রনায়ক ওয়েন জিয়াবাও পাকিস্তান সফর করেন এবং ৩০ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক লেনদেনের চুক্তি স্বাক্ষর করেন।

২০১৩ সালে পাকিস্তানের করাচিতে ১১০০ মেগাওয়াট নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরিতে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করে চিন।  একবছরের মধ্যে চিনের রাষ্ট্রনায়ক লি কেকিয়াং পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রোজক্টে ৩১.৫ বিলিয়িন ডলার অর্থ বিনিয়োগ করার কথা ঘোষণা করেন। এরই মধ্যে পাকিস্তান ও চিনের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় 19 CPEC (চিন পাকিস্তান ইকোনমিক করিডর) চুক্তি। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে চিনকে সামরিক সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়।

চিনা প্রেসিডেন্ট জি জিনপিং ২০১৫ প্রথমবার পাকিস্তানে প্রেসিডেন্সিয়াল ভিসিটে আসেন। CPEC মৌ স্বাক্ষরিত হয় দুই দেশের মধ্যে। ২০১৬ সালে চিনের সঙ্গে পাকিস্তানের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়- ২০২৮ সালের মধ্যেই ৮টি ডিসেল-ইলেকট্রিক সাবমেরিন পাকিস্তানকে দেবে চিন।-জিনিউজ

০৫ নভেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে