আন্তর্জাতিক ডেস্ক : টালির চালার বাঁশে ঘুণ। পচে গিয়েছে কড়ি-বরগা। বৃষ্টি হলে পানি পড়ে। দেওয়ালে নোনা। উৎপাত ইঁদুর, পোকা-মাকড়ের। যে কোনও সময় ভেঙেও পড়তে পারে এই ঘর।
দশ বাই দশের এই স্যাঁতস্যাঁতে জায়গা ভারতের যে কোনও মুখ্যমন্ত্রীর থাকার উপযুক্ত নয়, তা অনেক আগেই বলে দিয়েছিল নিরাপত্তা অফিসাররা। স্থপতিরাও ফিট সার্টিফিকেট দেয়নি। কিন্তু তিনি গোঁ ধরে ছিলেন, এখানে, এই ভাবেই থাকবেন৷ অবশেষে নিরাপত্তা অফিসারদের জেদের কাছে হার মানতে হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। আপাতত এক মাসের জন্য ৩০ বি হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের বাড়ি ছাড়তে হবে।
ওই সময় তিনি থাকতে চান তৃণমূলভবনে। একান্ত সেখানে সম্ভব না হলে কলকাতার মধ্যে কোনও সরকারি অতিথিশালায়৷ নবান্ন সূত্রে শুক্রবার জানা গিয়েছে, শীঘ্রই মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি সংস্কারের কাজ শুরু হবে৷ মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে৷ নানা বিষয় খতিয়ে দেখার পাশাপাশি, তাঁর বাড়ির হাল নিয়েও আলোচনা হয়৷ অফিসাররা তখনই সিদ্ধান্ত নেন, মুখ্যমন্ত্রী রাজি না হলেও তাঁকে বোঝাতে হবে। অবিলম্বে তাঁর বাড়ি মেরামত দরকার।
প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় অটলবিহারী বাজপেয়ী এসে তাঁর টালির চালা দেখে হতবাক হয়ে যান৷ পরে বলেছিলেন, “মমতা তুমি এখানে থাকো!” তৎকালীন উপরাষ্ট্রপতি ভৈরোঁ সিং শেখাওয়াত, জর্জ ফার্ন্ডান্ডেজের মতো দিল্লির তাবড় নেতারা এসেছেন৷ এসেছেন শ্যাম পিত্রোদার মতো আন্তর্জাতিক মাপের বিশিষ্ট মানুষও৷ তাঁরা সবাই অবাক হয়েছেন মমতার ঘর দেখে৷ কেন তিনি জনগণের নেত্রী তা বুঝে গিয়েছেন ৩০বি-তে পা দিয়ে৷ আসলে সাধারণ মানুষ যেমন মমতাকে নিজের ঘরে মেয়ে মনে করেন, তেমনই মমতাও চান তাদের মতোই থাকতে৷ তাই মুখ্যমন্ত্রী হয়েও বাড়ি বদল করেননি।
এই ঘর তাঁর কাছে পবিত্র মন্দির। মা গায়ত্রীদেবীর কত মধুর স্মৃতি এখানে। এক সময় ছিল মা-মেয়ের সংসার৷ এখন একা৷ এ কাহিনি কালীঘাটের আদি গঙ্গার পাড়ে যেন এক উপাখ্যান৷ যখন তিনি মুখ্যমন্ত্রী হন, তখন অনেকেই ভেবেছিলেন মমতা বাড়ি বদল করবেন৷ তিনি তা করেননি৷ এখনও করছেন না৷ মাত্র এক মাস সময়, বাড়ি সংস্কার শেষ হলে আবার ফিরে আসবেন নিজের আস্তানায়৷ তবে টালির চালা টালিরই থাকছে৷ কোনও বাহুল্য স্পর্শ করবে না৷ শুধু নিরাপত্তার কারণে যে টুকু ব্যবস্থা করা দরকার তাই-ই করা হবে৷ এবং সবটাই হবে নিজের খরচে।
অতীতে মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে আমৃত্যু জ্যোতি বসু ছিলেন সরকারি আবাস ইন্দিরাভবনে৷বুদ্ধবাবু এখনও রয়েছেন পাম অ্যাভিনিউয়ে সরকারি ফ্ল্যাটে৷ তবে সিদ্ধার্থশংকর রায় থাকতেন তাঁর নিজের বেলতলার বাসভবনে।
মমতা কিন্তু অন্যরকম৷ যেমন সরকারি গাড়ি চড়েন না, সরকারি অতিথিশালায় গেলে ভাড়া দিয়ে থাকেন, তেমনই নিজের টালির চালায় পাকাপাকি ব্যবস্থা। এই এক মাস মুখ্যমন্ত্রী কোথায় থাকবেন, তা নিয়ে খোঁজখবর চলেছে৷ নিরাপত্তার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ মমতার পছন্দ তৃণমূলভবন৷ অতীতে তিনি বহুবার সেখানে থেকেছেন৷ কিন্তু সরকারি আবাসগুলির মধ্যে মিন্টো পার্ক, গোলপার্ক হেস্টিং ইত্যাদি এলাকায় অতিথিশালা রয়েছে৷ সবই সাদামাটা৷ নতুন সরকারি বাড়ি সৌজন্যের কাজ শেষ হয়নি৷ ফলে কোনও একটিতে এক মাসে কাটিয়ে দিয়ে আবার কালীঘাটে নিজের ঘরে ফিরবেন মুখ্যমন্ত্রী।
শুধু দোরগোড়ায় ফুলের গাছগুলো তিরিশ দিন থাকবে একা। -সংবাদ প্রতিদিন।
০৫ নভেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম