আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ঘনিয়ে এসেছে বহুল প্রতীক্ষিত মার্কিন নির্বাচন। আর মাত্র দুই দিন। ব্যাটলগ্রাউন্ড অঙ্গরাজ্যগুলোতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত মিলছে জরিপগুলোতে। প্রেসিডেন্সি জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ২৭০টি ইলেক্টোরাল ভোট অর্জন নিশ্চিত করতে শীর্ষ দুই প্রার্থী দেশজুড়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এনবিসি নিউজের এক বিশ্লেষণে বলা হয়, জয়ের জন্য সহজতর পথ দেখা যাচ্ছে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের। এনবিসির অনুমান মতে ১৮২ ইলেক্টোরাল ভোট হিলারির জন্য নিশ্চিত। আরো ৯২ ইলেক্টোরাল ডেমোক্রেটদের দিকেই ঝোঁকা। সবমিলিয়ে ২৭৪টি। পক্ষান্তরে রিপাবলিকান প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে ৭১টি ইলেক্টোরাল ভোট মোটামুটি নিশ্চিত। আরো ১০৯টির প্রবণতা বেশি রিপাবলিকান দলের প্রতি। সব মিলিয়ে ১৮০টি ইলেক্টোরাল।
তবে, নতুন নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবতারণা সাপেক্ষে অঙ্গরাজ্যগুলোতে অবস্থান পরিবর্তন হতে দেখা গেছে। সে বিবেচনায় এ হিসাবনিকাশ পাল্টে যাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। সেটা মাথায় রেখে বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে দেখে নেয়া যাক শীর্ষ দুই প্রার্থী সম্ভাব্য কি কি উপায়ে জয়ী হতে পারবেন।
হিলারির জন্য জয়ের পথ:
১. হিলারি ক্লিনটন যদি বেশির ভাগ ব্যাটলগ্রাউন্ড অঙ্গরাজ্যগুলোতে জয়ী হন, তাহলে তিনি ২০১২ সালে মিট রমনির বিরুদ্ধে বারাক ওবামার অর্জিত ফলের পুনরাবৃত্তি করতে সক্ষম হবেন অনেকাংশে। তবে, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, হয়তো তিনি নর্থ ক্যারোলিনা অঙ্গরাজ্যে জিতবেন, তবে হারবেন আইওয়াতে। ওবামার বেলায় হয়েছিল উল্টোটা। নর্থ ক্যারোলিনায় পটপরিবর্তন হচ্ছে দ্রুত। সেখানে ডেমোক্রেটদের পক্ষে সমর্থন বেশি ঝুঁকছে। সেক্ষেত্রে ২০১২ সালের ইলেক্টোরাল মানচিত্রে সামান্য পরিবর্তন এসে সম্ভাব্য ফল দাঁড়াবে হিলারি ৩৪০ ইলেক্টোরাল বনাম ট্রাম্প ১৯৮ ইলেক্টোরাল।
২. রাস্ট বেল্ট অঙ্গরাজ্যগুলোতে (ইলিনয়, ইন্ডিয়ানা, মিশিগান, ওহাইয়ো, পেনসিলভেনিয়া, আইওয়া, উইসকনসিন) পরিস্থিতি হাড্ডাহাড্ডি হওয়ার জোরালো সম্ভাবনা দেখা গেছে জরিপে। ট্রাম্পের প্রচারণা শিবির এদিকে মনোযোগ দিয়েছে। এসব অঞ্চলের শ্রমজীবী শ্বেতাঙ্গ ভোটাররা ট্রাম্পের বাণিজ্যবিরোধী ও ওয়াশিংটন বিরোধী বার্তায় আকৃষ্ট হচ্ছে।
ট্রাম্প শিবিরের জন্য সমস্যা হলো হিলারি ওহাইয়ো, আইওয়া, পেনসিলভেনিয়া, মিশিগান ও উইসকনসিনে হারলেও দক্ষিণ ও পশ্চিমের অঙ্গরাজ্যগুলো অর্থাৎ সান বেল্ট স্টেটগুলো জিতে সেটা কভার করতে পারবেন। সান বেল্ট স্টেটগুলো হলো: আলাবামা, আরিজোনা, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, লুইজিয়ানা, মিসিসিপি, নিউ মেক্সিকো, সাউথ ক্যারোলিনা, টেক্সাস, ক্যালিফোর্নিয়ার সিংহভাগ, আরকানসাসের অংশবিশেষ, নর্থ ক্যারোলিনা, নেভাদা ও ওকলাহোমা। এই হিসাব অনুযায়ী রাস্ট বেল্ট হারিয়ে সান বেল্ট জিতলে হিলারি জয়ী হবেন ২৮৭ বনাম ২৫১ ইলেক্টোরাল ভোটে।
৩. ফ্লোরিডা ও ওহাইয়োতে ট্রাম্পের অবস্থা বেশ ভালো। এ দুই অঙ্গরাজ্য নিয়ে ট্রাম্প শিবির অত্যন্ত আশাবাদী। ট্রাম্প যদি গুরুত্বপূর্ণ এ দুই অঙ্গরাজ্যে জয়ী হন সেক্ষেত্রে এ দু’টো ছাড়াই জেতার চেষ্টা করতে হবে হিলারিকে। এটা সহজ নয়। ১৯৬০ সালের পর তেমন নজির নেই। তবে যদি তিনি মধ্য-পশ্চিম ও পশ্চিমের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যগুলোতে জিততে পারেন সেক্ষেত্রে শেষ হাসি তিনিই হাসবেন। এমনকি গুরুত্বপূর্ণ নর্থ ক্যারোলিনা ছাড়াই। ফ্লোরিডা ও ওহাইয়ো হারা সত্ত্বেও জয়ী হওয়ার এই হিসাবে হিলারি পাবেন ২৭৮ ইলেক্টোরাল। আর ট্রাম্প ২৬০।
ট্রাম্পের জন্য জয়ের পথ:
১. ট্রাম্প শিবিরের বিশ্বাস তারা রাস্ট বেল্ট অঙ্গরাজ্যগুলোতে জয়ী হবে। এই অঙ্গরাজ্যগুলো ঐতিহাসিকভাবে রিপাবলিকান সমর্থনপুষ্ট। ট্রাম্প যদি পেনসিলভেনিয়া ও উইসকনসিনের মতো অঙ্গরাজ্যগুলোতে জয়ী হন তাহলে জয়ের পথেই এগোবেন তিনি। তবে, চূড়ান্ত বিজয়ের জন্য তাকে ফ্লোরিডার মতো কোনো একটি অঙ্গরাজ্যে জিততে হবে। তেমনটা হলে সম্ভাব্য ২৭৯টি ইলেক্টোরাল পাবেন ট্রাম্প। হিলারি পাবেন ২৫৯টি।
২. হিলারি যদি পেনসিলভেনিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা ও নিউ হ্যাম্পশায়ার জেতেন তাহলে ট্রাম্পকে মধ্য-পশ্চিমের আরেকটি রাজ্য যেমন মিশিগান বা কলোরাডোর মতো একটি অঙ্গরাজ্যে জিততে হবে। তেমন পরিস্থিতিতে ট্রাম্প জিতবেন ২৭১ ইলেক্টোরাল পেয়ে। আর হিলারির ঝুলিতে থাকবে ২৬৭।
৩. ট্রাম্প যদি উইসকনসিন, মিশিগান বা পেনসিলভেনিয়াতে জিততে ব্যর্থ হন তাহলে তাকে কলোরাডোর মতো কোনো একটি অঙ্গরাজ্য জিততে হবে। পাশাপাশি নর্থ ক্যারোলিনা ও নিউ হ্যাম্পশায়ারে হিলারির জয় ঠেকাতে হবে। সেটা করতে সক্ষম হলে ট্রাম্প সম্ভাব্য ২৭৩ ইলেক্টোরাল পাবেন। হিলারি পাবেন ২৬৫টি। আজকাল
০৭ নভেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি