মঙ্গলবার, ০৮ নভেম্বর, ২০১৬, ০১:১৯:৪৩

হিলারি ক্লিনটন নির্বাচিত হলে কেমন হবে দুনিয়া

হিলারি ক্লিনটন নির্বাচিত হলে কেমন হবে দুনিয়া

হাসনাইন মেহেদী : মাহেন্দ্রক্ষণের দ্বারপ্রান্তে যুক্তরাষ্ট্র। পুরো বিশ্ব এখন তাকিয়ে আছে দেশটির দিকে। মার্কিনিরা কাকে বেছে নেবেন পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে? রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প নাকি ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। সেই প্রশ্নের উত্তর মিলবে শিগগিরই।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে কে সেরা পছন্দ তা নিয়ে ভোটের নানা জল্পনাকল্পনা, বিশ্লেষণ হয়েছে। বেশির ভাগ রাজনৈতিক বোদ্ধাই অভিমত দিয়েছেন হিলারিই সেরা প্রার্থী। বৃটেনের প্রভাবশালী ইকোনমিস্টের এক লেখার শিরোনাম ছিল আমেরিকার সেরা ভরসা হিলারি। ওদিকে, গার্ডিয়ান লিখেছে গোটা বিশ্বের জন্যই ভরসা হিলারি ক্লিনটন।

কেননা, মার্কিন নির্বাচন মার্কিন মুল্লুক ছাপিয়ে পুরো বিশ্বের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে যোগ্য নন- এমন অভিমত দিয়েছেন অনেকে। হিলারি ক্লিনটন শুধু যে এ কারণেই সেরা পছন্দ তা কিন্তু নয়। সফলতার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দায়িত্ব পালনের প্রুভেন ট্র্যাক রেকর্ড রয়েছে তার। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে অত্যন্ত সফল ছিলেন হিলারি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে বিশ্বব্যাপী নারী স্বাধীনতা ও মানবাধিকার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তিনি।

আমাদের প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার পেছনে সফল কূটনৈতিক তৎপরতা ছিল হিলারির। মার্কিন সিনেটের ডেমোক্রেটিক নেতা হ্যারি রিডের ভাষ্যমতে, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার দ্বিতীয় মেয়াদের পররাষ্ট্র নীতিতেও হিলারি ক্লিনটনের ছোঁয়া রয়েছে। নিউ মেক্সিকোর সাবেক গভর্নর বিল রিচার্ডসন বলেন, জর্জ ডব্লিউ বুশ প্রশাসনের পর বিশ্বজুড়ে মার্কিন নেতৃত্ব এবং সুনাম ফিরিয়ে আনতে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন হিলারি।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে শুরু করে এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরালো করার পেছনে কাজ করেছেন হিলারি। এসব অর্জন নিঃসন্দেহে পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে হিলারিকেই এগিয়ে রাখে অনেকখানি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে হিলারির সামনে নতুন অনেক চ্যালেঞ্জ থাকবে সন্দেহ নেই। শুধু আমেরিকাতেই নয়, বিশ্বজুড়ে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সফল দুই মেয়াদের পর সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখাটাও একটা চ্যালেঞ্জ। প্রথমদিন থেকেই হিলারির পররাষ্ট্রনীতির দিকে চোখ থাকবে সারা বিশ্বের।  

সম্ভবত সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক ইস্যুগুলোর শীর্ষে থাকবে মধ্যপ্রাচ্য সংকট। সিরিয়াতে তিনি নো-ফ্লাই জোন স্থাপনের কথা বলেছেন। তিনি হয়তো চাইবেন আইএসের সঙ্গে লড়াইয়ের পাশাপাশি বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার ওপর জোর দিতে। সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে মার্কিন অবস্থান ওবামা প্রশাসনে যতটা জোরালো ছিল হিলারি প্রশাসনে তা আরো বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে আসাদ সরকার এবং শেষমেশ রাশিয়ার সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থান সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছেন অনেক বোদ্ধা।

ওদিকে, ইউরোপের মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার চেষ্টা করবেন হিলারি। চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের জটিল সম্পর্ক সূক্ষ্ম বিচক্ষণতা দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাবেন বলেই প্রত্যাশা করা যায়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে হিলারির এ দিকটা আমরা দেখেছি। তিনি বোঝেন যে, এটা ২১ শতাব্দি। এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনটা অপেক্ষাকৃত সহজ। অন্য কথায় বিশ্বায়ন ও দেশগুলোর মধ্যকার সংযোগ, যোগাযোগ, বাণিজ্য জোরদার করার গুরুত্বটা অনুধাবন করেন তিনি।

এখানেই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ট্রাম্পের সঙ্গে তার অন্যতম পার্থক্য। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় তিনি বিশ্বে জটিল মার্কিন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কগুলোর ক্ষেত্রে এই বিচক্ষণতা ব্যবহার করেছেন। বিশ্বশক্তির সঙ্গে ইরানের ঐতিহাসিক চুক্তির পেছনে তিনি ভূমিকা রেখেছেন। কিউবার সঙ্গে নতুন সম্পর্ক স্থাপনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে চাপ দিয়ে আসছিলেন হিলারি। এরই সূত্র ধরে গেল বছর প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা অর্ধ শতকের বেশি সময় পর কিউবার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক নতুন করে স্থাপন করেছেন।

পক্ষান্তরে, বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে সচেষ্ট হবেন হিলারি। জলবায়ু পরিবর্তন ও উন্নয়ন নিয়ে দেশগুলোর সঙ্গে তিনি কাজ করবেন। বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য সম্পর্ক বেগবান করবেন। বহির্বিশ্বে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পাশাপাশি একইসঙ্গে নিজ দেশে অনেক চ্যালেঞ্জ থাকবে হিলারির। ই-মেইল কেলেঙ্কারি তার সুনামের ওপর অনেকখানি দাগ ফেলেছে। সেটা উত্তরণে সচেষ্ট হবেন হিলারি।

এটাও সত্যি যে, এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সামর্থ্য ও অভিজ্ঞতা দুটোই তার রয়েছে। একাধিক ক্লান্তিকর নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন তিনি। লড়েছেন ক্যারিশম্যাটিক এক কৃষ্ণাঙ্গ প্রার্থীর বিরুদ্ধে। লড়েছেন নতুন প্রজন্মের ডেমোক্রেটিক সমর্থকদের উজ্জীবিত করে তোলা বর্ষীয়ান এক রাজনীতিকের বিপক্ষে। ল’ফার্ম, বিমান আর ক্যাপিটল হিলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় ব্যয় করেছেন।

বেনগাজি ইস্যুতে কংগ্রেস কমিটির সামনে ১১ ঘণ্টা প্রশ্নবাণের মুখোমুখি হয়েছেন। প্রতিকূলতা আর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার টেম্পারমেন্ট যদি এবারের কোনো প্রার্থীর থেকে থাকে তাহলে তিনি হিলারি ক্লিনটন। যুক্তরাষ্ট্রের সফল নারী রাজনীতিকদের মধ্যে সব থেকে সমৃদ্ধ ক্যারিয়ার তারই। অর্জনের পাল্লাও তারটাই ভারী। দেশটির ইতিহাসে প্রথম ম্যাডাম প্রেসিডেন্ট সম্বোধনটা তার জন্যই মানানসই। এমজমিন

৮ নভেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি‌

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে