রবিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:১৯:১১

ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতিমধ্যেই ৯বার ভোটারদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন

ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতিমধ্যেই ৯বার ভোটারদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী প্রচারণার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বিভক্তিমূলক এবং উদ্ভট প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণা অভিযানের সময়।

সমর্থকরা তাকে একজন স্পষ্টভাষী আমূল পরিবর্তনকামী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু তারা কি এটা বুঝতে পারছেন যখন একজন রাজনীতিবিদ নির্বাচনে জেতার জন্য যা খুশি তা বলেন তাতে কী ঘটে?

. ওবামা কেয়ার বাতিল করা
ট্রাম্প বারাক ওবামার বিখ্যাত স্বাস্থ্যনীতি বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন। অথচ ওই স্বাস্থ্যনীতির মাধ্যমেই আমেরিকার লাখ লাখ গরীব মানুষ স্বাস্থ্যসেবায় প্রবেশাধিকার পেয়েছেন।
নির্বাচনের আগে ট্রাম্প বলেন, আমরা কাজটি খুব দ্রুতই করব। এটি একটি বিপর্যয়।
অথচ নির্বাচনের পরে তিনি এখন বলছেন, ওবামার স্বাস্থ্যনীতিতে শুধু কিছু সংস্কার সাধন করবেন তিনি।

২. হিলারিকে জেলা খাটানো
ইমেইল কেলেঙ্কারিতে ফৌঁজদারি অভিযোগ এনে হিলারিকে বিচারের মুখোমুখি করে জেল খাটানোর কথা বলেছিলেন ট্রাম্প। ওই কেলেঙ্কারিকে ট্রাম্প “ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির চেয়েও বড়” বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।
কিন্তু নির্বাচনে জয় লাভের পর এখন তিনি বলছেন, “এ বিষয়টি নিয়ে আমি তত বেশি একটা ভাবিনি”।

৩. মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল
মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ ছিল সম্ভবত ট্রাম্পের সবচেয়ে অনাপোষমূলক প্রতিশ্রুতি। সীমান্ত পেরিয়ে আসা মেক্সিকান অভিবাসীদেরকে মাদক বিক্রেতা, অপরাধী হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন ট্রাম্প। আর তাদেরকে ঠেকাতে একটি সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কথা বলেছিলেন ট্রাম্প।
কিন্তু হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভ এর সাবেক স্পিকার এবং ট্রাম্পের উপদেষ্টা নিউট গিঙ্গরিচ এখন সন্দেহ প্রকাশ করছেন, ট্রাম্প মেক্সিকো সীমান্তে সত্যি সত্যিই দেয়াল নির্মাণ করবেন কিনা তা নিশ্চিত নয়।

৪. মুসলিমদের নিষিদ্ধ করা
২০১৫ সালে ট্রাম্প যখন ঘোষণা করেছিলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের প্রবেশ পুরোপুরি বন্ধ করবেন তখন তার সমর্থকরা উল্লসিত হয়েছিলেন। কিন্তু এখন তিনি বলছেন, যেসব দেশে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে সক্রিয় রয়েছে শুধু সেসব দেশের মুসলিমদের ওপরই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করবেন।
কিন্তু নির্বাচনের পর এক রিপাবলিকান নেতার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এক সংবাদিক ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন, “আপনি কি মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির ব্যাপারে কংগ্রেসকে আহবান জানাবেন?”
কিন্তু ট্রাম্প ওই প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে চলে যান।

৫. চীনের ওপর কর আরোপ
মার্কিন শিল্প ধ্বংসের জন্য বিদেশি শক্তিগুলোকে দায়ী করার সময় ট্রাম্প চীনের দিকেও আঙ্গুল তুলেছেন। তিনি চীনা পণ্য দ্রব্যের ওপর ৪৫% কর আরোপ করার কথা বলেন। কিন্তু সিনিয়র নীতি উপদেষ্টা উইলবার রস এখন পিছিয়ে এসেছেন। তিনি এখন বলছেন, তিনি মূলত চীন তার মূদ্রার অবমূল্যায়ন করলে চীনের পণ্যের ওপর ৪৫% কর আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন।

৬. ইরানের পারমাণবিক চুক্তি
ইরান আরেকটি দেশ যেটিকে ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারণার সময় আরেকটি কুশলী লক্ষ্য হিসেবে কাজে লাগিয়েছেন।
অক্টোবরে ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে মাইক পেন্স বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন ইরানকে কেটে দু টুকরো করে ছাড়বে।
কিন্তু নির্বাচনে জেতার পর ট্রাম্প উপদেষ্টা ওয়ালিদ ফ্যারেস বিবিসিকে বলেন, “কেটে দু টুকরো করা” হয়তো একটি অতিবেশি শক্তিশালি শব্দ।

৭. ন্যাটোকে দেওয়া মার্কিন অর্থ সহায়তা প্রত্যাহার
ন্যাটো জোটের দেশগুলো চমকে উঠেছিল যখন ট্রাম্প বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোর দেশগুলোকে দেওয়া অর্থ সহায়তা প্রত্যাহার করে নেবে। যদি তার মনে হয় যে, ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো তাদের প্রতিরক্ষার জন্য যথেষ্ট অর্থ ব্যয় করছে না।
তিনি আরো বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থানরত মার্কিন সেনাবাহিনীও প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে যদি দক্ষিণ কোরিয়া আরো অর্থ প্রদান না করে।
অথচ নির্বাচনের পর পার্ক জিউন হাইকে ফোন করে ট্রাম্প বলেছেন, বিদ্যমান নিরাপত্তা মৈত্রী চুক্তির অধীনেই তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষায় সহায়তা অব্যাহত রাখবেন।

৮. রিমান্ডে ওয়াটার বোর্ডিং পুণরায় চালু করা
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের সময় ওয়াটার বোর্ডিং বা পানিতো চুবানো পদ্ধতি পুনরায় চালু করার ঘোষণা দিয়ে সমালোচকদের তোপের মুখে পড়েছিলেন ট্রাম্প। বুশযুগে পদ্ধতিটি ব্যবহারের পর তা বেআইনী বলে ঘোষণা করা হয়।
সিএনএন জানিয়েছে, সাবেক রিপাবলিকান হাউজ গোয়েন্দা কমিটির চেয়ার মাইক রজার্স বলেছেন, ট্রাম্প শুধু প্রচারণার খাতিরেই এ কথা বলেন।

. আইন-শৃঙ্খলা
ট্রাম্প তার সমর্থকদের বলেন, কোনো রাজনীতিবিদ যদি আইন-শৃঙ্খলার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে ব্যর্থ হন তিনি “আমাদের দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার উপযোগী নন”।
অথচ ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরপরই তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। কিন্তু বিক্ষোভ দমণে পাল্টা বল প্রয়োগ শুরু হয়েছে। যাতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকেই যাবে।-কালের কন্ঠ,দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট.
১৩ নভেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে