বুধবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৬, ১০:১৪:৫৭

আইএসের নজর এখন ইউরোপে, ২ জঙ্গির মুখে শুনুন ভয়ঙ্কর পরিকল্পনার কথা

আইএসের নজর এখন ইউরোপে, ২ জঙ্গির মুখে শুনুন ভয়ঙ্কর পরিকল্পনার কথা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মধ্যপ্রাচ্যে মোটামুটি ভাত উঠে গেছে ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের। সিরিয়া ও ইরাকে তারা কঠিন মার খেয়েছে। পাল্টা হামলার কারণে নিজেদের ঘোষিত খিলাফত হারিয়ে পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছে তারা। দিশেহারা এই জঙ্গিগোষ্ঠীর নেতারা এখন নতুন আশ্রয় খুঁজে বেড়াচ্ছে। সে ক্ষেত্রে পশ্চিমা বিশ্ব তাদের জন্য জুতসই জায়গা হতে পারে বলে মনে করছে তারা।

আইএস ছেড়ে তুরস্কে পালিয়ে আসা বেলজিয়ামের দুই মুসলিম যুবকের কথায় এ আভাস মেলে। যুক্তরাজ্যের পত্রিকা দ্য ইনডিপেনডেন্টে সম্প্রতি তাঁদের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

আইএসের সাবেক এই দুই যোদ্ধার একজন ২৭ বছরের রাশিদ। সিরিয়ায় যাওয়ার আগে নিজ দেশে মেকানিকের কাজ করতেন। তিনি বলেন, সংগঠনটির শীর্ষ কয়েকজন নেতার মৃত্যু, নিজেদের মধ্যে বিভেদ, বিশ্বাস ভঙ্গ, পাল্টা হামলায় যোদ্ধা নিহত হওয়ার কারণে একের পর এক দখল করা অঞ্চল থেকে নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে সংগঠনটি।

রাশিদ বলেন, ইরাকি বাহিনীর কাছ থেকে অস্ত্র ও বড় ট্রাক দখল করে নেওয়া ছিল আইএসের জন্য বিরাট অর্জন। এরপর তারা দ্রুত এগোতে পেরেছিল। কিন্তু যখন মার্কিনরা হামলা শুরু করল, মুহূর্তেই সব ধূলিসাৎ হয়ে গেল। তিনি বলেন, এখন আইএস নেতারা দুর্গ রক্ষার কথা বলছেন, যার মানে হলো তাঁরা আর এগোতে পারছেন না। এখন এ এক নতুন যুদ্ধ। তিনি আরও বলেন, ‘আইএসের ক্ষেপণাস্ত্র আছে সত্যি। তারা নিজেরাও তৈরি করেছে, কিন্তু কত বিমান তারা ভূপাতিত করতে পেরেছে? খুব কম। আধুনিক যুদ্ধবিমানের সঙ্গে পেরে ওঠা সহজ নয়।’

যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পাল্টা হামলার প্রসঙ্গ টেনে এই যুবক বলেন, এখনো তাঁদের বোমা তৈরির দক্ষ কারিগর আছে। আছে আত্মঘাতী গাড়ি। এগুলো বেশ কার্যকর এবং এ দিয়ে শত্রুপক্ষকে ভয়ও পাইয়ে দেওয়া সম্ভব। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া যখন বিমান হামলা শুরু করে, তখন তাদের এসব গাড়ি শত্রুপক্ষকে আঘাত করার আগেই নাই হয়ে যায়। তাই এখন তাদের এসব অস্ত্র আর তেমন প্রভাব ফেলতে পারছে না। আর দিন দিন স্বেচ্ছায় আত্মঘাতী হওয়ার পরিমাণও কমে যাচ্ছে।

সম্প্রতি প্যারিস ও ব্রাসেলস হামলার ঘটনায় সিরিয়াফেরত আইএস যোদ্ধাদের দায়ী করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, বেলজিয়ামের মাধ্যমে ইউরোপে ইসলামি সন্ত্রাসবাদের শিকড় গাড়ার চেষ্টা চলছে। রাশিদ ও তাঁর সঙ্গী ইয়াসিন অবশ্য দাবি করেন, এ বিষয়ে তাঁরা কিছুই জানেন না। তাঁরা বলেন, অনেক হামলার ষড়যন্ত্র করা হয় ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে বসেই। লোকজন শুধু আইএস-প্রধান আবু-বকর আল-বাগদাদির প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে নির্দেশ পালন করে যায়। তারা রাক্কা থেকে কোনো নির্দেশনাও চাইত না।

মরক্কোর বংশোদ্ভূত এই দুই যুবক বলেন, সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের সহিংস দমনপীড়নের প্রতিবাদ করতে তাঁরা দেশটিতে যান। রাশিদ ও ইয়াসিন ধরা পড়লে তাঁদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ আনবে বেলজিয়ামের আদালত। দোষী সাব্যস্ত হলে দীর্ঘ কারাভোগ করতে হবে।

বিদেশি কমান্ডার ওমর আল-শিশানির মৃত্যু ছিল আইএসের জন্য অনেক বড় ধাক্কা। তিনি এত দক্ষ ছিলেন যে অনেকে প্রথমে বিশ্বাসই করতে চায়নি তিনি মারা গেছেন।

এভাবে লোকবল হারানোর পাশাপাশি সংগঠনটি বিভিন্ন এলাকা থেকে নিয়ন্ত্রণ হারানোর কারণে তাদের আয়ের পথও কমছে; বিশেষ করে তেলক্ষেত্রগুলোর নিয়ন্ত্রণ হারানো। এ ছাড়া তারা বিদেশি নাগরিকদের জিম্মি করেও অর্থ আদায় করত। সংগঠনটি ফরাসি ও স্পেন সরকারের কাছ থেকে বেশ মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ আদায় করত। এখন সেই অর্থের পরিমাণও কমে এসেছে।

সম্প্রতি এক জার্মান নারীকে মুক্তি দেওয়া হয়। শোনা যায়, এক কোটি পাউন্ড দেওয়া হয় তাঁর মুক্তিপণ। তবে তা আগের তুলনায় অনেক কম। স্পেন তিন কোটি পাউন্ড দিয়েছিল বলে শোনা গিয়েছিল। তবে সাধারণ সদস্যরা জানেন না, এই অর্থ দিয়ে কী করা হয়। -প্রথম আলো।
১৬ নভেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে