আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আড়াইখানা পুরনিগমের ভোটে প্রত্যাশার মতোই তৃণমূলের জয়জয়কার৷ কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, এটা কি জনমতের প্রকৃত প্রতিফলন নাকি বাহুবলের আস্ফালন? শাসকদল বুক বাজিয়ে পুরনিগমের ভোটে জিতল বটে৷
কিন্তু বিধানসভা ভোটের আগে এ জয় পুরোপুরি কলঙ্কমুক্ত নয় বলেই রাজনৈতিক মহলের অভিমত৷ শনিবার ফল প্রকাশের পর প্রবীণ তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের কথাতেও তার আভাস মিলেছে৷ ভারতের কামারহাটিতে এক সরকারি অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, পৌরভোটে তৃণমূল এমনিতেই জিতত৷ কিন্ত্ত কেউ কেউ উত্সাহের আতিশয্যে একটু জবরদস্তি করে ফেলেছে৷
তৃণমূল সাংসদ প্রকাশ্যে এ কথা স্বীকার করলেও তার দলের অন্য নেতারা ৩ অক্টোবরের ভোটে জোরজবরদস্তির কথা মানতে নারাজ৷ যেমন দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং প্রবীণ মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়৷
বাম জমানায় বালিতে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল সিপিএমের৷ এবার দেখা গেল, বালিতে শুধু সিপিএম নয় বিরোধীরাই একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। সিপিএম আমলে কেশপুর, গড়বেতা, আরামবাগের বহু বুথে বাম প্রার্থীরা ৭০০-৮০০ ভোট পেয়েছিলেন৷
সেখানে বিরোধীদের ভাগ্যে জুটেছিল ০, ১, ৩, ৮, ১০ ভোট৷ এবারের ভোটে শাসকদলের অনেক প্রার্থী বিপুল ভোট পেলেও বিরোধী প্রার্থীরা নামমাত্র ভোট পেয়েছেন৷ এ ব্যাপারে পার্থবাবুর দাবি, কোথাও তো বিরোধীরা একেবারে শূন্য হয়ে যায়নি৷
পার্থবাবুর ব্যাখ্যা, সেটা আপনাদের ওপর নির্ভর করে৷ কী দেখেছেন, কী লিখেছেন, কী দেখিয়েছেন সেটা আপনাদের বিষয়৷ তার কথায়, বিরোধীদের সব কুত্সা, সংবাদমাধ্যমের অতিরঞ্জন ইত্যাদি উপেক্ষা করে মানুষ তৃণমূলের পক্ষে ভোট দিয়েছে৷
বালিতে কোনো ম্যাজিকে বিরোধীরা একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল? পার্থর পাশে বসা সুব্রত বলেন, ওই ম্যাজিকের নাম মমতার উন্নয়ন যজ্ঞ৷ আর এক মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, কিছু সংবাদমাধ্যম এবং বিরোধীরা জোট বেঁধে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার প্রচার করেছে৷ মানুষ সব দেখেশুনে ভোটে তাদের রায় দিয়েছেন৷
তার পাল্টা প্রশ্ন, যদি সন্ত্রাসই হয়, তবে সিপিএম, কংগ্রেস জিতল কী করে? বহিরাগতদের দাপাদাপির কথাও তিনি উড়িয়ে দিয়েছেন৷ উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের দাবি, ৩ তারিখ বিধাননগরে বহিরাগতরা এসেছিল ঠিকই, তবে তারা সিপিএমের বহিরাগত৷ একই কথা বলেছেন বিধাননগরের বিধায়ক সুজিত বসুও৷
বাম জমানাতেও বিভিন্ন ভোটে সিপিএমের বিরুদ্ধে জবরদস্তির অভিযোগ উঠত৷ সিপিএম নেতা-মন্ত্রীরা সেগুলোকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিতেন৷ কিংবা মিডিয়ার ঘাড়ে সব দোষ চাপিয়ে নিজেরা সাধু সাজার চেষ্টা করতেন৷ তৃণমূল রাজত্বে সেই একই ট্র্যাডিশন৷ সিপিএমের নেতামন্ত্রীদের মতোই তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা সেই পুরোনো ভাঙা রেকর্ড বাজিয়ে চলেছেন৷
গত ৩ অক্টোবর তিন পুরনিগমেই যেভাবে শাসকদলের মদদপুষ্ট বহিরাগতরা দাপিয়ে বেড়িয়েছে, যেভাবে বুথের পর বুথে লাগামছাড়া ছাপ্পা ভোট হয়েছে, যেভাবে প্রকৃত ভোটারদের ভোট দিতে বাধা দেয়া হয়েছে তাতে শাসকদলের এ ফলাফলই প্রত্যাশিত ছিল বলে মনে করছেন বিরোধী নেতারা৷
যেমন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা এবং উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক গৌতম দেব ব্যঙ্গের সুরে বলেছেন, বিধাননগরে তৃণমূল কেন ৪১টার মধ্যে ৪২টা ওয়ার্ড পেল না, সেটাই রহস্যের৷
তিনি বলেন, এটা কোনো ভোট হয়েছে?' পরাজিত সিপিএম প্রার্থী অসীম দাশগুপ্তের মতে, এ রায় জনমতের প্রতিফলন নয়, ভোট লুটের প্রতিফলন৷ আর সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলছেন, মানুষের নয়, ভূতদের ভোটে তৃণমূলের জয় হয়েছে৷ হাজার হাজার ভূত এসে ওদের ভোট দিয়ে গেছে, মানুষ নয়৷
তার মতে, তৃণমূলের হাতে কালি, মুখে কালি হয়ে গেছে। ওদের এ কলঙ্ক ঘোচার নয়৷ অসীমবাবুর বক্তবের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রী সুব্রতবাবু বলেন, তিনি যদি এতই জানতেন তাহলে ভোটে দাঁড়াতে গেলেন কেন?
পার্থর কথায়, দীর্ঘদিন অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন অসীমবাবুর কীর্তি বাংলার মানুষ ভুলে যাননি৷ মানুষ তাই তাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন৷ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, এ ভোটে সন্ত্রাসের জয় হয়েছে, ভোট লুট করে তৃণমূল গায়ের জোরে জিতেছে৷ বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহার মতে, ৩ তারিখে কোনো ভোটই হয়নি৷ তাই ফল নিয়ে কিছু বলারও অর্থ হয় না৷
এ দিন বিধাননগর গভর্নমেন্ট কলেজে গণনাকেন্দ্রে সকাল থেকেই তৃণমূল সমর্থকদের ভিড় ছিল দেখার মতো৷ বাসবোঝাই করে রাজারহাট, নিউটাউন, বারাসত, বনগাঁ থেকেও লোক আনা হয়েছিল৷
ভোট গণনা শুরু হয় সকাল আটটা থেকে৷ তার আগেই গণনাকেন্দ্রের বাইরে দলীয় সমর্থকদের তাসা, ব্যান্ড ইত্যাদি বাজাতে দেখা যায়৷ আর এক একটি ওয়ার্ডের ফল যখনই ঘোষণা হয়েছে, তখনই চিত্কার আর স্লোগানে কান পাতা দায় হয়ে দাঁড়ায়৷ সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া
১১ অক্টোবর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম