বুধবার, ০৭ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১০:১০:৩১

রাখাইন ঘুরে উল্টে গেলেন কফি আনান

রাখাইন ঘুরে উল্টে গেলেন কফি আনান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্বিচার হত্যা ও নির্যাতনের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান।

তিনি মিয়ানমারের রাখাইনে সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিরুদ্ধে চালানো সহিংসতাকে 'গণহত্যা' বলতে চাননি।

রোহিঙ্গা নির্যাতিত মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ ঘুরে এসে মঙ্গলবার কফি আনান বলেন, 'আমার মনে হয়, সেখানে উত্তেজনা আছে, যুদ্ধ চলছে। কিন্তু, আমার মনে হয় না তাদের জন্য কিছু করা সম্ভব হয়েছে।'

মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে প্রাণ বাচাতে গত দুই মাসে ২১ হাজার ৯০০ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে গেছে।

রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদ সভায় অংশ নিয়ে রোববার মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক বলেছেন, রাখাইনে 'গণহত্যা' চলছে।

সন্ত্রাসী হামলায় ৯ পুলিশ সদস্য নিহতের ঘটনায় গত ৯ অক্টোবর থেকে রাখাইনে অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সেখানে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যাপকহারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের হত্যা, ধর্ষণ ও ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

যদিও মিয়ানমার সরকার মানবাধিকার সংস্থা ও রোহিঙ্গাদের এসব দাবি প্রত্যাখ্যান করে আসছে।

এমন প্রেক্ষাপটে গত ২৩ আগস্ট কফি আনানের নেতৃত্বাধীন ১৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিশন গঠন করেন মিয়ানমারের নেতা অং সান সুচি। ২ ডিসেম্বর রাখাইন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সফরে যান কফি আনান।

পর্যবেক্ষণ থেকে ফিরে কফি আনান বলেন, 'আপনাকে ভীত-সন্ত্রস্ত দু'টি সম্প্রদায়ের (বৌদ্ধ ও মুসলিম) কথায় ভাবতে হবে। তারা পরস্পরকে ভয় পাচ্ছে, অবিশ্বাস করছে। দিনকে দিন এই ভয় বাড়ছেই। কিন্তু এ থেকে উত্তরণে আমাদের একটা পথ খুঁজে বের করতেই হবে। দু'টি সম্প্রদায়ের মানুষকে এক করতে সাহস যোগাতে হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'রাখাইনের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারী কমিটির সদ্যসরা 'গণহত্যা' শব্দটি ব্যবহারে খুব এবং খুবই সতর্ক।'

দীর্ঘদিন মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকারের গৃহবন্দির শিকার দেশটির নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সুচি রোহিঙ্গা নির্যাতন ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মহলের ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন।

কিন্তু কফি আনান মনে করেন, 'গতবছরের নভেম্বরে ঐতিহাসিক নির্বাচনে সুচির দল দেশটিতে বিজয় লাভ করেছে। তাদের যথেষ্ট সময় দেয়া এবং পদক্ষেপের বিষয়ে আরও ধৈর্য ধরা উচিত।'

এর আগে অবশ্য সোমবার মিয়ানমারের গুরুত্বপূর্ণ ৫ জন এমপির সঙ্গে সিত্তে শহরের পার্লামেন্ট কম্পাউন্ডে এক বৈঠক শেষে কফি আনান অভিযোগ করেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের তদন্ত কমিশনকে দেশটির সরকার পর্যাপ্ত সহায়তা দিচ্ছে না।

দেশটির রাখাইন রাজ্যের উপদেষ্টা কমিশনের লক্ষ্য পূরণের জন্য তাদের সাহায্য প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।

কফি আনান জানান, মুসলিম সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে সহযোগিতা বেশ ইতিবাচক, তবে রাখাইন সম্প্রদায়ের কাছ থেকে সহায়তার ঘাটতি রয়েছে।

তিনি চলমান মিথ এবং গুজব পরিষ্কারে রাখাইনে সাংবাদিকদের প্রবেশের অনুমতি দিতেও দেশটির সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

কফি আনানের সঙ্গে বৈঠকের খবরের সত্যতা মিয়ানমার টাইমসকে নিশ্চিত করেছেন বৈঠকে উপস্থিত পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের এমপি ইউ সোয়ে উইন।

তিনি বলেন, রাজ্যের দু'টি সম্প্রদায়- মুসলিম ও রাখাইন। রাখাইন রাজ্যের উপদেষ্টা কমিশনকে পর্যাপ্ত সহায়তা দিচ্ছে মুসলিম সম্প্রদায়, কিন্তু রাখাইন সম্প্রদায় কমিশনকে পর্যাপ্ত সহায়তা দিচ্ছে না।

সোয়ে উইন আরও বলেন, কমিশন যখনই সেখানে তদন্তের জন্য যাচ্ছে কিন্তু রাজ্যের রাখাইন সম্প্রদায়ের কাছ থেকে সহায়তা পাচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, কফি আনানের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য আরাকান ন্যাশনাল পার্টির প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মিয়ানমার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের স্পিকার। তাদের অনেকেই এর জবাবে জানান, আমরা এ আলোচনায় বসতে রাজি নই। তাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত তাদের দল নেবে।

এছাড়া কফি আনানের সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত নিম্নকক্ষের এমপি ইউ টিন নু বলেন, দেশের আইনের নিয়মিত কাজ হিসেবে আমরা কফি আনানের সঙ্গে বৈঠক করেছি।

এর আগে আরাকান রাজ্য ও রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কফি আনানের জ্ঞানের সমালোচনা করেন তিনি। ইউ টিন নু বলেছিলেন, কফি আনানকে আরাকান রাজ্যের ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা উচিত। -বিবিসি।
০৭ ডিসেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে