আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের উত্তরপ্রদেশে হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপির এক নেতার সঙ্গে মহিষের মাংস রফতানিকারক একটি সংস্থার যোগাযোগ সামনে আসার পর দেশের ক্ষমতাসীন দল অস্বস্তিতে পড়েছে।
বিধানসভার সদস্য সঙ্গীত সোম, যিনি মুজফফরনগর দাঙ্গায় অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত এবং অতি সম্প্রতি গোহত্যার বিরুদ্ধে যিনি নানা উত্তেজক বিবৃতি দিয়েছেন, তিনি নিজেই চার বছর ধরে একটি বিফ প্রসেসিং সংস্থায় ডিরেক্টর পদে ছিলেন বলে জানা গেছে।
মি. সোম নিজে যদিও দাবি করেছেন তিনি হিন্দুধর্মবিরোধী কাজ কখনোই করেননি – কিন্তু গোটা ঘটনায় এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে ভারতে মাংস রফতানির ব্যবসা কতটা আকর্ষণীয় এবং শুধু অর্থনৈতিক কারণেই গোমাংসের ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করাটা কত কঠিন।
রাজধানী দিল্লির কাছে নয়ডার যে গ্রামটিতে সম্প্রতি গরুর মাংস খাওয়ার মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে এক মুসলিম ব্যক্তিকে পিটিয়ে মারা হয়েছে, সেই গ্রামে গিয়েই গত সপ্তাহে গোহত্যার বিরুদ্ধে কঠোর ভাষণ দিয়েছিলেন সঙ্গীত সোম।
তিনি সেখানে বলেছিলেন, উত্তরপ্রদেশে ঢালাও গোহত্যা চলছে আর প্রশাসন তা রুখতে চরম ব্যর্থ। এ কারণেই রাজ্যের নানা জায়গায় দাঙ্গার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। গোহত্যাকারীদের রাজ্য সরকার জামাই-আদরে রাখছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
বিজেপি নেতার ওই প্ররোচনামূলক ভাষণের পর সপ্তাহ না-ঘুরতেই এখন জানা যাচ্ছে, বিদেশে বিফ রফতানিকারক একটি সংস্থার সঙ্গে তাঁর নিজেরই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল বহুকাল ধরে।
মি সোম নিজে আল দুয়া ফুড প্রসেসিং প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর ছিলেন ২০০৫ থেকে ২০০৮ সাল অবধি – যারা মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বহুদিন ধরে বিফ বা মহিষের মাংস রফতানি করে আসছে।
ভারতের বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচার হতে থাকে, যে মি সোম নয়ডার গ্রামে গিয়ে বলেছিলেন, ভারতের মানুষ ঘরে একটা রুটি থাকলে সেটা বাড়ির গরুকে দেয়, তার সংস্থাই নাকি বিভিন্ন ইসলামি দেশে বহু বছর ধরে বিফ রফতানি করে আসছে।
এখানে অবশ্য বিফ বলতে শুধু মহিষের মাংসই বোঝানো হচ্ছে, কারণ ভারত থেকে বৈধভাবে গরুর মাংস রফতানির কোনও সুযোগ নেই – অনুমতি আছে শুধু মহিষের মাংসের।
কিন্তু উগ্র হিন্দুত্ববাদী নেতা সঙ্গীত সোম গরু-মহিষ কোনোটারই জবাইকে সমর্থন করেছেন, এটা ফাঁস হয়ে যাওয়াটা রাজনৈতিকভাবে তার ও বিজেপির জন্য খুবই বিব্রতকর।
মি সোম অবশ্য দাবি করেছেন, ওই সংস্থার সঙ্গে তার শুধু জমি কেনাবেচার সম্পর্ক ছিল।
তিনি বলছেন, ‘এই অভিযোগ হাস্যকর – কারণ আমি শুধু ওই সংস্থার হয়ে একটা জমি কিনেছিলাম যা কোনও অপরাধ নয়। তিন মাস পর সেটাও বেচে দিই। আর আমি হিন্দু, এই ধর্মের সব রীতি-রেওয়াজ মেনে চলি। হিন্দুদের মাংস খাওয়া পাপ, তাই আমি ডিম পর্যন্ত খাই না – মাংস ফ্যাক্টরির সঙ্গে সম্পর্ক রাখার তো প্রশ্নই ওঠে না।’
ফৌজদারি আইনের চোখে সঙ্গীত সোম কোন অপরাধ না-করলেও হিন্দুত্বের রাজনীতিতে তার এই আত্মপক্ষ সমর্থন যে খুবই দুর্বল তা অবশ্য বলার অপেক্ষা রাখে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আসলে গত দু’দশকে বৈধ পথে মহিষ ও অবৈধ পথে গরু - উভয় রফতানি এত বেড়েছে যে প্রভাবশালী রাজনীতিকরা পর্যন্ত এই শিল্পে লগ্নি করছেন – এবং সঙ্গীত সোম তাদেরই একজন।
মাত্র তিন বছরের মধ্যে বিফ রফতানির পরিমাণ দ্বিগুণ করে এবং ব্রাজিলকে টপকে ২০১৩ সালেই ভারত বিশ্বের বৃহত্তম বিফ রফতানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে এবং রফতানির পরিমাণ আরও বাড়তে চলেছে।
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এপেডা নামে যে সংস্থাটি মাংস রফতানির সব ধরনের ছাড়পত্র দেয়, তার চেয়ারম্যান সন্তোষ সারঙ্গী বলছিলেন চীনের সঙ্গেও ভারতের সমঝোতা সই হয়ে গেছে, যাতে তারা ভারত থেকে মহিষের মাংস তাদের বাজারে ঢুকতে দিতে নীতিগতভাবে রাজি হয়ে গেছে।
ফলে একদিকে যেমন মহারাষ্ট্রসহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে গরু-মহিষের জবাই বা বিফ খাওয়া নিষিদ্ধ করা হচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে রফতানি বাড়ানোর স্বপ্ন দেখছে হাজার হাজার কোটি টাকার এই শিল্প। সূত্র: বিবিসি
১২ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএস