বুধবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০২:৫৪:০৯

ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর দখলের ষড়যন্ত্র ইসরাইলের, প্রতিবাদ উদ্বিগ্ন ইইউ’র

ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর দখলের ষড়যন্ত্র ইসরাইলের, প্রতিবাদ উদ্বিগ্ন ইইউ’র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গত ৭ ডিসেম্বর ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাজধানীতে যখন এলার্ম ঘন্টাধ্বনি বাজতে ছিল ঠিক তখন প্রথম শুনানিতে ইসরাইলি পার্লামেন্ট ‘নেসেটে’ বির্তকিত ‘সেটেলমেন্ট রেগুলারিজাইশন’ বিল বা ‘বসতি নিয়মিতকরণ' বিল পাস হয়। এই বিলের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের ব্যক্তিগত ভূমিতে ইসরাইলি অবৈধ জনবসতি নির্মাণকে বৈধতা দেয়া হয়।

গত সপ্তাহে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র মন্ত্রীরা প্রধানত জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য এবং ইইউ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ইসরাইলি ডানপন্থী জোটের এই পদক্ষেপের তাৎপর্য নিয়ে অভ্যন্তরীণ আলোচনায় বসে।

প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তার জোটের স্থায়িত্ব রক্ষা করার জন্য বিলটি একটি সহজ কৌশলগত রণকৌশল বলে মনে করছেন না নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক ইইউ এর উচ্চ প্রতিনিধি ও ইউরোপীয় নেতৃত্ব। এর পরিবর্তে, তারা এটাকে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও শিক্ষা মন্ত্রী নাফতালি বেনেটের ‘ইচ্ছাকৃত একটি প্ররোচিত’ নীতি হিসেবে দেখছে।

বিলটি হাইকোর্টে পাশ করা হবে কি না তা ইসরাইলের বিচার বিভাগের জন্য একটি পরীক্ষা। কিন্তু নেতানিয়াহুর স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন যে, তিনি এ অঞ্চল অর্ধ মিলিয়ন ইসরাইলির জন্য বসতি স্থাপন করতে চান। নেতানিয়াহু স্পষ্ট সংকেত, যতটা সম্ভব পশ্চিম তীরের অধিকাংশ এলাকা ইসরাইলের হাতে থাকবে।

আগামী ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে পশ্চিম তীরের ‘আমোনা ফাঁড়ির’ বসতি খালি করতে ইসরাইলি হাইকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছে তা নেতানিয়াহুকে বাধ্য করবে বলে ইইউ সদর দপ্তরের বিরাজমান বিশ্বাস।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ‘বসতি নিয়মিতকরণ' বিলের বিরুদ্ধে কি প্রদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে সে সম্পর্কে ইইউ এখন অনানুষ্ঠানিকভাবে তার মূল সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করবে।

এ বিষয়ে ব্রাসেলস চারটি ব্যবস্থা বিবেচনা করছে। এরমধ্যে নিন্দা জানানো থেকে শুরু করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া। টেবিলের উপর প্রথম সম্ভাবনা (এমনকি হাইকোর্টে আইনটি পরীক্ষা করে দেখার আগেই) একটি তাৎক্ষণিক কঠোর সতর্কবাণী। ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত কর্তৃক ইসরাইলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ সর্তক বার্তা দেয়া হতে পারে।

দ্বিতীয় সম্ভাব্য পদক্ষেপ হচ্ছে ইসরাইলি এই বিলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইনের ব্যবহার। এই ধরনের একটি পদক্ষেপে আন্তর্জাতিক আইনের তাৎপর্য পরীক্ষা করতে ইইউ আইন বিশেষজ্ঞদের বলা হয়েছে এবং একই সঙ্গে হেগের আন্তর্জাতিক আদালত বিষয়টি কিভাবে দেখবে- সেটিও পরীক্ষা করে দেখতে বলা হয়েছে।

এছাড়াও, এই আইনটি বলবত করা হলে ইসরাইলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথা বিবেচনা করছে ইইউ। এতে ইসরাইলি বসতিতে তৈরি করা পণ্যের লেবেলে আরো একটি অনমনীয় নীতি অন্তর্ভুক্ত হতে পারে এবং পূর্ব ‘গ্রিন লাইনে’ ইসরাইলি প্রতিষ্ঠানের জন্য সক্রিয় সকল ইইউ-ইসরাইল অর্থনৈতিক চুক্তি বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

ইইউ সদস্যদের বিশেষ করে ফ্রান্সের জন্য চতুর্থ সম্ভাব্য পদক্ষেপ হচ্ছে ইসরাইলি এই আইনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে বিষয়টি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে তোলা। যেখানে বিলটি রদের জন্য আহ্বান জানানো হতে পারে এবং এটার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আন্তর্জাতিক আদালতকে উত্সাহিত করা হতে পারে।

তবে ইসরাইলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আপাতত ইউ বাতিল করে দিয়েছে। সাম্প্রতিক ইইউ এর অভ্যন্তরীণ আলোচনায় বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল এ ধরনের নিষেধাজ্ঞায় নীতিগতভাবে বিরোধিতা করেন। একই সময়ে, জার্মানরা দ্ব্যর্থহীনভাবে ‘বসতি নিয়মিতকরণ বিলে’ তাদের আপত্তি জানায়। গত ৮ ডিসেম্বর জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই বিল সম্পর্কে তারা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন।’

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এ ধরনের বিল আন্তর্জাতিক আইনে লঙ্ঘন এবং এর মাধ্যমে ‘দুই রাষ্ট্র’ কেন্দ্রিক সমাধান খুঁজে বের করার জন্য ইসরাইলের প্রতিশ্রুতিকে খাটো করে।’

বিষয়টি নিয়ে রামাল্লায় ফিলিস্তিনি নেতৃত্বের সঙ্গে ইইউ এর ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। এ বিষয়ে ফিলিস্তিনের অবস্থানকে তারা সমর্থন করছেন এবং বিলটি রদ করতে সম্ভাব্য সব ধরনের প্রচেষ্টায় সহায়তার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছে।

এই আলোচনার সঙ্গে জড়িত ‘পিএলও’র একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম গোপন রাখার শর্তে আল মনিটর জানান, এই আইন বাতিলের জন্য এবং ইসরাইলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব বিশ্বব্যাপী প্রচারণা চালাচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘ইসরাইলি সরকারের আত্মসাৎ নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রামে এই আইন আমাদের সংকল্পকে আরো শক্তিশালী করেছে। ইসরাইলের বসতি বিরুদ্ধে ‘তরুণ ফাতাহ নেতৃত্ব’সহ অনেকেই এখন প্রকাশ্যে একটি নতুন ‘ইন্তিফাদার’ জন্য আহ্বান জানাচ্ছে। দখলকৃত ভূমি ফিরে পাওয়ার যুদ্ধে আমরা  আমাদের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বন্ধুদের সঙ্গে একসঙ্গে লড়ে যাব।’ -আল মনিটর।
২১ ডিসেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে