শুক্রবার, ০৬ জানুয়ারী, ২০১৭, ১২:৩৬:০৯

আইএস জঙ্গিদের টার্গেট হতে পারে মিয়ানমার!

আইএস জঙ্গিদের টার্গেট হতে পারে মিয়ানমার!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রোহিঙ্গা সংকটে মিয়ানমার আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস-এর টার্গেট হতে পারে- এমন আশঙ্কা মালয়েশিয়ার। দেশটির সন্ত্রাসবাদবিরোধী বিভাগের প্রধান আইয়ুব খান মাইডিন পিচায় এক সাক্ষাৎকারে ওই আশঙ্কা ব্যক্ত করেন। দ্য গার্ডিয়ান এ খবর দিয়েছে।

খবরে স্পর্শকাতর ওই ইস্যুতে মিয়ানমার তথা আসিয়ান জোটের বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্রে আইএস অনুসারীদের সম্ভাব্য উত্থান চেষ্টা, তাদের নেটওয়ার্ক এবং তা ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা ও সুপারিশগুলো স্থান পেয়েছে। যা এরই মধ্যে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছে। গার্ডিয়ানের রিপোর্টে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের প্রতি মালয়েশিয়ার সতর্কবার্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

সেখানে শীর্ষ ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘মিয়ানমারে জিহাদ সংঘটনের’ কথিত চক্রান্তে সন্দেহভাজন এক আইএস অনুসারীকে গত মাসে আটক করে মালয়েশিয়ান পুলিশ। অভিযোগ আছে ওই সন্দেহভাজন মিয়ানমারে বড় ধরনের আক্রমণের পরিকল্পনায় যুক্ত ছিলেন। তার বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া না গেলেও প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে- সন্দেহভাজন ব্যক্তিটি ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক। বুধবার তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ বা চার্জ গঠন করার কথা ছিল। সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হলে ওই ব্যক্তির সাত বছরের জেল বা জরিমানা হতে পারে।

তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মালয়েশিয়ার কর্মকর্তা আইয়ুব খান বলেন, নির্যাতিত মুসলিম রোহিঙ্গাদের জন্য যুদ্ধ করতে ইসলামিক স্টেট বা আইএস সমর্থকদের আক্রমণের ক্রমবর্ধমান বিপদের সম্মুখীন হতে পারে মিয়ানমার। মালয়েশিয়ার পুলিশের হাতে আটক সন্দেহভাজন ব্যক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে আরো অনেক জঙ্গি তার নেতৃত্ব অনুসরণ করার চেষ্টা করতে পারে এমন সম্ভাবনাও ছিল।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের উত্তরে গত ৯ই অক্টোবর সীমান্ত পুলিশ চৌকিতে সন্ত্রাসী আক্রমণের পর থেকে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং রোহিঙ্গাবিরোধী উগ্রপন্থি বৌদ্ধরা সহিংসতা চালাচ্ছে। সেখানে শতাধিক রোহিঙ্গা নিহত হওয়া ছাড়াও বহু নারী ধর্ষিত হয়েছে মর্মে অভিযোগ আছে। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়ায় প্রায় অর্ধলক্ষ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু বাস্তুচ্যুত হয়েছে। জাতিসংঘ বলছে, বর্বর ওই আক্রমণ থেকে প্রাণে বাঁচতে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের প্রায় ৩৪,০০০ সদস্য সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে।

বাংলাদেশের হিসাবে সেই সংখ্যা আরো বেশি জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেছেন, তাদের ধারণা নতুন আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো মিয়ানমারকে প্রতিনিয়ত চাপ দিচ্ছে। রাখাইনে বর্মী সেনা এবং তাদের সহযোগী উগ্রপন্থিদের মাধ্যমে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতি ঘটনার স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি তুলেছে বিশ্ব বিবেক। বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমার সরকার প্রতিনিয়ত সেই সব অভিযোগ অস্বীকার করে চলেছে। সমপ্রতি তারা এ সংক্রান্ত একটি তদন্তের কথা জানিয়ে সেখানে নির্যাতনের অভিযোগের কোনো সত্যতা পায়নি বলে দাবি করেছে।

শান্তিতে নোবেল পাওয়া অং সান সূচির নেতৃত্বাধীন মিয়ানমারের বর্তমান সরকারের এমন অবস্থানের তীব্র সমালোচনা হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। এ নিয়ে মুসলিম বিশ্ব তো বটেই মানবাধিকার সংবেদনশীল  রাষ্ট্র, রাষ্ট্রগুলোর জোট খোদ মিয়ানমারের ঘনিষ্ঠ মিত্ররাও সমালোচনায় মুখর। মিয়ানমারসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানও রোহিঙ্গা সংকটের একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান চাইছে। ওই জোটের প্রভাবশালী দুই সদস্য মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো সরব।

মিয়ানমারের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী এবং রোহিঙ্গা সংকটে বছরের পর বছর ধরে ভুক্তভোগী বাংলাদেশও এ ইস্যুর একটি  সম্মানজনক নিষ্পত্তি চায়। বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় ধরে অস্থায়ী আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং নব সৃষ্ট সহিংসতা থেকে প্রাণে বাঁচতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অবস্থা সরজমিন দেখেছেন ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলপি মারসুদি। গত মাসে তিনি ইয়াংগুনে  অং সান সূচির আহ্বানে রোহিঙ্গা ইস্যুতে অনুষ্ঠিত আসিয়ান জোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক শেষে বাংলাদেশ সফর করেন। ওই বৈঠকের পরদিন তিনি মিয়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। জাতিসংঘের একটি প্রতিনিধি দলও রোহিঙ্গাদের অবস্থা সরজমিন পরিদর্শন করতে চায়।

তবে দলটি মিয়ানমার এবং বাংলাদেশ এক সঙ্গে সফর করবে না কি এককভাবে বাংলাদেশ সফর করবে- তা এখনো ঠিক হয়নি। ঢাকার কর্মকর্তারা বলছেন- সফরের ফর্মেট যাই হোক জাতিসংঘ দলকে বাংলাদেশ স্বাগত জানাবে। মিয়ানমারে সৃষ্ট ওই সংকটে জনবহুল বাংলাদেশ নানাভাবে যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেটি তুলে ধরবে বাংলাদেশের নেতৃত্ব। উল্লেখ্য, রোহিঙ্গা সংকটে আন্তর্জাতিক চাপ বিশেষত আসিয়ান জোটের গুরুত্বপূর্ণ ইন্দোনেশিয়ার প্রস্তাবে মিয়ানমারের কার্যকর নেতা, স্টেট কাউন্সেলর অং সান সূচির একজন বিশেষ দূত বাংলাদেশ সফরে আসছেন। আগামী সপ্তাহে তার সফরটি হওয়ার একটি আলোচনা রয়েছে। এমজমিন।

০৬ জানুয়ারি ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে